বায়ুদূষণের দায়ে জেল-জরিমানার বিধান আসছে

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে থাকায় তা ভাবিয়ে তুলেছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের। ফলে বায়ুদূষণের মাত্রায় লাগাম টানতে দেশে প্রথমবারের মতো একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। ‘নির্মল বায়ু আইন’ শিরোনামের ওই আইনের মাধ্যমে বায়ুদূষণকারীদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে যেতে চায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আরিফুর রহমান।

খসড়া আইন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বায়ুদূষণের অপরাধ প্রমাণিত হলে দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা অনূর্ধ্ব দুই লাখ টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ওই আইন পাস হলে প্রথমবার শাস্তি ভোগ করার পর আবার বায়ুদূষণ করা হলে দুই থেকে দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া হবে। জরিমানা গুণতে হবে দুই থেকে দশ লাখ টাকার মধ্যে। কিংবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে। তৃতীয়বার একই অপরাধ করলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত, বিশেষ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ও পরিবেশ আদালত এই তিনটি আদালতে বায়ুদূষণের মামলা চলবে।

খসড়া আইনটি তৈরি করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আইনটি বাস্তবায়ন করা কতটা সহজ হবে জানতে চাইলে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশে এমন অসংখ্য আইন আছে। আইনে কঠোর শাস্তির কথাও বলা আছে। কিন্তু আইন বাস্তবায়িত হয় না। আমরা ভারত, ভিয়েতনামসহ কয়েকটি দেশের বায়ুদূষণ আইন পর্যালোচনা করে বাংলাদেশের বাস্তবতায় নির্মল বায়ু আইনটির খসড়া তৈরি করে দিয়েছি। দেখার বিষয় আইনটির যথাযথ বাস্তবায়ন হয় কি না। আমরা চাই, যারা বায়ুদূষণ করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক। সেটা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারের।’

বায়ুদূষণের অপরাধী চিহ্নিত করার উপায় সম্পর্কে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, আইনের মাধ্যমে সরকার প্রথমে বায়ুদূষণের মানমাত্রা ঠিক করে দেবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সরকারের বেঁধে দেয়া মানমাত্রা অতিক্রম করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আইনটি পাস হওয়ার এক বছরের মধ্যে সরকার বায়ুদূষণের মানমাত্রা, এর পদ্ধতি ও মানদণ্ড নির্ধারণ করে দেবে। সরকারি সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তি যেই হোক যারা নির্ধারিত মানমাত্রার চেয়ে বেশি বায়ুদূষণ করবে, তাদের একটি তালিকা করা হবে। সেই তালিকা ধরে শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।

জানা গেছে, খসড়া আইনটি নিয়ে গত শনিবার দিনভর বৈঠক হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরে। খসড়াটি পরিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে সংসদীয় কমিটির হাত হয়ে পাঠানো হবে মন্ত্রিসভায়। তার আগে বিভিন্ন অংশীজনের মতামত নেয়া হবে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বেশ কয়েকটি দিক বিবেচনা করে অর্থদণ্ড কিংবা কারাদণ্ড দেয়ার বিধান রাখা হয়েছে। প্রথমেই দেখা হবে ওই ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানের বায়ুদূষণের পেছনে অবহেলা ও অসাবধানতার মাত্রা কতটা। জনস্বাস্থ্য, জনকল্যাণ ও পরিবেশের জন্য ওই অপরাধ কতটা প্রভাব রাখছে এসব দিক বিবেচনা করে শাস্তি দেয়া হবে। তবে দ্বিতীয়বার শাস্তি পাওয়ার পরও যদি কেউ বায়ুদূষণ করে তাহলে তার ওই শিল্প-কারখানা কিংবা প্রকল্প বন্ধ করে দেয়া হবে।

বাংলাদেশে কোন কোন খাত থেকে বায়ু দূষণ হয় এবং কাদের এই আইনের আওতায় আনা হবে, সে বিষয়ে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র, ইটভাটা, সিমেন্ট, বয়লার, ইস্পাত, লৌহ ও ঢালাই, অ্যালুমিনিয়াম, কাগজ, চামড়া, ওষুধ, সার, ব্যাটারি, রাসায়নিক, সিরামিক, কাচ, বর্জ্য, চুল্লি, কাঠ, কয়লা, জাহাজভাঙা শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের এই আইনের আওতায় আনা হবে। এ ছাড়া যানবাহন, ইঞ্জিন শক্তি, অভ্যন্তরীণ নৌযানের সঙ্গে যুক্তদেরও এই আইনের আওতায় আনা হবে।

এই আইনের আওতায় কোনো কোম্পানি নির্ধারিত মানমাত্রার বেশি বায়ুদূষণ করলে অপরাধটি সংঘটনের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত সব ব্যক্তি দায়ী হবে। তাদের বিরুদ্ধে যথারীতি আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে কেউ যদি প্রমাণ করতে পারেন, অপরাধটি তাঁর অজ্ঞাতসারে হয়েছে বা অপরাধটি না হওয়ার জন্য তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন, তাহলে তাঁকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে না। কোনো শিল্প-কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে সরকারের বেঁধে দেয়া মানমাত্রার চেয়ে বেশি পাওয়া যায় এবং সেখানে যদি প্রমাণিত হয় ওই অপরাধটি ওই কোম্পানির পরিচালক, ব্যবস্থাপক ও সচিবের সম্মতি এবং যোগসাজশে হয়েছে, তাহলে তাঁকে যথারীতি আইনি প্রক্রিয়ায় শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। সরকারি সংস্থার বেলায়ও একই বিধান রাখা হয়েছে।

সার্বিক আইনের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক জিয়াউল হক বলেন, বিদ্যমান পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো ধারা নেই। শুধু বলা আছে, কেউ বায়ুদূষণ করলে পরিবেশ অধিদপ্তর ওই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বায়ুদূষণ বন্ধ করতে লিখিত নির্দেশ দিতে পারে। কিন্তু সরকার চায় একটা শক্ত আইন। যে আইনে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে শাস্তির আওতায় আনা যায়। আইনটি পাস হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের ক্ষমতা আরও বাড়বে।

খসড়া আইনটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, আইনের মাধ্যমে একটি বায়ুমান উন্নয়ন তহবিল গঠন করবে সরকার। সে তহবিলে টাকা আসবে সরকারের বাজেট অনুদান, বায়ুদূষণকারী থেকে পাওয়া জরিমানা, আন্তর্জাতিক উৎস থেকে পাওয়া অনুদান থেকে। এই তহবিলের টাকা দিয়ে অভিযান, মামলা পরিচালনা করা হবে। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি বায়ুদূষণ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ, বায়ুর গুণমান রক্ষা ও উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখে তাহলে সরকার তাকে পুরস্কারের ব্যবস্থা করবে। নির্মল বায়ু আইনে মোট ৩২টি ধারা আছে। এর মধ্যে ৩১ ধারা নিয়ে আপত্তি আছে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর।

জানা যায়, রাজধানীতে বছরজুড়েই খোঁড়াখুঁড়ি করে ওয়াসাসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। এতে বায়ুদূষণ হয় মারাত্মকভাবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৮ শতাংশ বায়ু দূষণ হয় ইটভাটা থেকে, যেসব ইটভাটা পরিচালনা করেন রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। ফলে নতুন আইন পাস হলেও এটি কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় আছে পরিবেশবাদীদের মধ্যে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.005748987197876