প্রয়োজন একীভূত কৃষি শিক্ষা অধিদপ্তর

রিপন কুমার দাস |

বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। কিন্তু দেশে কৃষি খাতে দক্ষ জনশক্তির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যদিও দেশে বেশ কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রচুর শিক্ষার্থী বের হলেও কর্মক্ষেত্রে গিয়ে তারা উপযুক্ত সেবা দিতে পারছেন না। দক্ষ জনশক্তির অভাবে আমাদের কৃষি খাত আন্তর্জাতিক মানের সেবা দিতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে আমাদের কৃষি শিক্ষা ব্যবস্থা। 

আমাদের দেশে একজন মধ্যম মানের কৃষিবিদকে কৃষি খাতের সকল বিষয় অধ্যয়ন করতে হয়। অপরদিকে ভারতসহ অনেক দেশে কৃষি খাতের যেকোনো একটি উপখাতকে টেকনোলজি হিসাবে চালু করা হয়ে থাকে। ফলে তারা যে বিষয় পড়াশুনা করে সেই বিষয় তারা অত্যন্ত দক্ষ হয়। অপরদিকে আমরা সব বিষয় অর্থাৎ টোটাল এগ্রিকালচার সম্পর্কে অবগত হই। এ কারণে কোনো উপখাতেই ভালোভাবে দক্ষ হতে পারি না। তাই কর্মক্ষেত্রে আমরা উপযুক্ত সেবা দিতে পারছি না। 

সরকারকে মধ্যম মানের কৃষিবিদদের কর্মক্ষেত্রের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন উপখাতের ভিত্তিতে টেকনোলজি চালু করতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি, ডিপ্লোমা ইন ফিসারিজ, ডিপ্লোমা ইন লাইভষ্টক, ডিপ্লোমা ইন এনিমেল হাজবেন্ডারি কারিকুলাম বন্ধ করে কৃষি বিষয়ক সকল টেকনোলজি সমূহকে ডিপ্লোমা ইন টেকনোলজি কারিকুলাম নামে একটি কারিকুলামে যুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কারিকুলামটির নাম হবে ডিপ্লোমা ইন টেকনোলজি বা D.Tech । কৃষি বিষয়ের বিভিন্ন উপখাতের উপরে ভিত্তি করে নতুন কারিকুলাম তৈরি করতে হবে। 

প্রস্তাবিত টেকনোলজি হলো- ক. এগ্রো ফ্রুট সাইন্স টেকনোলজি, এগ্রো মোলিকুলার বায়ো টেকনোলজি, এগ্রো টিস্যুকালচার টেকনোলজি, এগ্রো ক্রোপ ফিজিওলজি টেকনোলজি, এগ্রো ভেজিটেবল প্রোডাকশন টেকনোলজি, এগ্রো ফেরিকালচার অ্যান্ড ল্যান্ড¯ক্রপ গার্ডেনিং টেকনোলজি, এগ্রো ইকোনমিক্স টেকনোলজি, এগ্রো হর্টিকালচার টেকনোলজি, এগ্রো রুরাল স্টাডিজ টেকনোলজি। খ. এগ্রো মেশিনারি টেকনোলজি, এগ্রো ইরিগেশন অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি, এগ্রো ফুড প্রসেসিং টেকনোলজি। গ. ফরেস্ট্রি টেকনোলজি, ফরেস্ট্রি ট্রি ইমপ্রুভমেন্ট অ্যান্ড জেনেটিক টেকনোলজি, ফরেস্ট উড সিজনিং টেকনোলজি, ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি, ফরেস্ট ওয়াইল্ড লাইফ ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি, ফরেস্ট পলিসি অ্যান্ড ল টেকনোলজি, ফরেস্ট ইকোলজি টেকনোলজি, ফরেস্ট উড প্রোডাক্ট টেকনোলজি। ঘ. ফিস কালচার টেকনোলজি, ফিস ব্রিডিং টেকনোলজি, মেরিকালচার টেকনোলজি, ফিস ক্যাপচার টেকনোলজি, একুয়াকালচার টেকনোলজি, ফিস ইকোনমিক অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি। ঙ. পোল্ট্রি হাজবেন্ডারি টেকনোলজি, এনিমেল হেলথ টেকনোলজি, এনিমেল হাসবেন্ডারি টেকনোলজি, পোল্ট্রি ম্যানেজমেন্ট টেকনোলজি, ভেটেনারি টেকনোলজি,  ডেইরি টেকনোলজি, ডেইরি অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি। এগুলো সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিকেও চালু করা সম্ভব হবে। 

