প্রাথমিকে ঘরে বসে পরীক্ষা কতটা সমীচীন?

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত দেশ কিছুটা অস্বাভাবিক অবস্থার দিকে যাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা সবাই স্বীয় কাজকর্ম করে যাব এ প্রত্যাশা সকলের কাছে। অথচ এই ভাইরাস স্বাভাবিক পর্যায়ে না আসা পর্যন্ত আমাদের শিশুদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা মোটেই যৌক্তিক নয়। শিশুদের বিদ্যালয়ের পড়াশোনা, খেলাধুলা, ঘুরে বেড়ানো সম্ভব হয়ে উঠে না। সকলে আজ কবি নজরুল ইসলামের কবিতাটি উল্টোভাবে পড়ে যাবে-‘থাকবো আজ বদ্ধ ঘরে মুক্ত রাখবো জীবনটাকে...’।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংসদ টিভি মাধ্যমে অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীকে দিয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। শিক্ষাক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর জন্য ইহা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। আগামী জুলাই থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় শিশুদের মায়ের মাধ্যমে পরীক্ষা নেয়ার এক অভিনব প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যা বর্তমান সময়ে বাস্তবমুখী উদ্যোগ। মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাসহ সকল উদ্যোগের মূল চ্যালেঞ্জ হলো প্রাথমিকের শিক্ষক সংকট। এ প্রসঙ্গে আমার ছোটবেলার গ্রামের দৃশ্য অবতারণ করছি।

গ্রামের মহিলার তখন শাড়ির আচল দিয়ে মাথা ও মুখমণ্ডল ঢেকে পুরুষদের সাথে দেখা করত। তখনকার সময়ে আজকালের মতো ১২ হাত শাড়ি ছিল না। সে সময়ের শাড়ি ছিল ১০ হাত লম্বা। যার ফলে মোটা বা লম্বা আকৃতির মহিলারা পুরো মুখমণ্ডল ঢেকে ঘোমটা দেয়া সম্ভব হতো না। শত টানাটানি করেও অনেকক্ষেত্রে পুরো মাথা ঢাকা যেত না। স্বাধীনতার পূর্ব থেকে শিক্ষক সংকট নিয়ে উদাসীনতা আমাদের শিক্ষার্থীর জীবনে বয়ে আনছে অপরিপূর্ণ শিক্ষা। যাদের অবহেলা বা কর্মকাণ্ডের ফসল প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের চ্যালেঞ্জ। তাদেরই মুখে শোনা যায় প্রাথমিকের শিশুরা পিছিয়ে আছে। প্রাথমিকের শিক্ষকেরা পড়ায় না। তারা ব্র্যাকের বেসরকারি বিদ্যালয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

প্রতিমন্ত্রী আপনি নিজে ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষকের শূন্যপদের কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগে ডিসেম্বরে নিয়োগ তালিকা পুরোপুরি বাস্তবায়ন না করে এত বিপুল সংখ্যক পদ শূন্য রাখা হলো কেন? প্রাক-প্রাথমিকে ২৭ হাজার শূন্যপদ রেখে কেন শিশুদের শিক্ষা বিকলাঙ্গ করা হচ্ছে? অতি দুঃখের সাথে বলছি মন্ত্রী, সচিব, ডিজিসহ সংশ্লিষ্টদের চেয়ার কিছুক্ষণের জন্য খালি থাকে না। অথচ শিশুদের শিক্ষকের চেয়ার দীর্ঘদিন ধুলাবালি, ময়লা জমে থাকে।

শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার অভিপ্রায়ে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের প্যানেল আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন। প্যানেলে কোনো অযোগ্য শিক্ষক থাকবে ও অপরদিকে নতুন প্রজন্ম শিক্ষকতা করার স্বপ্ন থেকে বঞ্চিত হবে তা মোটেই কাম্য নয়। মুজিববর্ষে সহকারী প্রধান শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক পদোন্নতি দিন। ১ শিফটের বিদ্যালয় করার মানসে নতুন ১ লাখ ৯৬৬ পদ সৃজন বাস্তবায়ন করুন। বহু যোগ্য প্রার্থী লিখিত পরীক্ষায় ২০১৮ ও ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছে। যাদের বয়স শেষ হয়েছে তাদের বয়স প্রমার্জনা করে প্রাথমিকের স্বপ্ন পূরণ করুন। প্রাথমিকে নিয়োগ লিখিত পরীক্ষা কঠিন বাছাই ২ দশমিক ৩ শতাংশ প্রার্থীদের প্যানেল করে অবিলম্বে নিয়োগ দিন। যারা শিক্ষক সংকটে বিশ্বাস করে না। তাদের উদ্দেশ্যে বলছি তা হলে কী ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে নিয়োগের পর মাননীয় প্রতিমন্ত্রীর জাতীয় সংসদে প্রায় ২৯ হাজার শিক্ষক পদ শূন্য বক্তব্য কী সঠিক নয়?

প্রাক-প্রাথমিকে ২৭ হাজার পদ শূন্য কী অসত্য? ১ লাখ ৯৬৬টি পদসৃজন, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদোন্নতিতে ৬৫ হাজার সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য হবে। প্রতিদিন অবসর, মৃত্যু, অন্য পেশায় চলে যাওয়ার ফলে অগণিত পদ শূন্য হচ্ছে সবই কী অবাস্তব? বর্তমানে করোনাকালে যেহেতু হাজার হাজার লিখিত পরীক্ষা উপযুক্তদের নিয়োগ দিয়ে সময়ক্ষেপণ না করে পরবর্তী নিয়োগের দরখাস্ত আহ্বান করে যোগ্য প্রার্থীদের প্যানেল করুন। প্রাথমিকে শূন্য পদ হওয়ার সাথে সাথে প্যানেল থেকে নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। শূন্য পদকে শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনুন। জুলাই মাস থেকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মায়ের কাছে শিশুর পরীক্ষা গ্রহণে গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার প্যানেল প্রত্যাশীকে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজে লাগান। তারা পরীক্ষা কাজের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকদের সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত রয়েছে। শিক্ষক সংকট দূরের মাধ্যমে One Day One Word ও ঘরে বসে শিশুর পরীক্ষা কার্যক্রম সফল বাস্তবায়ন হোক। কোনো অবস্থায় শিক্ষক সংকট দূর না করে ও শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি যেয়ে পরীক্ষা নেয়াসহ কোনো কাজ করানো সমীচীন হবে না। এ প্রত্যাশায়।

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0054240226745605