‘অন্য ভাষা শেখার প্রয়োজন আছে, তবে বাংলা ভাষাকে বিসর্জন দিয়ে নয়।’ এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং একটি প্রতিষ্ঠানের হাতে আজ বৃহস্পতিবার একুশে পদক-২০২০ তুলে দিয়ে এ কথা বলেছেন তিনি।
রাজধানীতে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাষা আন্দোলন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম যাতে মুছতে না পারে সে কারণেই গোয়েন্দা প্রতিবেদনের চার খণ্ড বই আকারে প্রকাশ হয়েছে। পঞ্চম খণ্ড প্রকাশ হচ্ছে। মোট চৌদ্দ খণ্ড প্রকাশ করা হবে। কারণ, আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস মানুষের জানা দরকার।’
সরকার প্রধান হিসেবে তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে বারবার বাংলায় ভাষণ দিয়ে যাচ্ছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার পর জাতির পিতা জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে সরকারপ্রধান হিসেবে বারবার বাংলায় ভাষণ দিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতা, আমাদের ভাষার অধিকার, আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের কৃষ্টি, এটাকে সমৃদ্ধ করা, চর্চা করা, এগিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করা আমাদেরই কর্তব্য। আমরা অনেক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যে অর্জন করেছি, তার সুফলটা যেন আমাদের আগামী প্রজন্ম ভোগ করতে পারে, তারা যেন একটা সুন্দর জীবন পায়, সেটাই আমরা চাই।’
পদকপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা একুশে পদক পেয়েছেন তারা আমাদের গুণীজন। তারা স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কীর্তিমান। দেশ-জাতি-ভাষায় তাদের বিশাল অবদান রয়েছে। সেই অবদানের কথা সবসময় আমরা স্মরণ করি। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রাক্কালে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি এই সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। আজ যেসব গুণীজন পুরস্কৃত হয়েছেন, তাদের প্রতিও আন্তরিক অভিনন্দন।’
প্রধানমন্ত্রী বিজয়ী বা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের হাতে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কারটি তুলে দেন। পদক বিজয়ীদের প্রত্যেকে একটি করে স্বর্ণপদক, সনদ এবং ২ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়।
এবার পদক পাওয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিরা হলেন ভাষা আন্দোলনে মরহুম আমিনুল ইসলাম বাদশা, শিল্পকলায় (সংগীত) ডালিয়া নওশিন, শঙ্কর রায় ও মিতা হক, শিল্পকলায় (নৃত্য) মো. গোলাম মোস্তফা খান, অভিনয়ে এস এম মহসীন, চারুকলায় শিল্পী ফরিদা জামান, মুক্তিযুদ্ধে মরহুম হাজী আক্তার সরদার, মরহুম আব্দুল জব্বার ও মরহুম ডা. আ আ ম. মেসবাহহুল হক (বাচ্চু ডাক্তার), সাংবাদিকতায় জাফর ওয়াজেদ (আলী ওয়াজেদ জাফর), গবেষণায় ড. জাহাঙ্গীর আলম ও হাফেজ ক্বারী আল্লামা সৈয়দ মোহাম্মদ ছাইফুর রহমান নিজামী শাহ, শিক্ষায় অধ্যাপক বিকিরণ প্রসাদ বড়ুয়া, অর্থনীতিতে অধ্যাপক শামসুল আলম, সমাজসেবায় সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ভাষা ও সাহিত্যে নুরুন নবী, মরহুম সিকদার আমিনুল হক এবং বেগম নাজমুন নেসা পিয়ারি, চিকিৎসায় অধ্যাপক সায়েবা আখতার। এ ছাড়া গবেষণায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে পদক পেয়েছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট।
এ সময় অন্যদের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক, সাহিত্যিক, কবি, শিক্ষাবিদ, লেখক, সাংবাদিক, বিগত বছরে একুশে পদক বিজয়ী এবং উচ্চপদস্থ বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে ৫ ফেব্রুয়ারি একুশে পদক বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।