প্রচলিত পদ্ধতিতে ধানকে চাল আর চালকে ভাত করে খাবার টেবিলে পৌঁছাতে ১৪ শতাংশই অপচয় হয়। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ধান শুকাতে পোহাতে হয় দুর্ভোগ। এই বিড়ম্বনা থেকে মুক্তি দেবে বিএইউ-এসটিআর ড্রায়ার। ধান শুকানোর এই যন্ত্র উদ্ভাবন করেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি)।
যন্ত্রটিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে মাত্র ৭৪ পয়সা ব্যয়ে এক কেজি ধান শুকানো যায়। আর জ্বালানি হিসাবে ডিজেল ব্যবহারে যন্ত্রটিতে এক কেজি ধান শুকাতে ব্যয় হচ্ছে ৮৭ পয়সা। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে এই ড্রায়ার ব্যবহার করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, এই ড্রায়ারে তিন থেকে চার ঘণ্টায় পাঁচ শ কেজি ধান শুকানো যায়। আর এই যন্ত্রে শুকানো ধানের অঙ্কুরোদগমক্ষমতা অটুট থাকছে প্রায় ৯০ শতাংশ। এখন দরকার যন্ত্রটির ব্যাপকভাবে সম্প্রসারণ।
বাকৃবির সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে গতকাল বুধবার ‘সাসটেইনেবল অ্যাগ্রিকালচার মেকানাইজেশন অ্যান্ড পোস্ট হারভেস্ট প্র্যাকটিস ইন বাংলাদেশের’ বার্ষিক কর্মশালায় কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলম মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে এসব কথা বলেন। অ্যাপ্রোপ্রিয়েট স্কেল ম্যাকানাইজেশন ইনোভেশন হাব (আসমি) বাংলাদেশ, পোস্ট হারভেস্ট লস রিডাকশন ইনোভেশন ল্যাব বাংলাদেশ ফেজ (২) এবং বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ যৌথভাবে এই কর্মশালার আয়োজন করে।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাকৃবির সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম এ সাত্তার মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘আগে বিদেশ থেকে যন্ত্র আনার ক্ষেত্রে এর গুণগত মান পরীক্ষা করা হতো না। এখন এসব বিষয়ের দিকে আমরা নজর রাখছি। দেশের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতেই যন্ত্র উদ্ভাবন করা হচ্ছে। এতে আমাদের কৃষি লাভজনক হয়েছে, কমেছে যন্ত্র আমদানিতে নির্ভরশীলতা। আবার দেশে কৃষি-প্রযুক্তি ছড়ানোর আগে এর টেকসই ও স্থায়িত্ব এবং উৎপাদন খরচ কিভাবে কমানো যায় সে বিষয়গুলো মাথায় রাখা জরুরি।’ উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলো ব্যাপকভাবে কৃষকের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সরকারের ভর্তুকি যেন সঠিকভাবে পৌঁছায় সেদিকে নজর রাখার তাগিদ দেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুত্ফুল হাসান। এতে সভাপতিত্ব করেন কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নুরুল হক। পরে একটি টেকনিক্যাল সেশনের আয়োজন করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. বি কে বালার সভাপতিত্বে এই আয়োজনে আলোচক ছিলেন বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সাত্তার, অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আওয়াল ও বিএডিসির মুখ্য প্রকৌশলী মো লুৎফুর রহমান।