প্রাইমারি স্কুলে পড়ে অনেকেই ‘সাহেব’ হয়েছে। কিন্তু ‘সাহেব’-এর সন্তানরা প্রাইমারি স্কুলে পড়ে- এমন উদাহরণ নেই বললেই চলে। আমাদের সমাজের সচেতন ও একটু সামর্থ্যবান বাবা-মায়েরা কেন তাদের সন্তানকে ওইসব স্কুলে পড়ায় না?
সরকারি এ স্কুলগুলোই কিন্তু আমাদের লাখ লাখ শিশুর শিক্ষার প্রাথমিক ভিত তৈরি করে দিচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্যমতে, আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬০০টি। শিক্ষক সংখ্যা ৩ লাখ ২২ হাজার ৭৬৬ এবং ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ২ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৩৮।
অক্ষর ও গাণিতিক জ্ঞানের সঙ্গে পরিচিতির মাধ্যমে একটি শিশু নিজেকে, নিজের পরিবার, সমাজ, দেশসহ সমগ্র বিশ্বব্যবস্থা উপলব্ধি করার জন্য বোধের উন্নয়ন ঘটানোই হল প্রাথমিক শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য। নিজেকে দক্ষ ও যোগ্য হিসেবে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রাইমারি লেভেলেই এ বিষয়গুলো শিশুদের জানাতে হবে। এজন্যই প্রায় সব দেশেই প্রাইমারি শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও অবৈতনিক করে দেয়া হয়েছে।
জাতিসংঘের মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল ছিল- ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বিশ্বের সব শিশুকে সমসুযোগ প্রদানসহ ফুলকোর্স প্রাইমারি পাঠ সমাপ্ত করাতে হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিষয়টি যাই হোক না কেন, কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন হয়েছে। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে স্কুলে যাওয়ার যোগ্য ২৮ শতাংশ ছেলেমেয়ে স্কুলে যেত না; ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের এ হিসাব ১৯ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।
বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট বলছে, বিগত দুই দশকে বাংলাদেশে প্রাইমারি ও নারী শিক্ষায় লক্ষণীয় অগ্রগতি হয়েছে। প্রাইমারি স্কুলে যাওয়ার যোগ্য ছাত্রছাত্রীর ২০০০ খ্রিস্টাব্দের ৮০ শতাংশ এনরোলমেন্ট ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে বেড়ে ৯৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
আমাদের এ প্রাথমিক শিক্ষার আনুষ্ঠানিক প্রচলন কখন ও কোথায় শুরু হয়েছিল- বলা না গেলেও বাংলাপিডিয়ার মতে, আনুমানিক ৩ হাজার বছর আগে এ উপমহাদেশে প্রাথমিক শিক্ষার বীজ রোপিত হয়। প্রাচীন যুগে এ শিক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল আত্মার উন্নতি সাধন। ভারতবর্ষে মুসলিম শাসনামলে অর্থাৎ সুলতানি ও মোগল আমলে প্রাইমারি শিক্ষার বেশ পরিবর্তন হয়। ওই সময় শিক্ষাব্যবস্থা শাসক ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় যৌথভাবে পরিচালিত হতো। এটা এখনও আমাদের এ এলাকায় চালু আছে।
আঠারো শতকের শেষের দিকে ধীরে ধীরে সমগ্র ভারতে মুসলিম শাসনের অবসানের পর লর্ড ক্লাইভের সময় খ্রিস্টান মিশনারির সহযোগিতায় বেশ কিছু চ্যারিটি বিদ্যালয় চালু হয়। কিন্তু ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ১০০ বছরের শাসনে প্রাথমিক শিক্ষায় লক্ষণীয় অগ্রগতি সাধিত হয়নি। স্যার চার্লস উড, প্রেসিডেন্ট; দ্য বোর্ড অব কন্ট্রোল অব ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে গভর্নর জেনারেল লর্ড ডালহৌসিকে প্রাইমারি স্কুলে মাতৃভাষা, হাইস্কুলে অ্যাংলো-ভার্নাকুলার ভাষা এবং কলেজ পর্যায়ে ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা প্রদানের সুপারিশ করে পত্র লেখেন।
১৯১৯-১৯২১ খ্রিস্টাব্দে পৌর এলাকা ও গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিককরণ এবং ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের বেঙ্গল প্রাইমারি এডুকেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে সমগ্র বাংলায় সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলনের পদক্ষেপ গৃহীত হয়। ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দে মওলানা আকরম খাঁকে চেয়ারম্যান করে শিক্ষা কমিশন গঠন ও পরবর্তীকালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে পুনরায় আরেকটি কমিশন গঠন করা হয়। এ কমিশন অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তনে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকে সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে আনার সুপারিশ করে।
