পদায়ন নীতিমালাবদলি আদেশ অমান্য করলে বেতন বন্ধ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা বদলির আদেশে উল্লিখিত সময়ের মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিলে তার বেতন বন্ধ করা হবে। বদলি হওয়া কর্মকর্তাকে ওই সময়ের মধ্যে তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ছাড়পত্র না দিলে তার বেতনও বন্ধ হয়ে যাবে। রিপোর্ট করা হবে যে, চাকরিতে তার ভূমিকা 'অসন্তোষজনক'। এই রিপোর্ট পদোন্নতির মূল্যায়নে বিবেচনা করা হবে। রোববার (২৪ নভেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন দেলওয়ার হোসেন।

বদলির আদেশ ইস্যু হলে যৌক্তিক কারণ ছাড়া কর্মকর্তাদের সেটি অবশ্যই পালন করতে হবে। কেউ আদেশ পালন না করে বাতিলের জন্য বাহ্যিকভাবে চাপ প্রয়োগ করলে, শৃঙ্খলা ভঙ্গজনিত অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এতদিন এডিসি না হয়ে জেলা প্রশাসক হওয়া গেলেও এখন এডিসি হিসেবে নূ্যনতম ছয় মাসের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ও পাঁচ বছরের এসিআর এবং সমগ্র চাকরি জীবনের শৃঙ্খলাজনিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হতে হবে। জেলা প্রশাসক হওয়ার ক্ষেত্রে সপরিবারে কর্মস্থলে অবস্থানে আগ্রহ অতিরিক্ত যোগ্যতা হিসেবে গণ্য করবে সরকার। পদায়নের ক্ষেত্রে আর্থিক বছর ও বর্ষপঞ্জি, প্রশিক্ষণ, পঠিত বিষয়, কাজের প্রকৃতি ও কর্ম-অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা হবে। মাঠ পর্যায় থেকে মন্ত্রণালয়ে পদায়নের ক্ষেত্রে ব্যাচভিত্তিক জ্যেষ্ঠতাকে গুরুত্ব দেবে সরকার।

মন্ত্রী ও স্থায়ী কমিটির সভাপতির একান্ত সচিব (পিএস) হবেন একজন উপসচিব। প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী, সচিব, সিনিয়র সচিব, রেক্টর এবং চেয়ারম্যানদের পিএস হবেন একজন সিনিয়র সহকারী সচিব বা সহকারী সচিব বা সমপদমর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিরা। সাংবিধানিক পদে নিয়োজিত ব্যক্তিদের পিএস অবশ্যই উপসচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিব হতে হবে। এসব বিধান রেখে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মাঠ প্রশাসন ও মন্ত্রণালয়, বিভাগ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, দপ্তর, পরিদপ্তর এবং অন্যান্য সংস্থায় পদায়ন নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে জনপ্রশাসন  মন্ত্রণালয়।

এই নীতিমালা চূড়ান্ত করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে এ মন্ত্রণালয়ের সব অনুবিভাগের প্রধান এবং এপিডি অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে আগামীকাল  সোমবার সভা হবে। এরপর এটি সচিব কমিটির কাছে পাঠানো হবে। সচিব কমিটি চূড়ান্ত অনুমোদন দিলে শিগগিরই এটি নীতিমালা হিসেবে জারি করবে সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, 'মন্ত্রণালয় থেকে বদলি বা পদায়নের আদেশ জারি হওয়ার পরও অনেক কর্মকর্তা তা মানছেন না। সময় মতো অবমুক্তি হচ্ছে না। তাই এই নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রশাসনের প্রত্যেক কর্মকর্তাকে নিয়মের আওতায় আনা হবে।' বদলি আদেশ অমান্য করায় সম্প্রতি কয়েকজন কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ (এপিডি) অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্‌ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়নের জন্য একীভূত কোনো পদায়ন নীতিমালা ছিল না। শুধু মাঠ প্রশাসনের কয়েকটি পদের জন্য ছোট একটি মাঠ প্রশাসন পদায়ন নীতিমালা ছিল। ফলে প্রচলিত নিয়ম বা বিভিন্ন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হতো। খসড়া পদায়ন নীতিমালায় প্রতিটি বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে। নতুন অনেক বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। তবে এটি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে অনেক বিষয়ে পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানান তিনি।

