বর্ষসেরা অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক |

অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে গ্লোবাল ফিন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ডে ভূষিত করা হয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিজনেস পত্রিকা ‘দ্য ব্যাংকার’ বিশ্বের সেরা অর্থমন্ত্রী নির্বাচিত করেছে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রীকে।

বৃহস্পতিবার অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় লন্ডন, যুক্তরাজ্যভিত্তিক স্বনামধন্য ফাইন্যানন্সিয়াল টাইমস গ্রুপের মাসিক ম্যাগাজিন ‘দ্য ব্যাংকার’ পত্রিকা ২০২০ সালের জন্য ‘ফিন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার ফর এশিয়া-প্যাসিফিক অ্যান্ড গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড ২০২০’ এ ভূষিত করেছেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। 

‘দ্য ব্যাংকার’ পত্রিকাটি ১৯২৬ সাল হতে প্রকাশিত হচ্ছে, যা পৃথিবীর ব্যাংকিং সেক্টরের ইন্টেলিজেন্স হিসেবে খ্যাত। তারা ‘ফাইন্যান্স মিটিস্টার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কারটি গত ২০০৪ সাল থেকে প্রচলন করেছে।

সারা বিশ্বের অর্থমন্ত্রীদের আর্থিক খাতে গতিশীলতা আনয়নসহ দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন নিশ্চিতকরণে গৃহীত পদক্ষেপ বিবেচনা করে সার্বিক বিবেচনায় এ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এশিয়া-প্যাসিফিক, আমেরিকা, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ, এই পাঁচটি অঞ্চল হতে পাঁচ জন অর্থমন্ত্রী-কে এবং তাদের মধ্য থেকে একজনকে বিশ্বের মধ্যে শ্রেষ্ঠ অর্থমন্ত্রী হিসাবে ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশের কোন অর্থমন্ত্রী প্রথমবারের মতো এই পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছেন। গত বছর এ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার অর্থমন্ত্রী, তার আগের বছর ভারতের সাবেক অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং ২০১৭ সালে আর্জেন্টিনা’র অর্থমন্ত্রী ‘ফাইন্যান্স মিটিস্টার অব দ্য ইয়ার’ হয়েছিলেন।

অর্থমন্ত্রী বিরল এ পুরস্কারটি দেশের সর্বস্তরের সকল জনগণের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশিত পথ অনুসরণ করেই এটি অর্জিত হয়েছে।

২০১৯ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর আ হ ম মুস্তফা কামাল অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব প্রদান করা হয়। তিনি ২০১৪-২০১৮ সময়কালে সফলভাবে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসাবে তার দায়িত্ব পালন করেন। অর্থমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই তিনি চলমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতিকে সচল রাখা ও আর্থিক খাতে শৃংখলা ফিরিয়ে আনয়নে বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন যা অচিরেই বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করাসহ ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনে।

পরপর তিনটি অর্থবছর ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জিত হওয়ার পর গত বছর ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে, যা দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ। বিশ্ব প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব বিস্তারকারী শীর্ষ ২০টি দেশের অন্তর্ভুক্ত বাংলাদেশ। প্রবৃদ্ধি টেকসই করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর দিক-নির্দেশনা অনুযায়ী অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছর অনেকগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।

অর্থমন্ত্রীর নীতি নির্ধারণী অনেকগুলো উদ্যোগের মধ্যে ব্যাংক, আর্থিক খাত ও রাজস্ব খাতের সংস্কার প্রণিধানযোগ্য। প্রথমত ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে উদ্যোগ গ্রহণ, দ্বিতীয়ত রাষ্ট্রায়াত্ত্ব ব্যাংকগুলোর যৌক্তিক কারণে খেলাপি হওয়া ঋণ পুনঃতফসিলকরণের উদ্যোগ গ্রহণ, তৃতীয়ত ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি-দের দেউলিয়া ঘোষণাসহ তাদের সম্পদ ‘এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি’র মাধ্যমে গ্রহণ করে খেলাপি ঋণ আদায়ের উদ্যোগ গ্রহণ।