পরবর্তীকালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে এ দেশ লাল-সবুজের পতাকা লাভ করে। নতুন স্বপ্ন, নতুন আশা, বিশ্বের বুকে নতুন দেশকে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর জন্য সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। আমাদের সংবিধানে সতেরো অনুচ্ছেদের ক, খ, গ উপঅনুচ্ছেদে আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদান, সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ ও আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে মর্মে উল্লেখ আছে।
তারই ফলস্বরূপ বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ড. কুদরত-ই-খুদাকে চেয়ারম্যান করে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে সরকারের কাছে পেশ করা রিপোর্টে সব স্তরে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা চালু এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব আরোপ, প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে ৫ বছরের পরিবর্তে আট বছর মেয়াদি অর্থাৎ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণ, অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রস্তাব করা হয়। প্রাথমিক স্তরে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নৈশ বিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে পনেরো বছর বয়স পর্যন্ত শিক্ষা প্রদানের বিষয়টি গুরুত্ব পায়।
ভারতে মুসলিম ও ব্রিটিশ শাসন, দেশভাগ থেকে শুরু করে স্বাধীন বাংলাদেশে এ পর্যন্ত শিক্ষাসংক্রান্ত যত কমিটি গঠিত হয়েছে, প্রায় প্রতিটি কমিটি প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক, অবৈতনিক ও যুগ চাহিদাসম্পন্ন করার মানসে ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে সুপারিশ করেছে। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীরা আগের চেয়ে এখন ঢের সুবিধা পাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের সংখ্যা বেড়েছে, ঝরে পড়ার হার কমেছে। শিক্ষা সরঞ্জাম ও ভৌত-অবকাঠামোর গুণগত পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু তারপরও মনে হচ্ছে, প্রাথমিক স্কুলগুলো সচেতন জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণে যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না।
গ্রাম ও শহরে বসবাসকারী যাদের ন্যূনতম সামর্থ্য আছে, তারা সন্তানকে সরকারি প্রাইমারি স্কুলে পড়ায় না; মডেল কিন্ডার গার্টেন ও এ ধরনের স্কুলগুলোকে বেছে নিচ্ছে। উচ্চশিক্ষায় প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে অতিক্রম করতে পারেনি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া সোনার হরিণ অথচ সরকারি প্রাইমারি স্কুলগুলোয় একেবারে ভিন্ন চিত্র। সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সামগ্রিক কাঠামো ও শিক্ষা কার্যক্রমকে এমনভাবে সাজাতে হবে, সব শ্রেণি-পেশার মানুষই যেন তার সন্তানকে সেখানে পড়াতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
এখনকার সমাজে সচ্ছল ও সচেতন পরিবারের কলেজ পড়–য়া সন্তানদেরও তাদের অভিভাবকরা একা একা কলেজে যেতে দেয় না, অথচ সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে একাই হেঁটে স্কুলে যাওয়া-আসা করছে। সেখানে কেজি স্কুলগুলোর মতো অপেক্ষারত মায়েদের জটলা নেই, প্রাইভেট ট্রান্সপোর্টের ভিড় নেই।
যে প্রাইমারি স্কুলগুলোয় লাখ লাখ শিশু লেখাপড়া করছে, শিক্ষাজীবনের ভিত্তি গড়ে উঠছে, সেই স্কুলগুলোর প্রতি আরও একটু নজর দেয়া দরকার। আমাদের স্কুলগুলোর ভৌত-অবকাঠামোর উন্নয়ন দীর্ঘদিনের আলোচিত বিষয়। বহু স্কুলের ভৌত-অবকাঠামো পুরনো, ভাঙাচোরা দেয়ালে প্লাস্টার ও চুনকাম নেই, প্রথম দর্শনে অনেক ক্ষেত্রে পোড়াবাড়ি হিসেবে ঠাহর হয়। অভিভাবক, শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য স্কুলের কাঠামো, টুল-বেঞ্চ ও শিক্ষা উপকরণ মানসম্পন্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে।
স্কুলের সংযোগ সড়কগুলোয় বাঁশের সাঁকো, কাঠের পুল থাকা চলবে না, সামনে খানাখন্দে ভরা রাস্তা সবসময় ওয়েল মেইনটেইন্ড অবস্থায় রাখতে হবে। খেলার মাঠের ব্যবস্থা, অডিটোরিয়াম তৈরি ও ভৌত অবকাঠামো দৃষ্টিনন্দন পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে স্কুল ড্রেস, ব্যাগ, ব্যাজ ও আইডি কার্ড সরবরাহ এবং স্কুলে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বিতর্ক, সায়েন্স-শো ও পিকনিকের আয়োজন করতে হবে।
