বরিশাল বিভাগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত স্নাতক (সম্মান) স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ২৭ বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের প্রচলিত জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেছেন শিক্ষকরা। একই সঙ্গে ওইসব কলেজগুলো এমপিও ভুক্তিরও দাবি তোলেন তারা। রোববার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বরিশাল রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের এ দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্বাধীনতা অর্নাস-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদের বরিশালের আহ্বায়ক অধ্যাপক মোখলেছুর রহমান মনি।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে উচ্চ শিক্ষা বিস্তারের লক্ষে ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে সরকার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বেসরকারি কলেজ সমূহে অর্নাস-মাস্টার্স কোর্স চালু করে। বিগত ২৬ বছর ধরে অর্নাস-মাস্টার্স কোর্স চালু হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সরকারি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছে সরকার। কিন্তু ওইসব শিক্ষকদের সরকারি জনবল কাঠামোতে অর্ন্তভুক্ত করা হয়নি।
বাংলাদেশে প্রায় ১৭৫টি বেসরকারি কলেজে অর্নাস-মাস্টার্স কোর্স চালু রয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ২৭ টি কলেজ রয়েছে। ওই ২৭ কলেজের প্রায় এক হাজার শিক্ষক পাঠদান করছেন। ওইসব শিক্ষকরা মাত্র দুই হাজার পাঁচ শত টাকা থেকে তিন হাজার টাকা সম্মানী পাচ্ছেন। যা দিয়ে একজন শিক্ষকের পক্ষে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করা অসম্ভব।
লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করা হয়, নবম ও দশম জাতীয় সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সুপারিশ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর আশ্বাসের পরও তাদের দাবি বাস্তবায়নে কেউ এগিয়ে আসেনি। এরপর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন করা হয়। এর প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ওই বছর ২৪ আগস্ট রিটের রায় দিয়ে এমপিওভুক্তির নির্দেশ দেন। রায় অনুযায়ী আবেদনকারীদের জনবল কাঠমোতে অন্তর্ভূক্ত করে এক মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেয়া হয়। হাইকোর্টের ওই নির্দেশনার পর ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৭ মে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে জানানো হয় জনবল কাঠামোতে অন্তর্ভূক্ত না থাকায় ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের এমপিওভুক্ত করা সম্ভব নয়।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী শিক্ষকরা জানান, বেতন ভাতা না পাওয়ায় অনেক বেসরকারি কলেজের শিক্ষকরা খণ্ডকালীন কাজ করে নিজেদের জীবিকা নির্বাহ করছেন। পাশাপাশি কেউ ইজিবাইক চালান, কেউ আবার শ্রমিককের কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। সংবাদ সম্মেলনে এসব শিক্ষকরা দ্রুত এমপিওভুক্ত করে তাদের জীবনের নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি করেছেন। একই সঙ্গে তারা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিক্ষাবীদ প্রফেসর মো. হানিফ, সাবেক শিক্ষক সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি বরিশাল জেলার আহবায়ক মহসিন উল ইসলাম হাবুল, স্বাধীনতা অর্নাস-মাস্টার্স শিক্ষক পরিষদের বরিশাল অঞ্চলের সভাপতি ইউনুস শরীফ, সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী প্রমুখ।