প্রতিটি শিক্ষার্থীরই উচ্চশিক্ষা অর্জনের তীব্র ইচ্ছা থাকে। আর এ উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য প্রধান ধাপ হলো বিশ্ববিদ্যালয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের এইচএসসি পাস করে ভর্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে হয় এবং এ প্রতিযোগিতায় লাখ লাখ শিক্ষার্থীকে পেছনে ফেলে উত্তীর্ণ হয়ে ভর্তি হয় প্রাণের ক্যাম্পাসে। নতুন ক্যাম্পাস, নতুন পরিবেশ ও নতুন বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি সবকিছু মিলিয়ে এক অন্যরকম অনুভূতি। নতুন ক্যাম্পাস মানেই হলো নতুন স্বপ্নের হাতছানি। নতুন পরিবেশে এসে কেউ ছোটে পড়াশোনায়, কেউবা ঘোরাঘুরি, আবার অনেকেই অসত্ সঙ্গের বশে পড়ে জড়িয়ে পড়ে অন্ধকার জগত্ অর্থাত্ প্রাণঘাতী মাদক নেশায়। তাইতো বলা হয়ে থাকে, সত্সঙ্গে স্বর্গবাস অসত্ সঙ্গে সর্বনাশ। তারা মনে করে, নেশাই পেশা নেশাই জীবন। পিতামাতা বুকভরা আশা নিয়ে সন্তানকে পাঠিয়েছিল উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য অথচ তাদের সন্তান হচ্ছে মাদকাসক্ত। আর এ খবর হয়তো জানেন না তাদের পিতামাতা। তাদের ধারণা, ছেলে-মেয়েরা ঠিকমত পড়াশোনা করছে। এখান থেকে বের হলে সে প্রতিষ্ঠিত হবে, অর্জন করবে সুনাম ও দেশসেবায় নিয়োজিত হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তবুদ্ধি ও জ্ঞানচর্চার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখানে শিক্ষার্থীরা উচ্চতর গবেষণা ও জ্ঞান সাধনায় লিপ্ত হবে এবং সভ্যতার মানদণ্ডে বিশ্বমানের মানুষ হয়ে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিয়ে দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত হবে। কিন্তু জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানরা যদি মাদকাসক্তে লিপ্ত হয় তাহলে জাতির হাল ধরবে কারা? এমন প্রশ্ন রয়েই যায়। যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করবে, স্বপ্ন পূরণে ঝাঁপিয়ে পড়বে, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দেশ ও জাতির সেবা করবে, সেখানেই তারা কলম-খাতা বইয়ের পরিবর্তে বেছে নিয়েছে মদ, গাঁজা, ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। তারা যেমন নিজেকে ধ্বংস করছে তেমনি পরিবারকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশও নষ্ট করছে তারা। ক্যাম্পাসে দিনদিন মাদকসেবীদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। কম দাম ও সহজলভ্য হওয়ায় হাতের নাগালেই মিলছে এসব মাদকদ্রব্য। মাদকসেবীদের মধ্যে যাদের আর্থিক অবস্থা ভালো তারাই আবার বেশি ঝুঁকছে ইয়াবা বড়ি সেবনে। বর্তমানে শুধু ছেলেরা নয়, মেয়েরাও প্রবেশ করছে এ জগতে। শখের বশে, আড্ডার আসর জমাতে অথবা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে মাদকদ্রব্য সেবন করছে শিক্ষার্থীরা। তবে যে যেভাবেই নেশাগ্রস্ত হোক না কেন যদি মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা না থাকতো তাহলে এত দ্রুত ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারতো না।
তবে চিন্তার বিষয় হলো—ক্যাম্পাসে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয় শিক্ষক-কর্মচারীরাও আশংকাজনকভাবে মাদক সেবনে জড়িয়ে পড়ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের ছাদে, হলের ছাদে বা রুমে অথবা মাঠগুলোতে চলে মাদকের আড্ডা। সেদিন দুপুরবেলা হঠাত্ করেই ছাদে গিয়ে দেখি একদল বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী গোল হয়ে মাদক সেবন করছে। দিন আর রাত নয়—সবসময়ই চলছে এমন কাজ। এসব দেখে প্রশ্ন জাগে বিশ্ববিদ্যালয় কি আসলে মাদকসেবী তৈরির আখড়া? এই যদি হয় মেধাবীদের অবস্থা তাহলে কিভাবে তারা দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে?
ক্যাম্পাসে যদি দ্রুত এই অবস্থার উত্তরণ করা না হয়, তাহলে অচিরেই হুমকির মুখে পড়বে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার পরিবেশ ও জাতি হবে মেধাশূন্য। আগামী দিনের নেতৃত্বে দেশের উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটবে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে রাখতে হবে কার্যকর ভূমিকা। তাই আশা করবো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মাদকমুক্ত হবে। আর মেধাবী শিক্ষার্থীরা পাবে নিরাপদ পরিবেশ এবং পৌঁছাতে পারবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে।
লেখক:শিক্ষার্থী, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যে: ইত্তেফাক