বইয়ের কোনো সীমানা নেই। সীমান্ত ছাড়িয়ে বই পৌঁছে যায় মানুষের কাছে। এশিয়ার মানুষ হয়ে জানতে পারি আফ্রিকার সংস্কৃতি ও জীবনযাপনের রূপরেখা। জানতে পারি ইউরোপ-আমেরিকা-ল্যাটিন আমেরিকার জীবন। বই মানবজাতির অক্ষয় সাধনা। আর অমর একুশে গ্রন্থমেলা তো আমাদের প্রাণের মেলা। এই মেলাকে সামনে রেখেই অধিকাংশ লেখক তাদের লেখা তৈরি করেন। তা ছাড়া প্রবীণের সঙ্গে নতুন অনেক লেখকেরও আবির্ভাব হয়। এই মেলা পাঠক সৃষ্টি করে, পাঠক ধরে রাখে। ডিজিটাল এই যুগেও বইমেলার আকর্ষণে পাঠকরা ছুটে আসেন, নতুন বই ছুঁয়ে দেখেন, কেনেন। নতুন বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা হন তারা। এই মেলা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎকর্ষে অনেক বড় ভূমিকা রেখে আসছে। একজন লেখক হিসেবে বইমেলা আমার কাছে আপন অস্তিত্বের মতোই একটি বিষয়। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) ভোরের কাগজ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
বইমেলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এভাবেই বই এবং মেলা প্রসঙ্গে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
সেলিনা হোসেন বলেন, তরুণ ও শিশুদের বইয়ের প্রতি আকৃষ্ট করতেও এ মেলার বড় ভূমিকা আছে। মেলায় চালু করা হয়েছে শিশুপ্রহর, অর্থাৎ শিশুদের বইয়ের জন্য আলাদা চত্বর।
সেলিনা হোসেন বলেন, একাডেমিতে ৩৪ বছর চাকরি করে অমর একুশে গ্রন্থমেলা দেখেছি খুব কাছে থেকে। এর চরিত্র শুধু বই প্রকাশ ও বিক্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বইমেলা ভাষা আন্দোলনের শহীদের রক্তে প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমি আয়োজিত ও একুশে ফেব্রুয়ারির উপলক্ষ্য হলেও মাসজুড়ে বইমেলার আবেদন জাতীয় মননের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই মেলাকে আস্তে আস্তে বড় হতে দেখেছি। আশির দশকে মেলার বড় পরিবর্তন হয়। ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বইমেলার আনুষ্ঠানিক নাম রাখা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা।’
তথ্যপ্রযুক্তির এই অস্থির সময়েও বইয়ের ভূমিকা হ্রাস পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে কিনা এর উত্তরে এই কথাশিল্পী বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই সময়েও বলতে চাই- বইয়ের বিকল্প নেই। বড় করে শ্বাস নিলে একুশের চেতনায় প্লাবিত হয়ে থাকা মেলা প্রাঙ্গণ জাতির ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ জায়গা।
সেলিনা হোসেন জানান, বাংলা একাডেমি রাত-দিন কাজ করছে এই মেলাকে সফল করতে। এর নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, সৌন্দর্য সবদিক নিয়ে কাজ করছেন তারা।