বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পর সর্বপ্রথম শিক্ষার উন্নয়নে হাত দিয়েছিলেন। এ কথা বলেছেন জনপ্রিয় লেখক অধ্যাক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেছেন, জাতির পিতা জানতেন জাতির মেরুদণ্ড ঠিক রাখতে সবার আগে শিক্ষা ব্যবস্থার দিকেই নজর দিতে হবে।
চট্টগ্রাম সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদ ও চট্টগ্রামের নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত একুশে বইমেলার ৯ম দিন লেখক সম্মেলনে অতিথির বক্তব্যে কথা বলছিলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেসিয়াম মাঠে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
জাফর ইকবাল বলেন, ৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার চেয়ে জঘন্য ঘটনা হলো তার ইতিহাসকে মুছে দেয়ার চেষ্টা। সেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার কয়েক বছরের মধ্যে আশির দশকে কোন এক রিকশাওয়ালাকে তিনি বঙ্গবন্ধুর ছবি সম্বলিত একটি পুরাতন টাকার নোট দেয়ার পর সে জিজ্ঞেস করছিলো ‘এ লোক কে’। তারা বঙ্গবন্ধুকে চিনেই না। তাই তিনি সবসময় শিশুদের জন্য লিখলেও তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেন বলে জানান বঙ্গবন্ধু।
জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমার সব লেখায় মুক্তিযুদ্ধের কিছু অংশ থাকে। এটা নিয়ে অনেকের মন্তব্য থাকতে পারে। কিন্তু আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেছি তারা ছাড়া কেউই সেই নৃশংতসতা অনুভব করতে পারবে না। মুক্তিযুদ্ধের এমন নৃশংসতা দেখে আমরা ৭১ পার করেছি। তাই আমি শিশুদের জন্য বই লেখার সময় মুক্তিযুদ্ধের বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করি। শিশুসাহিত্যিকদের কেউ এখন মূল্যায়ন করে না। তাই অনেক ভালো লেখকরা হয়তো শিশুদের জন্য লিখেন না।'
সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্বে অনুষ্ঠিত হয় ‘শিশু সাহিত্য কি সময়ের চাহিদা মেটাতে পারছে?’ শীর্ষক আলোচনা সভা। শিশু সাহিত্যের এ অধিবেশন সঞ্চালনা করেন শিশু সাহিত্যিক রাশেদ রউফ। অতিথি হিসেবে কথা বলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
এসময় জাফর ইকবাল তার বড় ভাই হুমায়ূন আহমেদ ও নিজের ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই হুমায়ূন আহমেদ জানতেন তিনি লেখক হবেন। হুমায়ূন আহামেদ কখনোই জনপ্রিয় হওয়ার জন্য লিখতেন না। তিনি মারা যাওয়ার পর বুঝতে পেরেছিলাম তার জনপ্রিয়তা কতটুকু।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের পরিবারের সবাই লিখেছে, তাই কখনো জনপ্রিয় হওয়ার কথা ভাবিনি। আমি বাচ্চাদের জন্য লিখি। তারা সত্যিকারের পাঠক। তারা কখনো খুশি করার জন্য তোষামোদি করে না। তাই তাদের জন্য লিখে আনন্দ পাই। আমাকে বিজ্ঞান বিষয়ক বাংলা সাহিত্যের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাকে যদি শিশু সাহিত্যের জন্য পুরস্কার দেওয়া হতো তাহলে আরও ভালো লাগতো!’
জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমি কখনোই জানতাম না আমি লেখক হবো। আমি যখন লেখা শুরু করেছিলাম তখন দেশের বাইরে ছিলাম। রুমমেটকে লেখার বিষয়টি বলতে না পেরে বলেছিলাম চিঠি লিখছি। আমার সে লেখা পরবর্তীতে ছাপানো হয়। কিন্তু এর পাঠক কেমন বা বইটা সম্পর্কে মানুষের মন্তব্য কি সেটা জানতাম না। একদিন সে সময়কার জনপ্রিয় লেখক জাহানারা ইমামের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। তিনি আমাকে বললেন তোমার লেখা আমি পড়েছি। লেখা ভালো হয়েছে। এ একটা কথায় আমি উৎসাহি হই। এরপর থেকে আর কখনো লেখা বন্ধ করিনি’।