ফুসফুসের জটিলতায় রেস্পিরেটরি ফিজিওথেরাপি

এহসানুর রহমান |

ফুসফুসের যে কোনো জটিল পর্যায়ে রেস্পিরেটরি ফিজিওথেরাপিস্টের অনন্য ভূমিকা রয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী বা সাম্প্রতিক যে কোনে শ্বাস-প্রশ্বাসের রোগজনিত রোগীদের ক্ষেত্রে উপসর্গ কমাতে এবং জীবন-যাত্রার মান বৃদ্ধিতে রেস্পিরেটরি ফিজিওথেরাপি বা ফুসফুসের ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্ব পূর্ণ অধ্যায়। রেস্পিরেটরি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা রোগীর অবস্থা অনুসারে নির্ধারিত এবং পরিবর্তিত হয়।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে আমেরিকার ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটের প্রধান প্রফেসর ডা. তাসবিরুল ইসলাম দুর্বল রোগীদের জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব আরোপ করেছেন। পৃথিবীর প্রতিটি বড় বড় হাসপাতালে রেস্পিরেটরি ফিজিওথেরাপিস্ট আছেন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতার বিভিন্ন হাসপাতালে ও কোভিড-১৯ রোগীদেরকে শ্বাসকষ্ট নির্মূল করতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

শ্বাসতন্ত্রের জটিলতার কারণে দেহে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দেয় এবং রোগীরা সামান্য হাঁটাহাঁটি করতে গেলেই খুব সহজে ক্লান্ত হয়ে যায়। যার ফলে রোগীদের শারীরিক কর্মক্ষমতা কমে আসে এবং শারীরিক কর্মকাণ্ডের অভাবে রক্তে প্লাজমিনোজেন এক্টিভেটর ইনহিবিটর (পিএআই) এর পরিমাণ বেড়ে যাবে। পিএআইএর উপস্থিতিতে রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। যার ফলে হার্ট, ব্রেইনসহ অন্যান্য সকল গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোতে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটবে। বিভিন্ন রকম হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে।

গবেষণা মতে বাংলাদেশে সকল ধরনের হৃদরোগের প্রাদুর্ভাবের হার ৫ শতাংশ এবং স্ট্রোকের প্রাদুর্ভাবের হার ৩ শতাংশ। রোগীর অবস্থান প্রোন পজিশনিং (উপুড় করে শোয়ানো) হলো এক ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ফুসফুসে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে। এ পদ্ধতিতে আশানুরূপভাবে ভালো ফলাফলও পাওয়া যাচ্ছে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে যারা জটিল শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন জানায়, শ্বাসকষ্টের সমস্যা তীব্র হলে আইসিইউতে ভেন্টিলেটর দেয়ার পূর্বে আগে রোগীদের এ সেবা দেয়া হচ্ছে। এতে রোগীরা বেশ দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। যখন রোগীকে এভাবে রাখা হয় তখন রক্তে অক্সিজেনের পরিমাপের হার, তার অক্সিজেনের স্যাচুরেশন হার ৮৫ শতাংশ থেকে ৯৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়, এটি রোগীর সুস্থতার লক্ষণ। এছাড়া আইসিইউতে ফুসফুসে শ্বাসকষ্টজনিত রোগীদের ক্ষেত্রে মনিটরে যদি দেখা যায় শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বাড়ছে এবং অক্সিজেন সেচুরেশনের হার কমেছে তখন ফুসফুসের বিভিন্ন লোবে ক্ল্যাপিং, শেকিং, এক্টিভ হাফিং এবং একটিভ কফিং এর মাধ্যমে অক্সিজেন সেচুরেশনের রেট বাড়ানো সম্ভব এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট কমানো সম্ভব।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মতে, একদিনে ১৬ ঘণ্টা করে রোগীকে উপুড় করে শুইয়ে রাখতে হয়। এ সময় রোগীর পিঠের অংশকে এক প্রকার রেস্ট দেয়া বলা যেতে পারে। কারণ পিঠের অংশ বেশ অনেকক্ষণ উপরে থাকে। রোগীকে টানা এত সময় রাখা না গেলে ২টি সেশনে এ চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ৪ ঘণ্টা করে সময় ভাগ করেও এ চিকিৎসা দেয়া যেতে পারে।

ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল আইসিইউর পরিচালক ডা. ক্যাথরিন হিবার্ট বলেন, এই পদ্ধতিতে প্রায় সাথে সাথেই রোগীদের উন্নতি হচ্ছে। এক্ষেত্রে রোগীদের আইসিইউতে হস্তান্তর করার আগে তাদেরকে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এভাবে ফুসফুসে সহজে অক্সিজেন পৌঁছতে পারে। পিছনে থাকাকালীন, শরীরের ওজন কার্যকরভাবে ফুসফুসকে স্কুইজ করতে সাহায্য করে। 
সাত বছর আগে ফরাসী চিকিৎসকরদের দ্বারা নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিনে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে দেখানো হয়েছিল, এআরডিএস আক্রান্ত রোগীরা যাদেরকে ভেন্টিলেটরে রাখা হয়েছিল তাদেরকে যদি পেটের দিকটা নিচে, অর্থাৎ উলটো করে রাখা যায় সেক্ষেত্রে মৃত্যুর সম্ভাবনা কমে যায়। বাসায় যারা আইসোলেশনে আছেন তারাও উপুড় হয়ে শুয়ে শ্বাসতন্ত্রের জটিলতা কমাতে পারেন।

ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধিতে ফিজিওথেরাপি : পারসড লিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ, ডায়াফ্রামাটিক এক্সারসাইজ, কন্ট্রোলড ব্রিদিং এক্সারসাইজ, ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ, হাফিং, চেস্ট এক্সপানশন এক্সারসাইজের জন্য হাফ লায়িং (আধ শোয়া) পজিশনে থেকে রোগীরা করতে পারবেন। এতে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা এবং বাতাস প্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।

মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিমের সাথে রেসপিরেটরি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক একসাথে হয়ে কাজ করলে রোগীর অনেক উপকার হবে। এই কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে যেখানে অন্যান্য চিকিৎসা নড়বড়ে সেখানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পাবার সাথে সাথে একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর অবস্থার উপর নির্ভর করে প্রাত্যহিক এক্সারসাইজের ব্যবস্থাপত্র করে দিবেন যার লক্ষ্য থাকবে রোগীকে স্বাভাবিক জীবন-যাত্রায় ফিরিয়ে আনা এবং সম্ভাব্য সকল জটিলতা প্রতিরোধ করা।

এরোবিক এক্সারসাইজ (উঠা-বসা, হাটা-চলা, জগিং, সিঁড়িতে উঠা-নামা), ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ, স্ট্রেচিং এবং স্ট্রেন্দেনিং এক্সারসাইজ, রেসিস্ট্যান্স এক্সারসাইজ (ডাম্বেল এবং থেরাব্যান্ড দিয়ে) ইত্যাদি এক্সারসাইজ লিপিবদ্ধভাবে একজন দক্ষ ফিজিওথেরাপিস্ট এর সরাসরি তত্ত্বাবধানে করা গেলে ফুসফুসের জটিল রোগীদের সম্পূর্ণ সুস্থতা এবং জীবনমান উন্নত করা সম্ভব।

লেখক : এহসানুর রহমান, সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ হেলথ প্রফেশনস ইনস্টিটিউট, সি আর পি, সাভার, ঢাকা।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034611225128174