চতুর্থত ব্যাংকের পরিবর্তে ক্যাপিটাল মার্কেট হতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ অর্থায়নের জন্য পুঁজিবাজারে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও প্রণোদনা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ, পঞ্চমত বন্ড মার্কেট চালুর উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রথমবারের মতো বাংলা টাকা বন্ড লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ-এ তালিকাভুক্তকরণ, ষষ্ঠত কর আদায়ে ভ্যাট আইন চালু করা, কাস্টমস আইন সংস্কার করা এবং আয়কর আদায়ের নেট উপজেলা পর্যন্ত বিস্তারের উদ্যোগ গ্রহণ, সপ্তমত ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্সের পরিমাণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন অর্থমন্ত্রী।

‘দ্য ব্যাংকার’ পত্রিকা কর্তৃক গ্লোবাল ফিন্যান্স মিনিস্টার অব দ্য ইয়ার ভূষিতকরণের বিষয়টি অর্থমন্ত্রী হিসাবে তার এ সকল কার্যক্রমের সঠিকতা ও সাফল্যর একটি স্বীকৃতি। এর ফলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের ভাবমূর্তি আরো উন্নত হবে।

উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠন করে দলটি। গত বছরের ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভায়ও আনা হয় চমক। নতুনদের জায়গা দিতে বাদ দেয়া হয় কয়েকজন হেভিওয়েট মন্ত্রীকে। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার পরিবর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে তিনি পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অর্থমন্ত্রী একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ এবং এই মন্ত্রণালয়ের অধীনে অর্থ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ রয়েছে। একটি দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজনীয় নীতি সংস্কার ও প্রয়োগের দিকটি গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে তত্ত্বীয় জ্ঞানের তুলনায় ব্যবহারিক বা বাস্তব অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন কাউকেই নতুন অর্থমন্ত্রী বানানো জরুরি। এ জন্যই আ হ ম মুস্তফা কামালকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে দেয়া হয়।

আ হ ম মুস্তফা কামাল ১৯৪৭ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও ক্রিকেট সংগঠক। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসন থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। এছাড়া মুস্তফা কামাল ২০১৪-১৫ মেয়াদে আইসিসির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট কামাল এ পর্যন্ত চারবার এমপি হিসেবে জাতীয় সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি চতুর্থ মেয়াদে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য পদে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কুমিল্লা জেলার (দক্ষিণ) আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সচিব পদে আসীন। বর্তমানে তিনি সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

৩০ বছর ধরে ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত থেকে এর উন্নয়নে বিভিন্ন দায়িত্বে অংশ নিয়েছেন। নব্বইর দশকে লোটাস কামাল পেস বোলিং ক্রিকেট একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের প্রথিতযশা ক্রিকেট ক্লাব আবাহনী লিমিটেডের সাবেক পরিচালক মুস্তফা কামাল ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্লাবগুলোর ক্রিকেট কমিটির সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে অংশগ্রহণের পূর্বকালীন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলোয়াড় অন্তর্ভুক্তিতে নেতৃত্ব দেন তিনি। ২০১২-১৩ মৌসুমে ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সব খেলোয়াড়কে বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তির আওতায় নিয়ে আসেন।

আইসিসির সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালনের আগে তিনি সেপ্টেম্বর, ২০০৯ থেকে অক্টোবর, ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দায়িত্ব পালনকালে ২০১২-২০১৪ মেয়াদে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের সহ-সভাপতি হিসেবে মনোনীত হন। তিনি আইসিসির অডিট কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ থেকে ২০১২ মেয়াদকালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) সভাপতি ছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ২৬ মে আইসিসির ১১তম সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন।

২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে আম্পায়ারিংয়ের মানের বিষয়ে তিনি সংক্ষুব্ধ হন ও পদত্যাগের হুমকি দেন। এরপর ২০১৫ সালের ১ এপ্রিল সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ - dainik shiksha পছন্দের স্কুলে বদলির জন্য ‘ভুয়া’ বিবাহবিচ্ছেদ হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা - dainik shiksha হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে - dainik shiksha সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061850547790527