বাজারে যখন হু-হু করে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম ঠিক তখনই ঠাকুরগাঁওয়ের একটি স্কুলে দুপুরে শিক্ষার্থীদের মাত্র ১৫ টাকায় স্বাস্থ্যসম্মত পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। ফলে শিক্ষার্থীদের কেউ পেটের পীড়ায় আক্রান্ত হচ্ছে না। আর এটি সম্ভব হয়েছে স্কুলটির প্রধান শিক্ষকসহ স্কুল কমিটির উদ্যোগের কারণে।
স্কুলটির নাম আর কে স্টেট উচ্চ বিদ্যালয়। শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে গড়েয়া রোড ধরে সামান্য দক্ষিণে এগুলেই চোখে পড়ে। ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এবং ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি স্বীকৃতিপ্রাপ্ত স্কুলটির যাত্রা শুরু হয় মাত্র ৪৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে। এখন সে সংখ্যা ৮৮৩ জন। তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার ৯৭-এর নিচে নামেনি। জানা যায়, স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার পর প্রধান শিক্ষক লক্ষ করে দেখলেন টিফিন পিরিয়ডের পরের ক্লাসগুলোতে শিক্ষার্থীরা তেমন মনোযোগী থাকে না। অনেকের চোখেমুখেই ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ধরা পড়ে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো শিশু পেটের পীড়ার জন্য ছুটির আবেদন করে। অনেক অভিভাবকও ফোন করে তাদের সন্তানের পেটের পীড়ার কথা জানান। পর্যবেক্ষণে ধরা পড়ে শিক্ষার্থীরা টিফিন পিরিয়ডে যে চটপটি বা ফুচকা খাচ্ছে তা থেকেই পেটের পীড়ার উদ্ভব। বিষয়টি নিয়ে তিনি স্কুল কমিটির দীর্ঘদিনের সদস্য রমজান আলীর সঙ্গে আলোচনা করে উপায় বের করেন। একজন শিক্ষার্থী দুপুরে চটপটি ফুচকা খাচ্ছে ১৫ টাকায়। সেই ১৫ টাকাতেই যদি দুপুরে তাদের মানসম্মত খাবার দেয়া হয় তাহলে কেমন হয়। বিষয়টি নিয়ে তারা স্কুল কমিটির সভাপতি সন্তোষ কুমার দাস এবং শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেন। সবাই ব্যাপারটিতে সম্মতি দেন। ডেকে আনা হয় চটপটি বিক্রেতা রেজাউল করিমকে।
তাকে প্রস্তাব দেয়া হয় স্কুলের ভেতরে দুপুরে চটপটির দামেই এক প্লেট ভাত, যে কোনো একটি সবজি এবং পাতলা ডাল খাওয়ানোর জন্য।
চলতি বছর এপ্রিল মাসে ১৫ টাকায় দুপুরের খাবার চালু হয়। প্রথম দিনে উপস্থিত থেকে এতে উৎসাহ দেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন। ১৫ টাকায় দুপুরের খাবারের ব্যাপারটি চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে তা দেখতে আসেন দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ অনেকেই। তারা প্রত্যেকেই এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন ও খাবারের মান নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
কথা হয় সপ্তম শ্রেণির তানভীর, নবম শ্রেণির মহুয়া আকতার মৌ, শাহিনুর ইসলাম শিহাবের সঙ্গে। তারা জানায়, ১৫ টাকায় এক প্লেটে যতটুকু খাবার দেয়া হয় তাতে আমাদের পেট ভরে যায়।
খাবার বিক্রেতা রেজাউল করিম বলেন, আগে লাভ-লোকসানের চিন্তা করতাম। এখন সেই চিন্তা নেই। এখন মনে করি বাচ্চাগুলোকে আমার ভালো কিছু খাওয়াতে হবে। স্কুল কমিটির অন্যতম সদস্য উপজেলা কৃষক লীগের সম্পাদক রমজান আলী বলেন, সদর উপজেলায় আমরাই প্রথম শিক্ষার্থীদের জন্য এমন একটা ব্যবস্থা চালু করেছি। খাবার দেয়ার ব্যবস্থাপনা দেখতে অনেকেই আসছেন, প্রশংসাও করছেন।
প্রধান শিক্ষক জাহিদুল ইসলাম স্বপন বলেন, ১৫ টাকায় দুপুরের খাবার দেয়ার সবচেয়ে বড় সাফল্য হচ্ছে টিফিনের পরের ক্লাসগুলো করতে কোনো শিক্ষার্থী এখন আর ক্লান্তি অনুভব করে না। খাবারের দামটাও সবার সাধ্যের মধ্যেই।
আর কে স্টেট উচ্চ বিদ্যালয়ের দেখানো পথ ধরে আরও অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। অনেক স্কুলেই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু হয়েছে দুপুরের খাবার।