শ্রেণিশিক্ষকের পবিত্র দায়িত্ব ছাত্রদের পাঠকে সহজ ও বোধগম্য করে জলবৎ তরলং করা। আগের দিনের পাঠ বোর্ডে লিখে দেয়া এবং তা ভালো করে বুঝিয়ে দিয়ে পরের দিন ছাত্রদের কাছ থেকে তা আদায় করা।
তুমি ছাত্র, তোমার আগ্রহের উপরই সম্পূর্ণ অর্জন নির্ভর করে। প্রয়োজনবোধে কঠিন শব্দের উচ্চারণ ও অর্থ আগেই শিখে নাও, তারপর বার বার পড়ো। কঠিন বিষয়সমূহ ক্রমেই আয়নার মতো পরিষ্কার হয়ে আসবে। দুর্ভাগ্যক্রমে তোমার স্কুলে তেমন শিক্ষক না থাকলে তোমাকে সে প্রচেষ্টা নিতেই হবে।
বিংশ শতাব্দীর ৭ম দশকের কথা বলছি; আমরা কোনো কোনো বিষয়ে জানার জন্যে কারো কারো কাছে দু’-তিন মাইল হেঁটে যেতে কুন্ঠাবোধ করিনি। আর এখনতো ঘরে ঘরে তোমাকে পাঠে সাহায্য করার মতো লোক রয়ে গেছে।
প্রত্যেক বিষয়ের প্রত্যেক অধ্যায়ের শুরুতে শিখনফলসমূহ অর্জন হয়েছে কিনা তা দেখতে হবে এবং অধ্যায় শেষে দেয়া অনুশীলনীর প্রশ্নগুলোর প্রত্যেকটার উত্তর নিজে নিজে তৈরি করবে। না বুঝলে বা শিক্ষকের সাহায্য না পাওয়া গেলে ভালো সহপাঠীর সাহায্য গ্রহণ করো।
কোনো কিছু না বুঝলে তোমার শিক্ষককে পরবর্তী অধ্যায়ে না যাওয়ার জন্যে সবিনয়ে অনুরোধ করো। বিশেষ করে গণিতের ব্যাপারে; নিয়ম ভালো করে বুঝে যে ছাত্র একটা অঙ্ক স্বাধীনভাবে করতে পারে সে ঐ নিয়মের একশ’টা অঙ্কও কষতে পারে।
ঘষলে পাথরও ক্ষয় হয়। মাটির তৈরি পানির কলসি ক্রমাগত পাথরের ওপর রাখলে পাথরও ক্ষয় হয়। চেষ্টা করতে করতে স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়। যা পড়বে তা লিখে লিখে পড়বে। ট্রান্সলেশন বাড়িতে প্রস্তুত করে ক্লাসে আলোচনা করবে। ইংরেজি ও বাংলা রচনা শেখার সময় বিভিন্ন লেখকের বই আলোচনা করে লিখে স্কুলে গিয়ে পড়ে শোনাবে, এতে একের দ্বারা অন্যরা উপকৃত হবে। জ্যামিতি বুঝে লিখবে ও শিখবে।
যখন কোনো বিষয় তোমার কাছে জটিল মনে হবে তখন তা বার বার পড়বে, দেখবে ক্রমেই সেসব বিষয় তোমার কাছে সহজ হয়ে আসবে। ভাষার ব্যাপারে তোমাকে লিখে লিখে পড়তে হবে যেন বানান ভুল তোমার লেখায় না ঘটে। ফলে তোমার লেখা সুন্দর হবে এবং এভাবে পড়লে পরীক্ষাভীতি এমনিতেই চলে যাবে।
পড়ার সময় পড়ার ঘরের নিস্তদ্ধতা কাউকে ভঙ্গ করতে দেবে না। নিবিষ্টচিত্তে পড়বে। কিন্তু আমাদের ছাত্ররা একই সঙ্গে বইও পড়ে, অন্যের সঙ্গে কথাও বলে, মুড়িও চিবায় এবং শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সঞ্চালন করে। এ ধরনের পড়া থেকে লাভবান হওয়ার প্রত্যাশা করতে পারো না! মনে রাখবে ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ। কাকচেষ্টা বকধ্যান, স্বল্পহারী, গৃহত্যাগী না হলে লেখাপড়া হয় না।
আসলে আগ্রহ না থাকলে লেখাপড়া শেখা হয় না। বন্ধের সময় প্রতিদিন দুপুরে না ঘুমিয়ে একেক নিয়মের একটি করে অঙ্ক কষো। এভাবে একমাস অঙ্ক কষলে দেখতে পাবে তোমার সব নিয়মের অঙ্ক করা হয়ে গেছে। গণিত তোমার নখাগ্রে এসে গেছে। পরিবারে শিক্ষিত লোক থাকলে তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত ইংরেজি বা বাংলা গ্রামার ও ট্রান্সলেশন নিয়ে আলোচনা করো, দেখবে দিন দিন তোমার প্রতি অন্যরা আন্তরিক হবে এবং তোমার নৈতিক শক্তি বেড়ে যাবে।
বন্ধের সময় যেদিন যে বিষয় পড়বে সেদিন সে বিষয়ের বইয়ের আদ্যোপান্ত পড়ে ফেলবে। দেখবে তোমার ভয়ভীতি চলে গিয়ে পড়া সহজ হয়ে গেছে। তুমি নিজেকে মনে করবে, তুমি ছাত্র নও, একটা দৌড়ের ঘোড়া।
লেখক : পরিচালক (গবেষণা ও তথ্যায়ন), জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম)