বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি (বিএম) শাখার প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণ নিয়ে অনিশ্চিয়তায় পড়েছেন দিনাজপুরের ফুলবাড়ির শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজের বিএম শাখার ৪২ জন শিক্ষার্থী। ২৬ জন জানেন না তারা কোন কলেজের!
ভুক্তভোগী ৪২ জন শিক্ষার্থী নিজ সম্মতিতে শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজের বিএম শাখায় ভর্তি হলেও তাদের সম্মতি ছাড়াই নিজ খেয়ালখুশি মতো পার্শ্ববর্তী মধ্যপাড়া কলেজ, বর্ণমালা নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজসহ অজ্ঞাতনামা কলেজে গোপনে ভর্তি করা হয়েছে ওইসব শিক্ষার্থীদের।
অনিশ্চয়তায় পড়া শিক্ষার্থী ইমরান পারভেজ সাকিব, রেজাউল আলম, সাদিকুল ইসলাম, শাহাজাহান আলী ও লেমন ইসলাম বলেন, স্থানীয় জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে ২০১৮ সালের এসএসসি পাস করে স্থানীয় শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজের এইচএসসি-বিএ শাখার কম্পিউটার অপারেশন ট্রেডে ভর্তি সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় যাবতীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভর্তি হন।
কিন্তু প্রথম বর্ষের চূড়ান্ত (ফাইনাল) পরীক্ষার জন্য নিজ কলেজে ফরম পূরণ করতে গিয়ে জানতে পারেন তারা মধ্যপাড়া কলেজের বিজ্ঞান শাখার ছাত্র হিসেবে ভর্তি হয়ে আছেন। অথচ তারা কোনোদিন ওই কলেজে ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদনও করেননি এবং কোনো কাগজপত্র জমাও দেননি। তারপরও তারা সেই কলেজের ছাত্র হয়ে আছেন।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী লিংকন হোসেন ও বিপ্লব হাসান বলেন, উপজেলার উত্তর লক্ষ্মীপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের স্কুল শাখা থেকে মানবিক বিভাগে এসএসসি পাস করে শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজের এইচএসসি-বিএম শাখার উদ্যোক্তা ও ব্যাংকিং ট্রেডে ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু ফরম পূরণ করতে এসে জানতে পারছেন তাকে বর্ণমালা নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র হিসেবে ভর্তি করা হয়েছে। যেখানে তিনি ভর্তির আবেদনও করেননি এবং ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় কোনো কাগজপত্রও জমা দেননি।
সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থী অন্তিম চন্দ্র। তিনি বলেন, স্থানীয় জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল শাখা থেকে এসএসসি পাস করে স্থানীয় শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজের এইচএসসি-বিএম শাখার হিসাব রক্ষণ ট্রেডে ভর্তি হয়েছেন। ফরম পূরণ করতে এসে জনতে পারছেন তিনি অন্য কলেজেও ভর্তি আছেন। কিন্তু কোন কলেজে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি করা হয়েছে, সেটি জানতে না পারায় সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
জিএম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তোজাম্মেল হক বলেন, কীভাবে তার স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যপাড়া কলেজের ছাত্র হিসেবে ভর্তি করা হয়েছে সেটি জানতে ওই কলেজের অধ্যক্ষকে গত ২০ জানুুয়ারি চিঠি দেওয়া হয়েছে। একই সাথে ওই ঘটনার সাথে স্কুলের কেউ জড়িত আছে কী না সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিষয়টি সাথে স্কুলের কাউকে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মধ্যপাড়া কলেজের অধ্যক্ষ মো. অবায়দুর রহমান বলেন, ওই সব শিক্ষার্থীর দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য বোর্ডের কর্তাব্যক্তিদের সাথে আলোচনা হয়েছে। ছাত্রদেরকে কলেজে আসতে বলা হয়েছে, ছাত্ররা আসলে বিষয়টি সুরাহা করার ব্যবস্থা করা হবে।
শহীদ স্মৃতি আদর্শ কলেজের অধ্যক্ষ মো. জিল্লুর রহমান বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীরা সরকারি নিয়মনীতির মাধ্যমে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কলেজে জমা দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তি হওয়া ছাত্রদের না জানিয়ে অনিয়মের মাধ্যমে অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি দেখানোর কারণে ৪২ জন ছাত্র ফরম পূরণ অনিশ্চয়তায় পড়েছে।
এদের মধ্যে ১২ জনকে মধ্যপাড়া কলেজে এবং ৪ জনকে বর্ণমালা নিকেতন স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি দেখানো হলেও ২৬ জন ছাত্র জানতেই পারছে না তাদেরকে কোন কলেজে ভর্তি করা হয়েছে। ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার ব্যবস্থা করা না হলে তারা ফরম পূরণ করতে পারবে না এবং তাদের এক বছর শিক্ষাজীবন থেকে লস হবে।