বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে মাদরাসা খুলে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি |

কুড়িগ্রামে বঙ্গবন্ধু পরিবারের নামে মাদরাসা খুলে ভুয়া নিয়োগ বাণিজ্য ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সাবেক ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার শেখ ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদরাসার সাবেক সুপার আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ছিটমহল বিনিময়ের পর দাসিয়ারছড়ায় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় একমাত্র ফজিলাতুন্নেছা দাখিল মাদরাসা।

কিন্তু তৎকালীন সুপার আমিনুল ইসলাম নিয়োগ বাণিজ্য, দুর্নীতি, মাদ্রাসার জমি নিজের নামে করে নেয়াসহ বিভিন্ন অপকর্মের কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকৃতি ও প্রাথমিক অনুমোদন অর্জন করতে পারেনি। তিনি নিজে উপজেলার মধ্য কাশিপুর দ্বিমুখী দাখিল মাদরাসায় সহকারী মৌলভি পদে কর্মরত রয়েছেন। তিনি অন্য প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত থাকায় নতুন প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ কম ছিল বলে অভিযোগ অন্যান্য শিক্ষকদের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাবেক সুপার আমিনুল ইসলাম ১২ জন শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রায় ৩৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এছাড়াও মাদ্রাসার তহবিলের টাকা তিনি আত্মসাত করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুপারের বিভিন্ন দুর্নীতির বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিটমহল আন্দোলনের নেতা আলতাফ হোসেন ও তৎকালীন সহ সুপার শাহানুর আলম ৩ মার্চ, ২০১৮ তারিখে সরকারের বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ দাখিল করেন। পরে জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ২০ জুন, ২০১৮ তারিখে সরেজমিনে অভিযোগ তদন্ত করেন তৎকালীন জেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল কাদের কাজী। 

তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি ৩২ লাখ ৩৮ হাজার টাকা আত্মসাত, মাদরাসার ২৭ শতাংশ জমি নিজের নামে রেকর্ড, অবৈধ প্রভাব খাটনোসহ নিজের পরিবারের লোকদের নিয়ে কমিটি গঠনের অভিযোগের প্রমাণ পান বলে উল্লেখ করেন। তিনি প্রহসনমূলকভাবে গঠিত কমিটি ভেঙ্গে দেয়ারও সুপারিশ করেন। এমতাবস্থায় সুপার আমিনুল ইসলাম ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ জুন পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে ম্যানেজিং কমিটির সভায় তা গ্রহণ করা হয়।

ওই বছরের ৪ জুলাই সহ সুপার শাহানুর আলমকে ভারপ্রাপ্ত সুপারের দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে একই বছরের ১ নবেম্বর সুপার হিসেবে যোগদান করেন শাহানুর আলম। এরপর ২০২০ এর ১৪ জানুয়ারি মাদরাসাটি জাতীয়করণের ঘোষণায় আবার সক্রিয় হয়ে ওঠেন সাবেক সুপার আমিনুল ইসলাম। এর দু’দিন পর তিন শতাধিক স্থানীয় লোক নিয়ে মাদরাসা জবর দখলের চেষ্টা করেন। তৎকালীন জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের নির্দেশে পুলিশ এসে তাদের সরিয়ে দেয় বলে জানান বর্তমান সুপার।

জানা গেছে, ২০১৮ তে নাম সর্বস জাতীয় দৈনিকে ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখিয়ে ব্যাকডেটে পুনরায় তৎকালীন কমিটির কাছে সুপার হিসেবে নিয়োগ নেন তিনি। উল্লেখ্য, সেই কমিটিতে তার বাবা ছিলেন সভাপতি। ভুয়া রেজুলেশন ও কাগজপত্র তৈরি করে পূর্বে নিয়োগকৃত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন করে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে আবারও লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

এ ব্যাপারে সাবেক সুপার আমিনুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানান, সাবেক সুপার আমিনুল ইসলাম নিজ ইচ্ছায় ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছেন। পরবর্তীতে আবারও যোগদানের জন্য পত্রিকায় যে বিজ্ঞপ্তি রয়েছে সেটা মূল পত্রিকায় পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, সাবেক সুপার আমিনুল ইসলাম অন্য একটি মাদরাসার এমপিওভুক্ত শিক্ষক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024540424346924