ফেসবুকে মিথ্যা খবর ছড়াতেই 'রাজনীতিবিদ' হচ্ছেন যিনি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

সামাজিক মাধ্যমে কি মিথ্যা বিজ্ঞাপন বা তথ্য প্রচার করতে চান? তাহলে রাজনীতিবিদ হয়ে যান। এমনটাই বলছেন এক মার্কিন অ্যাক্টিভিস্ট।

রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বা তথ্য প্রচারের বিষয়ে সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্ট ফেসবুকের নীতিকে চ্যালেঞ্জ করতে যিনি চরম পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছেন।  বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।

সান ফ্রান্সিসকোর বাসিন্দা আড্রিয়েল হ্যাম্পটন ফেসবুকের রাজনৈতিক প্রচারণাকে যাচাই বাছাই ছাড়া প্রচারের নীতিকে সামনে আনতে চান। তবে রাজনীতিবিদ ছাড়া অন্য ব্যবহারকারীদের তথ্য প্রচারের ক্ষেত্রে তা যাচাই করে থাকে ফেসবুক।

২০২২ সালের গভর্নর নির্বাচনের অনেক আগেই ক্যালিফোর্নিয়া গভর্নর পদে প্রার্থী হিসেবে রেজিস্টার করেছেন হ্যাম্পটন। যাতে করে সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে নিজের মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারেন তিনি।

"এই প্রচারণার উদ্দেশ্য সামাজিক মাধ্যমের নীতিমালা এবং এটা নিশ্চিত করা যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতো রাজনীতিবিদরা যারা অনলাইনে মিথ্যা বলতে পছন্দ করেন তারা যাতে কোন ছাড় না পান," সিএনএন বিজনেসকে তিনি এ কথা বলেন।

কিন্তু ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই অ্যাক্টিভিস্টকে তার মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর সুযোগ দিতে রাজি নয়।

'রুখে দাঁড়াও'

হ্যাম্পটন দ্য রিয়েলি অনলাইন লেফ্টি লীগের একজন সদস্য। যারা নিজেদেরকে "৯৯ শতাংশের জন্য ডিজিটাল-ফার্স্ট রাজনৈতিক কমিটি" বলে বর্ণনা করে।

তারা বলেন, তাদের লক্ষ্য হচ্ছে রক্ষণশীল রাজনৈতিক শক্তিকে রুখে দেয়া যারা বড় অর্থের বিনিময়ে অনলাইনে নানা ধরণের কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করেছে।

"রাশিয়ার ইন্টারনেট গবেষণা সংস্থা থেকে শুরু করে ট্রাম্পের ডিজিটাল ব্রেইন ট্রাস্টের মতো রক্ষণশীল এবং উচ্ছৃঙ্খল এজেন্টরা অনলাইন মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে। আমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছি," এর ওয়েবসাইটে বলা হয় এবং হ্যাম্পটন মনে করেন যে, প্রতিরোধ গড়ে তোলার একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র এটি।

সিএনএন বিজনেসকে তিনি বলেন, "আমি মনে করি সোশ্যাল মিডিয়া অত্যন্ত শক্তিশালী। আমার বিশ্বাস নির্বাচন পাল্টে দেয়ার মতো ক্ষমতা আছে ফেসবুকের।"

চাপের মুখে ফেসবুক

নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন বিষয়ে ফেসবুকের নীতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে মার্ক জাকারবার্গকে উদ্দেশ্য করে ফেসবুকের দুই শতাধিক কর্মীর লেখা ও স্বাক্ষরিত একটি চিঠি দেয়ার পর হ্যাম্পটনের এই পদক্ষেপ আসলো। "মুক্ত বক্তব্য এবং টাকার বিনিময়ে বক্তব্য এক বিষয় নয়," চিঠিতে বলা হয়।

"রাজনীতিতে রয়েছেন বা রাজনীতি আসার জন্য নির্বাচন করছেন এমন ব্যক্তিদের বিষয়ে ফ্যাক্ট চেকিং বিষয়ক আমাদের নীতি ফেসবুকের আদর্শের প্রতি হুমকি।"

