প্রাথমিকে দরকার শিক্ষাবান্ধব সময়সূচি

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধস্ত দেশের সীমাহীন দুর্ভিক্ষের মাঝে সর্বাগ্রে তৃণমূল সাধারণ মানুষের শিক্ষা অধিকার নিশ্চিত করার কথা ভাবলেন। যার ফলশ্রুতিতে ০১/০১/১৯৭৩ খিস্টাব্দ থেকে সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। সেদিন তাঁর দুঃসাহসিক পদক্ষেপ আর কোন ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হবে কিনা জানি না ? বাংলাদেশ ব্যাংকের কোষাগার শূন্য, হাট বাজার, সেতু, রেলপথ ধ্বংস, খাদ্য, বস্ত্রের তীব্র সংকট, যানবাহন ধ্বংস, এক কথায় চারিদিকে শুধু নাই আর নাই। গরিব মানুষের ক্ষুধার জ¦ালায় তীব্র হাহাকার।

এ তীব্র সংকট আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা অনেকটা গল্পের মতো। দেশের এই দুর্দিনে বঙ্গবন্ধু সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের শিক্ষার সুয়োগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন সাধারণ মানুষের সন্তানদের শিক্ষার আলোয় আলোকিত না করতে পারলে সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব নয়। অথচ আজও সাধারণ মানুষের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা আজও অবৈতনিক শুধু নামে। টাকা দিয়ে শিক্ষা কিনতে হচ্ছে। দুর্নীতি প্রাথমিক শিক্ষাকেও গ্রাস করছে। এ দুর্নীতি দমনে বিশাল জনবল নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের এগিয়ে আসা আজ অতি জরুরি। রোজার মাসে ঢাকা শহরের চকবাজারে একটি ইফতারি যার নাম “বড় বাপের পোলায় খায়”।

বর্তমানে বড় লোকের ছেলেমেয়েদের জন্য শিক্ষার সুয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকারের অর্থমন্ত্রী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের ভাবনা অনেকটা তাঁদের সন্তানরা শিক্ষিত হলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিক শিক্ষার সমস্যা নিয়ে শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী জাতির জনকের কন্যার কাছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে দূশ্যমান নয়। প্রাথমিক শিক্ষার অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সময়সূচির সাথে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সময়সূচির সমন্বয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিম্নবিত্ত পরিবারের। নগণ্য সংখ্যক হলো নিম্নমধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত। গরিব মানুষের সন্তানরা তাদের বাবা মাকে পারিবারিক বা আয় রোজগার কাজে সহযোগিতা করে থাকে। সরকারের প্রদত্ত খুব কম হলেও ইতিবাচক পদক্ষেপ হলো উপবৃত্তি। উপবৃত্তিসহ অসংখ্য পাঠদান বর্হিভূত কাজের জন্য একজন অতিরিক্ত লোক নিয়োগ মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে জরুরি।

ধনি শ্রেণির অভিভাবকদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম দুপুর ২ টার পূর্বেই শেষ। খাওয়া ও বিশ্রাম নিয়ে তাদের পক্ষে বিকালে খেলাধুলা বা চিত্তবিনোদনের পর্যাপ্ত সুয়োগ থাকে। অন্যদিকে একই দেশে প্রাথমিকের গরিব মানুষের সন্তানদের ৯ টায় বিদ্যালয়ে এসে একনাগাড়ে ৪.৩০ টা পর্যন্ত অবস্থান করতে হয়। খেলাধুলা চিত্তবিনোদনের, বাবা মাকে সংসারের কাজে সহযোগিতা করার সুযোগ মোটেই থাকে না। সকাল ৯ টার পূর্বে আগের দিনের বাসি খাবার বা কারো সম্ভব হলো নাস্তা খেয়ে বিদ্যালয় আসতে হয়। দুপুরে বিরতির আধা ঘন্টায় শিক্ষার্থীদের বাড়িতে যাওয়া হয়ে উঠে না। শিক্ষার্থীরা যাতে বিদ্যালয়ের বাইরে না যেতে পারে সে জন্য অধিকাংশ বিদ্যালয়ের ফটক লাগানো থাকে। বিদ্যালয়ে অবস্থান করায় শিক্ষার্থীদের ক্ষুধার জ¦ালায় অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। বাঙালিদের দুপুরের প্রধান খাদ্য ভাত। ভাতের পরিবর্তে অন্য সামান্য খাবার তাদের শরীরের ক্ষুধার চাহিদা পূরণ হয় না, বরং বাড়িয়ে দেয়। একেতো গরীবের সন্তান অপরদিকে না খেয়ে অনেকটা পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১ শিফট চালু করা বিদ্যালয়ের সারা দেশের চিত্র অনেকটা হতাশ করেছে। গরিব মানুষ তাদের সন্তানদের টাকা খরচ হলেও বেসরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছে। যার ফলে ১ শিফট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। অপরদিকে, সরকারি-বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখায় উপচে পড়া ভিড়। মতিঝিল আইডিয়াল, মতিঝিল সরকারি উচ্চ বালক/বালিকা, শাহজাহানপুর রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়সহ সকল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাথমিক শাখার সময়সূচি সাথে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিশাল ব্যবধান। গরিব মানুষের সন্তাদের ক্ষুধার যন্ত্রনায় কষ্ট দিয়ে, সব পড়া স্কুলে পড়ানের নামে চলছে শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতন।

সকল শিশুর সমান অধিকার প্রসঙ্গে শাহজাহানপুর রেলওয়ে মডেল সরকারি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক ছাবিনা ইয়াসমিন বলেন “চারিদিকে স্কুলগুলোর শিক্ষর্থীরা যখন স্কুল ছুটির পর স্কুলের পাশ দিয়ে যায়। তখন জননন্দিত শিল্পী মমতাজের গানের মতো বুকটা ফাইটা যায়।” গরির মেহনতি মানুষের সন্তানদের শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার কাজটি বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর পর শুরু করেছেন। অথচ সংশ্লিষ্টরা জননেত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে প্রাথমিক শিক্ষার সময়সূচি নিয়ে ভাবছে না। সময়সূচির কারনে ব্যহত হচ্ছে গরিবের সন্তানদের শিক্ষার অধিকার।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শীঘ্রই ব্যস্তবায়ন হোক প্রাথমিকের শিক্ষাবান্ধব সময়সূচি। এই প্রত্যাশায়।

 

মো. সিদ্দিকুর রহমান: আহবায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম ও দৈনিক শিক্ষার সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024440288543701