সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠাগার খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি সব বিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ বুক কর্নার’ চালু করার নির্দেশ দিয়েছে। এ জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে গত ৭ জুলাই বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বেশ কিছু বইয়ের নাম উল্লেখ করে তা যাচাইপূর্বক সংরক্ষণ করার নির্দেশনা দেয়া হয়। কিন্তু দুই লেখকের চারটি বই ১০ জেলায় সরবরাহ করার পর সেই নির্দেশনা বাতিল করে অধিদপ্তর। এতে বিপুলসংখ্যক বই সরবরাহ করে বিল না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন প্রকাশকরা। রোববার (৮ ডিসেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ৭ জুলাই ডিপিইর পরিচালক (পলিসি ও অপারেশন) খান মো. নুরুল আমিনের সই করা এক আদেশে চারটি বই যাচাই-বাছাই করে ক্রয়পূর্বক সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয় সব বিভাগীয় উপপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, পিটিআই সুপারিনটেনডেন্ট ও উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে। বইগুলো হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কিত কবি কুমার সুশান্ত সরকার রচিত পার্ল পাবলিকেশনসের গ্রন্থ ‘অসাম্প্রদায়িক বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ এবং মৌসুমী মৌ রচিত ছড়াগ্রন্থ জিনিয়াস পাবলিকেশনসের ‘বাংলা ছেড়ে ভাগ’, ‘রাম ছাগলের পাঠশালা’ ও শিশুরাজ্য প্রকাশনার ‘জাগরণ আসবেই’।
জানা যায়, ডিপিইর আদেশের পর পার্ল পাবলিকেশনস ১০টি জেলায় প্রায় ২৫ হাজার বই সরবরাহ করেছে। একইভাবে অন্যান্য প্রকাশনীও তাদের প্রতিটি বইয়ের প্রায় ২৫ হাজার কপি করে সরবরাহ করেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসাররা সই করে গ্রহণ করেছেন বইগুলো। কিন্তু ওই ১০ জেলায় বই সরবরাহের পর আদেশটি বাতিল করে ডিপিই। ফলে প্রায় চার মাস আগে বইগুলো সরবরাহ করা হলেও এখনো বিল দেয়া হচ্ছে না।
পার্ল পাবলিকেশনসের প্রকাশক হাসান জায়েদী বলেন, ‘ডিপিই নানা ধরনের যাচাই-বাছাই করে বইগুলো সরবরাহের নির্দেশ দিয়েছে। সে মোতাবেক আমরা বইও ছাপিয়েছি। ১০ জেলায় এরই মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। সব কিছু শেষ করার পর এখন বই নিচ্ছে না। আর যে বই সরবরাহ করা হয়েছে এর বিলও দিচ্ছে না। এতে আমরা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছি। তাই দ্রুততার সঙ্গে বিল ছাড়ের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, ‘বই কেনার নির্দেশনা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। তাই বিলের ব্যাপারটিও তারাই দেখবে।’
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এফ এম মনজুর কাদির বলেন, ‘আমরা বলেছিলাম, বইগুলো যাচাই-বাছাই করে যদি মনে করে তা হলে বইগুলো সংরক্ষণ করতে পারে। আর এই বিল অধিদপ্তর থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে দেয়ার সুযোগ নেই। তাই কেউ যদি বই নিয়ে থাকে তাহলে বিল দেয়ার দায়িত্বও তাদের। তবে নতুন করে যাতে এই বইগুলো না নেয়া হয়, সে ব্যাপারে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি।’
অভিযোগ রয়েছে, ডিপিইর আদেশের পর বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের বই কেনার বিরোধিতা করেছেন কিছু ব্যক্তি ও প্রকাশক। তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়েছেন। তাঁদের প্রচারণার মুখেই মূলত ডিপিই তাদের আদেশটি স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছে।
এ ছাড়া বইগুলো কোনো প্রকার কমিশন ছাড়া সরবরাহ করা হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উল্লেখ করেছেন সমালোচনাকারীরা। কিন্তু চালানপত্রে দেখা যায়, প্রতিটি বইয়ের নির্ধারিত মূল্যের পর ২০ শতাংশ কমিশন দিয়েই বিল পাঠানো হয়েছে।
কবি কুমার সুশান্ত সরকার বলেন, ‘আমি বর্তমানে প্রথাবিরোধী লেখক সংঘের সভাপতি। ১৯৭২-এর সংবিধানের মূলনীতি নিয়েই মূলত আমার বইটি লেখা হয়েছে। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ২১ বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যে রাজাকারচক্র দেশকে সাম্প্রদায়িক করে তুলেছে তা তুলে ধরা হয়েছে। একই সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠিত করেছেন সে কথাও আমার বইয়ে বলা হয়েছে।’