ফেসবুক কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষায়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বাংলাদেশের সব প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম সমন্বয়ের কাজে ফেসবুককে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। সবগুলো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তৈরি করা একটি ফেসবুক গ্রুপে এবং একটি ফেসবুক পেইজে যুক্ত হতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে।

প্রাইমারি স্কুলগুলোর শিক্ষার্থীদের সাপ্তাহিক পাঠ্যসূচী সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানা এবং দাপ্তরিক বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সম্পর্কে স্কুলগুলোকে নিয়মিত ওয়াকিবহাল করার উদ্দেশ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব বদিয়ার রহমান - যার নামে বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশিত হয়েছিল।

বদিয়ার রহমান বলেন, "প্রাথমিক স্কুলগুলোর কার্যক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারা নিয়মিত বিরতিতে মিটিং করতেন। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সেসব মিটিং আয়োজন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।"

"তাই আমরা ফেসবুকের সাহায্যে সবাইকে যুক্ত করার চেষ্টা করছি, যেন গ্রুপে এবং পেইজে পোস্ট দেয়ার মাধ্যমে স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সাথে কর্তৃপক্ষকে যুক্ত করতে পারি। এভাবে তাদেরকে সব আপডেটেড তথ্য জানাতে পারবো আমরা।"

কতটা কার্যকর হচ্ছে পরিকল্পনা?

বদিয়ার রহমান জানান বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাদের ফেসবুক গ্রুপে নতুন ৬ হাজার সদস্য যুক্ত হয়েছেন, যেই সংখ্যাটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগ পর্যন্ত ছিল ২ হাজার।

"বাংলাদেশে মোট প্রাথমিক স্কুল রয়েছে ৬৫ হাজারের মত। সেগুলোর মধ্যে থেকে ৩০ হাজারের মত স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমাদের সাথে যুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে আমাদের।"

অর্ধেকেরও বেশি প্রাথমিক স্কুলকে যুক্ত না করে কীভাবে এই পরিকল্পনায় সাফল্য পাওয়া সম্ভব - এই প্রশ্নের উত্তরে বদিয়ার রহমান বলেন, "বাংলাদেশের উপজেলা পর্যায়ে কয়েকটি স্কুলে নির্দেশনা বা খবর পৌঁছানো হলেই আসলে আশেপাশের অন্যান্য স্কুলগুলোতে খবর পৌঁছে যায়। সেজন্যেই আমরা সবগুলো প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের এই প্রক্রিয়ায় সংযুক্ত করার বিষয়ে অতিরিক্ত জোর দিচ্ছি না।"

বাংলাদেশের বহু গ্রাম এবং উপজেলায় ইন্টারনেট সুবিধা অপ্রতুল, আবার অনেক স্কুলের শিক্ষকরাই সোশ্যাল মিডিয়ার মত প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষ নয়।

যেসব শিক্ষকরা গ্রুপে যুক্ত হতে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন, তাদেরকে গ্রুপের অ্যাডমিনরা নিয়মিত ভিত্তিতে সহায়তা করছেন বলে জানান বদিয়ার রহমান।

'প্রচেষ্টা ইতিবাচক, কিন্তু বিকল্প প্রয়োজন'

করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব চলাকালীন সময় প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ফেসবুকের মাধ্যমে স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সংযুক্ত রাখার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানান শিক্ষা গবেষক ও বেসরকারি সংস্থা গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী।

তবে ফেসবুক গ্রুপের বাইরেও আরো বিকল্প পদ্ধতিতে প্রধান শিক্ষকদের সংযুক্ত রাখার চেষ্টা করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।

"অনেকসময়ই আমরা প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের কাছ থেকে এরকম অভিযোগ শুনেছি যে, প্রজ্ঞাপণ জারি করার পর একদিনের মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার আশা করা হয় তাদের কাছ থেকে। ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে প্রশাসনের সাথে প্রধান শিক্ষকরা যুক্ত থাকলে এই সমস্যার হার কমে আসবে।"

তবে বাংলাদেশের প্রাথমিক স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে মনোযোগ দেয়ার বিষয়টিতেও গুরুত্ব দেন তিনি।

পাশাপাশি, অনেক দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট না থাকার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিকল্প পদ্ধতি চিন্তা করার তাগিদ দেন তিনি।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, "চা বাগান, চর, হাওর বা দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলের অনেক স্কুলের প্রধান শিক্ষকই যথাযথ ইন্টারনেট সুবিধা পান না। তাদেরকে সংযুক্ত রাখার জন্য বিকল্প চিন্তা করতে পারে প্রশাসন।"

তিনি বলেন, "বাংলাদেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ মানুষের কাছে ফিচার ফোন রয়েছে, আর বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচি, শিশু জরিপ থেকে শুরু করে যে কোনো সরকারি সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য টেক্সট মেসেজ অনেক কার্যকরীভাবে কাজ করে বলে আমরা দেখেছি।"

"কাজেই দুর্গম এলাকার যেসব স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হয়ে আপডেট জানতে পারবেন না, তাদেরকে স্থানীয় শিক্ষা প্রশাসন টেক্সট মেসেজের মাধ্যমে সংযুক্ত রাখতে পারেন।"

তবে করোনাভাইরাস মহামারির সময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নেয়া পদক্ষেপগুলো কার্যকর করতে আরো বিকল্প পদ্ধতি প্রস্তুত রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেন রাশেদা কে চৌধুরী।

"অনেকক্ষেত্রেই ইন্টারনেট না থাকা বা ডিভাইস না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস করতে পারছে না। এর ফলে উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে যে, ডিজিটাল ডিভাইসটা না প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়।"

"এখন প্রধান শিক্ষকদের মধ্যেও এই সমস্যা যেন দেখা না যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।"

সূত্র: বিবিসি বাংলা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0066561698913574