এর কয়েক ঘণ্টা পরে সেনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ডেমোক্রেট সেনেটর মার্ক ওয়ার্নার জাকারবার্গকে উদ্দেশ্য করে আরেকটি চিঠি লেখেন।

এতে তিনি হুশিয়ার করে বলেন ফেসবুকের এই নীতি মার্কিন রাজনীতিতে থাকা "স্বচ্ছতা, জন সচেতনতা ও বিতর্ক, সরলতা, মতের বৈচিত্র্য এবং জবাবদিহিতাকে" ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে।

২৩ অক্টোবর কংগ্রেসের জিজ্ঞাসাবাদে জাকারবার্গ স্বীকার করেছেন যে এক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তৈরি করা একটি বিজ্ঞাপন হয়তো ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছিল।

যদিও দ্য রিয়েলি অনলাইন লেফ্টি লীগের একটি ভুয়া বিজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, শীর্ষ এক রিপাবলিকান সদস্য যুক্তরাষ্ট্রে পরিবেশ বিষয়ক প্রস্তাবনায় সমর্থন দিয়েছেন-সেটি সরিয়ে নিয়েছে ফেসবুক।

বিশেষ করে হ্যাম্পটনের এই ভুয়া বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ফেসবুক বলেছে, একটি রাজনৈতিক দলের কাছ থেকে আসার কারণেই ফ্যাক্ট-চেকিংয়ের আওতায় পড়েছে ওই বিজ্ঞাপন।

আদালতে মামলা?

এখন হ্যাম্পটন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে ফেসবুকে বলছে, তারপরও তারা ফ্যাক্ট-চেক করবে এবং সম্ভবত তার রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আদালতে গড়াবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, ফেসবুকের এক মুখপাত্র সিএনএন বিজনেসকে বলেন: "এই ব্যক্তি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, আমাদের নীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই প্রার্থী হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করেছেন। আর তাই তার সব আধেয় বা তথ্য, বিজ্ঞাপন সবই তৃতীয় পক্ষের যাচাই বাছাইয়ের আওতায় পড়বে।"

এর প্রতিক্রিয়ায় হ্যাম্পটন বলেছেন যে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করার চিন্তা করছেন কারণ এটি "শুধু আমার জন্য একটি নীতি বানিয়েছে।"

ফেসবুক নিয়ে যখন এধরণের ঘটনা ঘটে চলেছে, তখন ফার্মটি তাদের নিজেদের নীতির পক্ষে সাফাই দিয়ে বলেছে, তারা রাজনৈতিক বক্তব্যের বিষয়ে লাগাম টানতে চায় না।

মঙ্গলবার ফেসবুকের দুই জন জ্যেষ্ঠ পরিচালক, যার মধ্যে ফার্মটির বৈশ্বিক নির্বাচন বিষয়ক পরিচালক কেটি হার্বাথও রয়েছেন, তারা একটি বিবৃতিতে সই করেছেন যা ইউএসএ টুডে নামে একটি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, "ফেসবুকের উচিত নয় নির্বাচনী প্রার্থীদের বিজ্ঞাপনে সত্য তথ্য প্রচারে বিষয়ে গেট কিপারের দায়িত্ব পালন করা।"

তারা লেখেন: "যারা চান যে রাজনীতিবিদদের কোন বক্তব্য সঠিক তা ফেসবুক সিদ্ধান্ত নিক - তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, নিজেদেরকে প্রশ্ন করুন যে ফেসবুককে এতো ক্ষমতা আপনারা কেন দিতে চান?"


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও - dainik shiksha স্কুল-কলেজ খুলছে রোববার, ক্লাস চলবে শনিবারও প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি - dainik shiksha পরীক্ষার আগেই হবু শিক্ষকদের হাতে পৌঁছে যায় উত্তরপত্র: ডিবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল - dainik shiksha ডিগ্রি তৃতীয় শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির সভা ৩০ এপ্রিল বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ - dainik shiksha বুয়েটে সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়লো হিজবুত তাহরীরের লিফলেট বিতরণ এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস - dainik shiksha এইচএসসির ফল জালিয়াতির অডিয়ো ফাঁস please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.004188060760498