নীতিমালা অনুযায়ী, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, দপ্তর, পরিদপ্তর এবং অন্যান্য সংস্থায় বদলিযোগ্য কর্মকর্তা একই স্থানে বা একই পদে তিন বছরের বেশি থাকতে পারবেন না। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রমার্জন করা হলেও তা কোনোক্রমেই একটানা পাঁচ বছরের বেশি হবে না। একইভাবে প্রেষণে নিয়োগেও একই স্থানে বা পদে তিন বছরের বেশি থাকা যাবে না। নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের মধ্যে যারা সহকারী সচিব বা সিনিয়র সহকারী সচিব হবেন তাদের বর্তমান কর্মস্থল থেকে বদলি করে অন্য মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হবে। অন্য ক্যাডারের (পুলভুক্ত) কর্মকর্তাদের বাধ্যতামূলকভাবে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বাইরে পদায়ন করতে হবে। মাঠ প্রশাসনে কমপক্ষে পাঁচ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রশাসন ক্যাডারের কোনো কর্মকর্তাকেই মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করবে না সরকার। কোনো সহকারী কমিশনার ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার সচিবালয়ে পদায়িত থাকলে তাকে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য মাঠ প্রশাসনের পদে পদায়ন করতে হবে।

প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পদায়ন :দক্ষ, সৎ, মেধাবী ও উচ্চতর বিদেশি ডিগ্রিধারী এবং শিক্ষাজীবনে সব পরীক্ষায় ভালো ফলপ্রাপ্তদের প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পদায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। প্রেষণে নিযুক্ত এসব কর্মকর্তার জন্য প্রণোদনা, সরকারি বৃত্তি ও উচ্চতর বিদেশি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। তবে কর্মজীবনে বিভাগীয় মামলায় দণ্ড পেলে ও চাকরিকাল স্থায়ী হওয়াসহ পাঁচ বছর না হলে কোনো কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা যাবে না। কোনো কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে পদায়ন করা হলে তিনি কমপক্ষে তিন বছর সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকবেন।

প্রকল্প ও লিয়েনে পদায়ন :একজন প্রকল্প পরিচালককে (পিডি) একটি প্রকল্প শেষ হওয়ার পরপরই আরেকটি প্রকল্পে পরিচালক হিসেবে পদায়ন করা যাবে না। কোনো নিয়োগের ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রকল্প ব্যবস্থাপনার ওপর মৌলিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা ওই বিষয়ে পড়াশোনা থাকতে হবে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়ন সুষ্ঠু ও গতিশীল করতে সংশ্নিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৫০ কোটি টাকা বা তার বেশি হলেই পূর্ণকালীন পিডি নিয়োগ করতে হবে। এ ছাড়া একজন কর্মকর্তাকে একনাগাড়ে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের জন্য লিয়েন সুবিধা দেওয়া যাবে। যতদিন লিয়েনে থাকবেন লিয়েন শেষে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে ততদিন চাকরি করলে আবারও তার লিয়েনের আবেদন বিবেচনা করা যাবে।

মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখিয়ে কেউ পদায়ন বাতিল চাইলে কিংবা পদায়ন চাইলে বিষয়টি তার এসিআরের ডোশিয়ারে নোট আকারে সংরক্ষিত থাকবে, যা পরবর্তী এসিআর ফরমের স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কোনো কর্মকর্তার লিখিত আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বদলির উদ্যোগ নিলে তাকে মাঠ প্রশাসনের সংশ্নিষ্ট পর্যায়সমূহের মেয়াদ পূরণ করতে হবে এবং তাকে অবশ্যই তিন মাস আগে তার অভিপ্রায়ের কথা জানাতে হবে। ব্যক্তি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কারও অসুস্থতা, স্বামী বা স্ত্রীর চাকরি ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা হবে। কর্মকর্তাদের লিখিত আবেদন বিবেচনার জন্য প্রতি দুই মাসে একটি সভা করে সিদ্ধান্ত দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

মাঠ প্রশাসনে পদায়ন :মাঠ প্রশাসনে পদায়নে চলমান নিয়মের পাশাপাশি আরও নতুন কিছু বিষয় যুক্ত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক পদে কর্মকর্তা বাছাইয়ের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে সভাপতি ও জনপ্রশাসন সচিবকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব বা সচিব, জননিরাপত্তা ও ভূমি সচিব। প্রয়োজনবোধে অন্যান্য সচিব ও বিভাগীয় কমিশনারের সহায়তা নেওয়া যাবে। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, জেলা পরিষদের সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, উপপরিচালক-স্থানীয় সরকার, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার, পরিচালক-স্থানীয় সরকার, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য খসড়া পদায়ন নীতিমালা উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষানবিশ কর্মকর্তাদের চাকরি শুরুর দুই বছরের মধ্যে প্রয়োজনীয় পেশাগত প্রশিক্ষণ ও স্থায়ী করার জন্য সব কাজ সম্পন্ন করতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025150775909424