প্রাথমিকে প্যানেল করে নিয়োগের দাবিতে প্রার্থীদের অবস্থান চলছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৫৫ হাজার প্রার্থীকে প্যানেল করে নিয়োগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি চলছে। বুধবার (৪ মার্চ) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে দ্বিতীয় দিনের অবস্থান কর্মসূচি পালনে করছেন প্রার্থীরা। প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক নিয়োগ প্যানেল চাই বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ-২০১৮ তে এবারেই প্রথম সারাদেশ থেকে প্রায় ২৪ লাখ পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। তাদের মধ্য হতে ৫৫ হাজার ২৯৫ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়, যা মোট প্রার্থীর মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ। যা থেকে বোঝা যায়, যারা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তারা সবাই মেধাবী। তাই, মুজিববর্ষে প্যানেল করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ মেধাবী প্রার্থীদের নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।’ 

প্রাথমিকে প্যানেল করে নিয়োগের দাবিতে প্রেসক্লাবে প্রার্থীদের অবস্থান | ছবি : দৈনিকশিক্ষা

বক্তারা আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছেন, মুজিববর্ষে কেউ বেকার থাকবে না। এছাড়া ঘরে ঘরে চাকরি দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেলিন তিনি। তাই আমরা আশা করি, মুজিববর্ষে এই ৩৭ হাজার চাকরি প্রার্থীকে প্যানেল করে নিয়োগ দিলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির অনেকাংশ বাস্তবায়ন হবে। কারণ, দেশের ৬১টি জেলার সব উপজেলার যোগ্য প্রার্থীরাই লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।

বক্তারা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে ‘শিক্ষার মূলভিত্তি’ ধরে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে প্রায় ৩৭হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারিকরণ করেছিলেন, যা ছিল শিক্ষিত জাতি ও দেশ গঠনের এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ। যার ফলশ্রুতিতে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষকের চাকরি স্থায়ীকরণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মদিনে তার আদর্শ কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমাদের জোড়ালো দাবি, তার পিতার মতো যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রায় ৩৭ হাজার মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী বেকার ও তাদের পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটাবেন।

প্রাথমিকে প্যানেল করে নিয়োগের দাবিতে  প্রেসক্লাবে প্রার্থীদের অবস্থান | ছবি : দৈনিকশিক্ষা

শিক্ষাজীবনে সেশন জটের কথা উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, আমাদের পড়ালেখার সময় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চরম সেশন জট ছিল। অন্যদিকে, সার্টিফিকেট পাওয়ার পর হাইকোর্টের রিট জটিলতার কারণে ২০১৪-২০১৮ পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের কোনো বিজ্ঞপ্তি হয়নি। এমনকি ২০১০ থেকে ২০২০ পর্যন্ত কোনো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিও হয়নি। যদিও বর্তমানে চরম শিক্ষক সংকট বিদ্যমান। অথচ আগে ৬ মাস পর পর সহকারী শিক্ষক ও ২ বছর পর পর প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হতো। তাই আমরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। এসময় সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা শেষ হওয়ায় এটাই তাদের শেষ সুযোগ বলেও উল্লেখ করেন তারা।

তারা আরও বলেন, মেয়েদের জন্য এইচএসসি পাসে চাকরিতে প্রবেশের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি এই প্রাথমিকের নিয়োগ। এরপর থেকে মেয়েরা আর স্নাতক পাস ছাড়া আবেদন করতে পারবেন না। এ নিয়োগে প্রাথমিকভাবে যারা নির্বাচিত হয়েছেন তাদের অনেকে আবার অন্য চাকরিতে যোগদানের সুপারিশ পাচ্ছেন, ফলে অনেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করবেন না। আবার যথেষ্ঠ শূন্য পদও রয়েছে। জাতীয় সংসদের তথ্য মতে, ডিসেম্বর ২০১৯ পর্যন্ত শূন্য পদের সংখ্যা প্রায় ২৯ হাজার। নতুন বছরে অনেক শিক্ষক অবসরে গেছেন। সে হিসেবে বর্তমানে শূন্যপদের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। একটি নিয়োগ কার্যক্রম শেষ করতে প্রায় দেড় থেকে ২ বছর লেগে যায়। এছাড়াও পিটিআই, বিপিএড, মাতৃজনিত ছুটি, চিকিৎসা জনিত ছুটি ও বদলি জনিত কারণে সারা বছরেই প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ পদ শূন্যই থেকে যায়। ফলে তীব্র শিক্ষক সংকটে শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়।

বক্তারা বলেন, ৩৮তম বিসিএস, মাধ্যমিক সহকারী শিক্ষক, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, এনএসআইসহ আরও বেশকিছু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির নিয়োগ পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল অপেক্ষমান রয়েছে। এই ফলগুলো হয়ে গেলে অনেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে চলে যাবেন যার কারণে আরও তীব্র শিক্ষক সংকট দেখা দেবে। তাই মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্যানেলের মাধ্যমে সবাইকে যোগদানের সুব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা জোড়ালো হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বক্তারা আরও বলেন, প্যানেলের মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ করলে নিয়োগ বাণিজ্য ও কালক্ষেপন বন্ধ হবে। শূন্যপদের ভিত্তিতে সময় মতো উপযুক্ত শিক্ষক নিয়োগ দেয়াও সম্ভব হবে, যা বর্তমান সময়ের জন্য অপরিহার্য।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.016717910766602