প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা শিক্ষকদের, পুলিশের বাধায় মহাসমাবেশ পণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকার আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবি না মানলে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বর্জনসহ লাগাতার কর্মবিরতিতে যাবেন প্রাথমিক শিক্ষকরা।  আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পূর্ব ঘোষিত মহাসমাবেশ করতে পারেননি শিক্ষকরা। শহীদ মিনারের পাশে রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেন তারা। প্রধান সমন্বয়ক আতিকুর রহমান এই ঘোষণা দেন। কিছুক্ষণের জন্য পুলিশ তাকে ডেকে নিয়েছিলো বলে শিক্ষকরা জানান। পরে ছেড়ে দেয়া হলে কর্মসূচি ঘোষণা করেন। 

১৭ নভেম্বর প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা।  

শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাকে জানান, বুধবার সকাল থেকেই পুলিশের বাধায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যেতে পারেননি তারা। পুলিশ কর্ডন করে রেখেছে শহীদ মিনার। হালকা লাঠিচার্জও করা হয় শিক্ষকদের ওপর। বাধা পেয়ে শহীদ মিনারের আশেপাশে মিছিল করেছেন কয়েক হাজার শিক্ষক। বেতন বৈষম্য নিরসন তথা সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে এবং প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন বাস্তবায়নের দাবিতে আজ বুধবার (২৩ অক্টোবর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। প্রাথমিক শিক্ষকদের ১৪টি সংগঠন নিয়ে গঠিত মোর্চা বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে। গতকাল বিকেল এবং রাতেই শত শত শিক্ষক ঢাকায় পৌঁছান। সকাল দশটার দিকে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা ছিলো। 

যদিও 'আখেরী চাহার সোম্বা'র উপলক্ষে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ছুটি থাকলেও বুধবার (২৩ অক্টোবর) কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মহাসমাবেশে যোগ দিতে কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি পাননি না প্রাথমিকের শিক্ষকরা। ২৩ অক্টোবর শিক্ষকদের কর্মস্থল ত্যাগের অনুমতি না দিতে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সোমবার (২১ অক্টোবর) প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিভাগীয় উপ পরিচালক এবং জেলা-উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়। গতকাল মঙ্গলবার শোকজ করা হয় কয়েক হাজার শিক্ষককে।

এর আগে এ দাবি আদায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে গত ১৭ অক্টোবর পূর্ণদিবস, ১৬ অক্টোবর অর্ধদিবস, ১৫ অক্টোবর ৩ ঘণ্টা এবং ১৪ অক্টোবর কর্মসূচির প্রথমদিনে ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদ ডাকে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। যদিও কর্মবিরতি পালন করা শিক্ষকদের চিন্হিত করে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।  

প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইসলাম তোতা  দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ‘সারা বাংলাদেশ থেকে শিক্ষকরা শহীদ মিনারে মহাসমাবেশে যোগ দিতে হাজার হাজার শিক্ষক ঢাকায় আসছেন। শহীদ মিনারে মহা সমাবেশ আয়োজনের সব প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে গতরাতে মহাসমাবেশের বিষয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি কাল শহীদ মিনার জনসমুদ্রে পরিনত হবে।’

শিক্ষক নেতারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, বেতন বৈষম্য নিরসনের প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস পেলে সাথে সাথে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হবে।গতরাতে প্রতিমন্ত্রীরা বাসায় গিয়ে কথাও হয় কিন্তু সমাবেশ স্থগিতের কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।  

শিক্ষকরা জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন না করে কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের সাথে প্রহসনমূলক আচরণ করছেন। এতে করে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান কমেছে। বেতন বৈষম্য নিরসন না হলে শিক্ষকরা ২৩ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করবেন। মহাসমাবেশ থেকে আরও কঠোর আন্দোলনের ঘোষণা দিবেন শিক্ষক নেতারা।

শিক্ষকরা আরও জানান, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণের দাবিতে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে সহকারী শিক্ষকরা ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসলে তৎকালীণ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার ১ মাসের মধ্যে শিক্ষকদের দাবি বাস্তাবয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সে আশ্বাসে শিক্ষকরা আমরণ অনশন স্থগিত করেন। কিন্তু ২ বছর পার হলেও শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন হয়নি। জাতীয় নির্বাচনের আগে শিক্ষকরা আবারো আন্দোলনের ডাক দিলে বর্তমান সরকার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসনের বিষয়টি অর্ন্তভুক্ত করেন। কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সরকারের ১০ মাস পার হয়ে গেলেও সঠিক কোনো উদ্যোগ না থাকায় শিক্ষকরা আবারও আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন।

প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আনিসুর রহমান, সদস্য সচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ, প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল ইসলাম তোতা, প্রধান সমন্বয়ক আতিকুর রহমান, নীতি নির্ধারণী চেয়ারম্যান আব্দুল্যাহ সরকার, মুখপাত্র বদরুল আলম, রবিউল ইসলাম ও আব্দুস সবুর গত ১৪ অক্টোবর দৈনিক শিক্ষাডটকমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, ‘কর্তৃপক্ষ সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন বাস্তবায়নের দাবি বাস্তবায়নে শতভাগ আন্তরিক নন। তাই আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কারো আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহার করবোনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়ার সাথে সাথে আমরা আমাদের সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিবো।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054519176483154