এছাড়া সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সরকারি ফিসারিজ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সরকারি ভেটেনেনারি ইনস্টিটিউট সমূহে কমপক্ষে ৪টি করে টেকনোলজি চালুর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কৃষি খাতের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট রূপান্তর করা প্রয়োজন। অর্থাৎ সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সরকারি ফিসারিজ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, সরকারি ভেটেনেনারি ইনস্টিটিউট, সরকারি ফরেস্ট্রি ইনস্টিটিউট সমূহকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট নামে অবহিত করণ। এই সকল প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের আওতায় না রেখে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি শিক্ষা অধিদপ্তর নামে একটি অধিদপ্তর গঠন করা যেতে পারে । প্রস্তাবিত কৃষি শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে সকল কৃষি বিষয়ক বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতিটি জেলায় ১টি করে সরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ও প্রতিটি উপজেলায় ১টি করে কৃষি ভোকেশনাল ইনস্টিটিউট স্থাপন করা প্রয়োজন। এছাড়া বেসরকারি কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বেসরকারি ফিসারিজ প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, বেসরকারি ভেটেনেনারি ইনস্টিটিউট, বেসরকারি ফরেস্ট্রি ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিচালনার জন্য  কৃষি শিক্ষা অধিদপ্তরের মাধ্যমে এমপিওভুক্তির ব্যবস্থা করা হলে দেশে দক্ষ মধ্যম মানের কৃষিবিদ ও টেকনেশিয়ানের অভাব পূরণ করতে সক্ষম হবে।

এছাড়া কৃষি খাতের দক্ষ শ্রমিক তৈরির জন্য এসএসসি ভোকেশনাল ও এইচএসসি ভোকেশনাল পর্যায়ে পেশাওয়ারি এনটিভিকিউএফ’র আলোকে নতুন নতুন ট্রেড চালু করতে হবে। এগুলো হবে ফিল্ড ক্রোপ কাল্টিবেশন (ফুড ক্রোপ), ফিল্ড ক্রোপ কাল্টিবেশন (ক্যাশ ক্রোপ), ফ্রুট ক্রোপ কাল্টিবেশন, ভেজিটেবল ক্রোপ কাল্টিবেশন, প্লানটেশন ক্রোপ কাল্টিবেশন, স্পাইস ক্রোপ কাল্টিবেশন, মেডিকেল অ্যান্ড এরোমেটিক প্লান্ট কাল্টিবেশন, ফেরিকালচার, ল্যান্ডস্কেপিং প্লাস গার্ডেনিং অ্যান্ড আরবান ফার্মিং, গ্রিন হাউজ প্লানটেশন, এগ্রো মেশিনারি অপারেশন, এগ্রো মেশিনারি ম্যাইনটেনেন্স, এগ্রো ফার্ম ম্যানেজমেন্ট, ডেইরি ফার্ম ম্যানেজমেন্ট, মিল্ক কালেকশন অ্যান্ড হ্যান্ডেলিং, ডেইরি হ্যাচারি অপারেশন, ক্যাটেল ফার্মিং ম্যানেজমেন্ট, পোলট্রি ফার্মিং, পোলট্রি হ্যাচারি অপারেশন, স্মল রুমিনান্টস, সেরিকালচার, লাইভস্টক হেলথ ম্যানেজমেন্ট, শ্রিম্প কালচার, ফ্রেস ওয়াটার একুয়াকালচার, বার্কিস ওয়াটার একুয়াকালচার, ফ্রেস ওয়াটার ফিস কালচার, বার্কিস ওয়াটার ফিস কালচার, ক্রাব ফ্যাটেনিং, মারিকালচার, অর্নামেন্টাল ফিস কালচার, পার্ল কালচার, ফিস হ্যাচারি অপারেশন, ফিসিং বোট ড্রাইভিং, মেরিন ফিস ক্যাপচার, ইনল্যান্ড ফিস ক্যাপচার, বি কিপিং, এগ্রো ফরেস্ট্র ম্যানেজমেন্ট, ওয়াটার সেড ম্যানেজমেন্ট, সিড প্রোডাকশন অ্যান্ড প্রসেসিং ইত্যাদি। ফলে কৃষি খাতে দক্ষ জনশক্তির অভাব দূর হবে।
 
লেখক: ট্রেড ইন্সট্রাক্টর, ডোনাভান মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পটুয়াখালী


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0089290142059326