কোচিং বাণিজ্যে লিপ্ত রাজধানীর সরকারি স্কুলের শিক্ষকরা এবার বদলি ঠেকাতে অভিভাবকদের মাঠে নামিয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (৩০শে জানুয়ারি) গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৮ শিক্ষকের বদলির আদেশ বাতিলের দাবি জানিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন কয়েকজন অভিভাবক। অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো: মাহবুবুর রহমানের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছেন তারা। এর আগে সোমবার (২৯শে জানুয়ারি) অধিদপ্তরের এক আদেশে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সুপারিশে ২৫ জন সরকারি হাইস্কুল শিক্ষককে বিভিন্ন স্থানে বদলি করা । এই ২৫ জনের মধ্যে গবর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাই স্কুলের ৮ শিক্ষকের নাম রয়েছে। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই স্কুলে কর্মরত থেকে কোচিং বাণিজ্যে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের অভিভাবক তাহমিনা আক্তার, শামিমা নাসরিন, ফারহানা চৌধুরী, রুনা নার্গিস,কানিজ ফাতেমা, ছবি রানী রায়সহ প্রায় ত্রিশজনের নাম ও স্বাক্ষরযুক্ত আাবেদন জমা দিয়েছেন মহাপরিচালকের কাছে। মহাপরিচালক তাদের দাবি ধৈর্য সহকারে শোনেন।
নীলুফার জাহান নামের একজন অভিভাবক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘যেসব শিক্ষককে বদলি করা হয়েছে তাঁরা ইংরেজি ও গণিতের। তাঁদের সঙ্গে আমাদের সন্তানদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। নতুন কোনো শিক্ষক এলে তাঁদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সম্পর্ক হতে সময় লাগবে। এতে নবম-দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমরা এসব শিক্ষককে ধরে রাখতে চাই। তবে প্রতিবছর যদি দুই-তিনজন করে বদলি করা হয় তাহলে তা শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব ফেলবে না।’
ফারহানা চৌধুরী নামের একজন অভিভাবক দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, সব মেধাবী শিক্ষককে একসঙ্গে বদলি করে দেয়ায় স্কুল এবং শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে। একসঙ্গে সবাইকে বদলি না করে পর্যায়ক্রমে বদলি করা হলে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হবে না।
অভিভাবকরা আরও বলেন, ১ম থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত দুই শিফটের ছাত্র ও অভিভাবকদের কেউই আশা করেননি একসঙ্গে সেরা সরকারি স্কুলের সুনাম ধন্য এবং অভিজ্ঞ এইসব শিক্ষকদের চলে যেতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিকশিক্ষাকে বলেন, ইচ্ছে করেই এমন আদেশ জারি করা হয়েছে। যাতে দুদককে বোঝানো যায় সব শিক্ষক বদলি করলে অভিভাবকরা ক্ষুব্ধ হবেন। সুতরাং গণবদলি করা যাবে না ইত্যাদি। অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মোস্তফা কামাল ল্যাবরেটরি স্কুলের ভেতরের আবাসিক ভবনে থাকেন গত প্রায় দশ বছর যাবত। বদলির আদেশ বাতিল চেয়ে এইসব অভিভাবকদের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানোর পরামর্শ মোস্তফা কামালেরই! গতরাতে রাজধানীর তেজগাওঁয়ে একটি সরকারি স্কুলের বিতর্কিত প্রধান শিক্ষকের কক্ষে বদলির আদেশাধীন শিক্ষকেরা গোপন বৈঠক করেন বলে জানা যায়।
গত ডিসেম্বরে রাজধানীর আট স্কুলের ৯৭ জন শিক্ষকের তালিকা প্রকাশ করেছিল দুদক। তাদের মধ্যে সরকারি চার স্কুলের ২৪ জন এবং এমপিওভুক্ত চার স্কুলের ৭৩ জন শিক্ষক ছিলেন। এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে বছরের পর বছর একই প্রতিষ্ঠানে থেকে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ করা হয়েছিল। তাই সে সময়ে সরকারি স্কুলের শিক্ষকদের বদলির সুপারিশ করেছিল দুদক। এ ছাড়া দুদকের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদসচিবকেও চিঠি পাঠানো হয়েছিল।
এর আগে গত নভেম্বরে রাজধানীর ২৪ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৫২২ জন শিক্ষককেও বদলির সুপারিশ করেছিল দুদক। সে সময় কমিশনের এক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ওই শিক্ষকরা ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ৩৩ বছর পর্যন্ত এক বিদ্যালয়ে রয়েছেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকতার পাশাপাশি কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছেন। তাঁরা সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অর্থ উপার্জন করছেন।
অারও পড়ুন: কোচিং বাণিজ্যে অভিযুক্ত ২৫ শিক্ষককে বদলি