প্রাইমারি স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীরা প্রধানত নিুবিত্ত ও অসচেতন পরিবার থেকে এসে থাকে। পাতা কুড়ানো, লাকড়ি সংগ্রহ ও গৃহস্থালি কাজের চাপে লেখাপড়া অনেক ক্ষেত্রেই গৌণ হয়ে যায়। ছাত্রছাত্রীরা বাসায় লেখাপড়ার সুযোগ পায় না। তাই প্রাইমারি স্কুলের সিলেবাস এবং পড়ানোর কৌশল এমন হতে হবে, যেন বাসায় পড়ার কোনো প্রয়োজন না হয়। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা সন্তানের শিক্ষাদানের ব্যাপারে অনেক ক্ষেত্রে অসচেতন থাকে; তাই ন্যূনপক্ষে প্রতি ৩ মাসে স্কুলে একবার অভিভাবক সম্মেলনের আয়োজনের মাধ্যমে অভিভাবকদের শিক্ষার গুরুত্ব, সন্তানের ভবিষ্যৎ জীবন সম্পর্কে বোঝাতে হবে।
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের শিক্ষাবহির্ভূত অন্যান্য দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্র কমিয়ে আনতে হবে। কোনো কোনো বিদ্যালয়ে শিক্ষক স্বল্পতার জন্য কোনো শিক্ষককে একনাগাড়ে ৫-৬টি ক্লাসও নিতে হয়; এতে অনেক ক্ষেত্রে মানসম্মত পাঠদান সম্ভব হয় না। প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে শিক্ষক ঘাটতি পূরণ করতে হবে। প্রত্যেক স্কুলে দাফতরিক কাজ সম্পন্ন করার জন্য অফিস সহকারীর পদ সৃষ্টি করে প্রধান শিক্ষকের কাজের চাপ কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ আউটপুট গ্রহণ করার জন্য তাদের বেতন কাঠামো যৌক্তিককরণ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির কথা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, মডেল কেজি স্কুলের শিক্ষকরা সে তুলনায় কম বেতনে শিশুশিক্ষা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। প্রাইমারি শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধির কথা প্রায়ই আলোচিত হয়। তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কিন্তু কারও মর্যাদা কেউ আগ বাড়িয়ে দিয়ে যাবে না, নিজেকেই অর্জন করে নিতে হবে। লেখাপড়া, চালচলন, বাচনভঙ্গি, পোশাক-পরিচ্ছদ ও শিষ্টাচারের মাধ্যমে নিজেকে যথোপযুক্তভাবে গড়ে তুলতে হবে।
শিক্ষা সংক্রান্ত এ পর্যন্ত গঠিত প্রায় সব কমিশনই প্রাইমারি শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত সম্প্রসারণের সুপারিশ করেছে; এই বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। আট বছর মেয়াদি এই শিক্ষা কার্যক্রমে জীবনে চলার পথে যে বিষয়গুলো জানা দরকার, সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। শিষ্টাচার, পরস্পরের সঙ্গে আচরণ, নৈতিক শিক্ষা, কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রাথমিক ধারণা, ইনফরমেশন টেকনোলজি যেমন কম্পিউটার চালানো, ইমেইল অ্যাড্রেস খোলা, ওয়েবসাইট সার্চসহ আধুনিক যুগের অন্য বিষয়গুলোর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
জীবন-জগৎ, আধুনিক বিশ্ব অর্থনীতি, সমাজনীতির বিষয়ে বেসিক ধারণা গ্রহণ, কারিগরি ও জীবনমুখী শিক্ষায় অনুপ্রাণিত হওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ তৈরির ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আট বছর মেয়াদি প্রাইমারি শিক্ষা কার্যক্রমকে এমনভাবে সাজাতে হবে- যেন একজন শিক্ষার্থী যদি অষ্টম শ্রেণির পর আর লেখাপড়ার সুযোগ নাও পায়, তাহলে যেন অন্তত এই শিক্ষা দিয়ে জীবন চালিয়ে নিতে পারে।
আমাদের দেশে বিএ, এমএ পাস মানুষের সংখ্যা পৃথিবীর উন্নত দেশগুলো অপেক্ষা অনেক বেশি; তারপরও উচ্চশিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে সর্বোচ্চ আউটপুট গ্রহণ করা যাচ্ছে না। দেশ ও জাতি গঠনের পাশাপাশি প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার জন্য শক্তিশালী মানবসম্পদ তৈরিতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই মনে হয়- বিএ, এমএ সবার দরকার নেই; কিন্তু জীবনে চলার মতো, বিশ্বকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করার জন্য যুগচাহিদানির্ভর শক্তিশালী বেসিক এডুকেশন দরকার এবং সেটা প্রাইমারি স্কুল পর্যায়েই ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
প্রাইমারি স্কুলের একজন শিক্ষক, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও সুশীল ব্যক্তিরা সরকারি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে কতটুকু সন্তুষ্ট, আমি জানি না। সাভারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করার সময় প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলাম- প্রাইমারি স্কুলের একজন সচেতন শিক্ষক যখন তার সন্তানকে হাত ধরে নিয়ে এসে তার (শিক্ষক) স্কুলে ভর্তি করাবে, তখন মনে করব আমাদের প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার মান একটি পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে; সেই দিনটির অপেক্ষায়ই আছি।
লেখক : সরকারি চাকরিজীবী
সৌজন্যে: যুগান্তর