প্রাথমিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

 সহকারী শিক্ষকদের দীর্ঘদিনের আন্দোলন বাস্তবায়নে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। সহকারী জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের পদোন্নতি দিয়ে দেশের ৬৫ হাজার বিদ্যালয়ে একজন করে নতুন এ পদে পদোন্নতি দেয়া হবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র থেকে জানা গেছে।

জানা গেছে, প্রধান শিক্ষকদের ঠিক একধাপ নিচে বেতনস্কেল বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষকরা যে আন্দোলন করে আসছিলেন তার কিছুটা বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত মতে সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের পরের গ্রেডে নয়, সহকারী প্রধান শিক্ষকের নিচের গ্রেডে বেতন পাবেন। এর মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকরে ঠিক পরের গ্রেডে বেতন না পেলেও সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীত হচ্ছে। সারাদেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪ লাখ প্রাথমিক শিক্ষক রয়েছেন। তাদের মধ্যে থেকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেয়া হবে।


সহকারী শিক্ষকরা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তে খুশি হয়নি। বরং এ সিদ্ধান্তকে নতুনভাবে তাদের বঞ্চিত করার প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষকরা। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের দাবি পূরণের মাধ্যমে বেতনস্কেল উন্নীতকরণকে নির্বাচনী উপহার বলেছেন। আগামী এক মাসের মধ্যেই শিক্ষকদের দাবি পূরণ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন মন্ত্রী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা পেলেও বেতন পান একাদশ-দ্বাদশ গ্রেডে। দশম গ্রেডে তাদের বেতন পাওয়ার কথা থাকলেও তা পান না। আর সহকারী শিক্ষকরা বেতন পান ১৪-১৫তম গ্রেডে। দশম গ্রেডে তাদের বেতন পাওয়ার কথা ছিল। বর্তমানে সহকারী শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকদের পরের গ্রেডে বেতন চান। অর্থাৎ একাদশ-দ্বাদশ গ্রেডে। এ নিয়ে আন্দোলন হলেও সরকার খুব একটা আমলে নেয়নি। কিন্তু নির্বাচন সামনে থাকায় শিক্ষকদের এসব দাবি আমলে নিয়ে কাজ শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসব বিষয়ে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মতি নিতে হবে। এজন্য চলতি সপ্তাহে জনপ্রশাসন এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। সচিব পর্যায়ে বৈঠকে ফলপ্রসূ হলে খুব দ্রুত নথির কার্যক্রম শেষ করা হবে।

জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমান রোববার (২৮ অক্টোবর) সাংবাদিকদের  বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব শিক্ষকের বেতন গ্রেড ঠিকঠাক করার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী এক মাসের মধ্যে আমরা কাজগুলো শেষ করতে চাই। এর মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়বে। সহকারী প্রধান শিক্ষক নামে নতুন একটি পদ সৃষ্টি করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘বেতনভাতা নিয়ে শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করছেন, আমি নিজে তাদের অনশন ভাঙিয়েছি, প্রতিশ্রুতিও দিয়েছি। সেগুলোই এখন বাস্তবায়নে কাজ শুরু করেছি।’

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম আল হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর কাজটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা ১০ম গ্রেডে বেতন পান।’ প্রধান শিক্ষকদের যদি এ গ্রেডে বেতন দেয়া হয় তবে তাদের কোন গ্রেডে দেয়া হবে এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আর প্রধান শিক্ষকের গ্রেডতো এক হতে পারে না। এ রকম বহু ঝামেলা আছে, দেখি কী করা যায়।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের কাজ এত বেড়েছে যে স্কুলে তাদের সময় দেয়া কঠিন। এ জন্য প্রত্যেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করার কাজ শুরু হয়েছে।’

আর সহকারী শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব নিয়ে একটি তালিকা তৈরি হয়েছে। তালিকা ধরে কাজ শুরু হলেও লেখার মতো কিছু হয়নি।’

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ  বলেন, ‘প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর জন্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করেছে। এ সপ্তাহে নথিটি জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে যেতে পারে।’

তিনিও বলেছেন, ‘প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে।’

এদিকে মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন। তারা এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি করছেন। শিক্ষকদের মধ্যে দুটি ভাগ হয়েছে। এদের একভাগ বলছেন, সরকার যেটা করতে চাচ্ছে করুক। তাতে ঘুরপথে হলেও সহকারী শিক্ষকদের বেতন একগ্রেড বাড়ছে।

আবার অন্যপক্ষ বলছে, সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি না করে সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড বাড়িয়ে দেয়া হোক। তবে শিক্ষকদের এমন দ্বিখণ্ডতার মধ্যেও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেছেন, ‘কাজগুলো আমরা এমনভাবে করতে চাই যাতে কোনোপক্ষই অসন্তুষ্ট না থাকে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028870105743408