বদলির নীতিমালায় খুশি নন প্রাথমিক শিক্ষক নেতারা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সম্প্রতি জারি করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক বদলি নীতিমালায় খুশি হতে পারেননি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা। তারা এ নীতিমালার কয়েকটি ধারার ঘোর বিরোধিতা করে বলছেন, ঢাকার বাইরে থেকে বদলি হয়ে মহানগরীর আসার সুযোগ করে দেয়ার ফলে ঢাকার শিক্ষকরা বঞ্চিত হবেন। অন্যদিকে তিন বছরের আগে প্রধান শিক্ষকরা বদলি হতে পারবেন না, নীতিমালার এ বিষয়টিও তারা মেনে নিতে পারছেন না। তারা আগের নীতিমালায় থাকা ১ বছর পর বদলির বিষয়টি বহাল রাখার দাবি করেছেন।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন স্বাক্ষরিত গত ৩০ অক্টোবর সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক বদলি নির্দেশিকা-২০১৮ জারি করা হয়। নীতিমালা জারি হওয়ার পর শিক্ষক নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. বদরুল আলম দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, নতুন নীতিমালায় আমরা খুশি হতে পারিনি। নতুন নীতিমালায় প্রধান শিক্ষকদের ৩ বছরের আগে বদলি হওয়া যাবে না যুক্ত করা হয়েছে। আগের নীতিমালায় ১ বছর পর প্রধান শিক্ষকরা বদলি হতে পারতেন। শূন্য পদ থাকলে প্রধান শিক্ষকরা ১২ মাসই বদলি হতে পারবেন এ বিষয়টি নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

গত বছর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকার সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শিক্ষক বদলি কার্যক্রম স্থগিত থাকলেও নতুন বদলি নীতিমালায় সেটি বাতিল করা হয়েছে। এখন থেকে যোগ্য ও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে শিক্ষকরা ঢাকা মহানগরের যেকোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য আসনে বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ কারণে যেকোনো সময়ে বদলি করা হবে। এ ক্ষেত্রে নিয়োগ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ সুপারিশ করলে তিনি বছরের যেকোনো সময়ে বদলি হাতে পারবেন। নীতিমালার এ অংশটিরও বিরোধিতা করছেন শিক্ষক নেতারা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির নীতি নির্ধারণী কমিটির সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, নতুন নীতিমালায় ঢাকার সিটি কর্পোরেশন এলাকায় শিক্ষক বদলি কার্যক্রম স্থগিতাদেশ বাতিল করার ফলে মহানগরীর শিক্ষকরা বঞ্চিত হবে। ঢাকার বাইরে থেকে কোনো শিক্ষক ডেপুটেশন নিয়ে মহানগরীতে যাতে আসতে না পারে সে বিষয়টি পুনর্বহালের দাবি জানান তিনি।

নীতিমালায় দেখা গেছে, চাকরি পাওয়ার পর নারী শিক্ষকদের বিয়ে হলে স্বামীর কর্মস্থলের পার্শ্ববর্তী স্কুলে বদলি হতে পারবেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষকদের স্থায়ী ঠিকানার পার্শ্ববর্তী এলাকার স্কুলে বদলি করা যাবে। স্বামী মারা গেলে বা বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সুবিধামতো স্থানসহ বিশেষ কোনো কারণে বছরের যে কোনো সময় বদলি হওয়া যাবে। দুর্গম এলাকায় নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা চাকরির মেয়াদ দুই বছর পর নিজ এলাকায় বদলি হতে পারবেন। এসব বদলির জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও বিভাগীয় উপপরিচালকের সুপারিশ প্রয়োজন হবে। সরকারিকরণ অনেক শিক্ষককে ভিন্ন জেলায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে, তারা প্রেষণে নিজ জেলায় ৫ বছর পর বদলি হতে পারবেন। তবে সাধারণ বদলির ক্ষেত্রে বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত আবেদনের সময় নির্ধারিত রয়েছে।

শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশন ও উপজেলাকে একক ইউনিট হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পৌরসভা সংশ্লিষ্ট উপজেলা একক ইউনিট হিসেবে বিবেচিত হবে। সহকারী শিক্ষক পদে চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম ২ বছর পূর্ণ হলে এবং পদ শূন্য থাকলে আন্তঃউপজেলা/থানা, আন্তঃসিটিকর্পোরেশন, আন্তঃজেলা ও আন্তঃবিভাগ বদলি করা যাবে। তবে ওই সময়সীমার মধ্যে একই উপজেলা/থানায় পদ শূন্য হলে বদলি করা হওয়া যাবে। বদলির পর ৩ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত পুনরায় বদলি করা যাবে না।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাধারণ, বৈবাহিক, প্রশাসনিক, সমন্বয়, সংযুক্তি ও বিবিধ বদলির করার কথা বলা হয়েছে। বদলি-সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রতিবছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত করা হবে। শিক্ষকরা নিয়োগের পর বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হলে স্বামী বা স্ত্রী উভয়ের স্থায়ী ঠিকানায় বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন।এক্ষেত্রে বিবাহের কাবিননামা, প্রত্যয়নপত্র, সংশ্লিষ্ট পৌর মেয়র/ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান/ওয়ার্ড কাউন্সিলরের প্রত্যায়নপত্র, স্বামী/স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানার জমির দলির, খতিয়ান, বাড়ির হোল্ডিং নম্বর (সিটি কর্পোরেশন এলাকার জন্য) ও ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের রশিদ আবেদনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। তবে একই পদে একাধিক আবেদনকারী হলে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে বদলির জন্য বিবেচনা করা হবে। স্বামীর কর্মস্থল, স্থায়ী ঠিকানায় যেখানেই হোক নারী শিক্ষকরা সেই স্থানে বদলির জন্য আবেদন করতে পারবেন।

বদলি নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, নদী ভাঙন বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে শিক্ষকের বসতভিটা বিলীন হলে, প্রশাসনিক প্রয়োজনে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার তার নিজ অধিক্ষেত্রে একই উপজেলায় কোনো বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনুপাত শিক্ষকদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করার প্রয়োজনে উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে বদলি করা যাবে। এসব নির্দেশনা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান পার্বত্য জেলার জন্য প্রযোজ্য হবে না। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষকসহ প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা এই নীতিমালার আওতাভুক্ত হবে। তবে এর আলোকে সংশ্লিষ্ট জেলার উপযোগী নির্দেশিক্ষা প্রণয়ন করতে পারবে।

এতে আরও বলা হয়েছে, ডিপিই, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সিটি কর্পোরেশনের ক্ষেত্রে থানা শিক্ষা অফিসারদের সুপারিশক্রমে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকদের বদলি করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030531883239746