বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হচ্ছে প্রাইমারি শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু করা হচ্ছে 'বায়োমেট্রিক হাজিরা'। যন্ত্রের সাহায্যে আঙুলের ছাপের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের হাজিরা নিশ্চিত করা হবে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন এ হাজিরার বিষয়টি। চলতি মাসের মধ্যে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে হাজিরা যন্ত্র (ডিভাইস) বসাতে হবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

রাজধানী ঢাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ শহরের নামী মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজে অনেক আগেই বায়োমেট্রিক হাজিরা চালু হয়েছে অনেক আগেই।  

সারাদেশের ৬৫ হাজার ৬০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক রয়েছেন তিন লাখ ২২ হাজার ৭৬৬ জন। তাদের প্রত্যেককে এই ডিজিটাল হাজিরার আওতায় আনা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষকদের সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে বাধ্যতামূলকভাবে উপস্থিত থাকতে হয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, 'শিক্ষকদের জবাবদিহির মধ্যে এনে বিদ্যালয়ে শতভাগ পাঠদান নিশ্চিত করতে চাই। এ জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। স্লিপের টাকা থেকে স্কুল কর্তৃপক্ষই ডিভাইস কিনবে। তারা নিজ নিজ বিদ্যালয়ে তা বসাবেন। উপজেলা পর্যায়ের শিক্ষা কর্মকর্তারা এটি দেখভাল করবেন।' তিনি বলেন, 'অনেক উপজেলায় এরই মধ্যে ডিভাইসটি কেনা হয়েছে, অনেক উপজেলায় কেনা হচ্ছে। এটি বসানোর মাধ্যমে নিশ্চিত হবে যে কবে কোন তারিখে কোন শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। কোন শিক্ষক বিলম্বে বিদ্যালয়ে হাজির হন, সেটিও জানা যাবে। সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে এ সিদ্ধান্ত ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।'

জানা যায়, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌসুমভেদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিয়ে নানা প্রশ্ন ওঠে। হাওর অঞ্চলে ধান কাটার সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক বিদ্যালয়ে গরহাজির থাকেন। আবার পার্বত্য অঞ্চলে জুমচাষের সিজনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কমে যায় বিদ্যালয়ে। এর বাইরে সামগ্রিকভাবে সারাদেশে অনেক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা বিদ্যালয়ে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে চলে যান। অনেকে দপ্তরির মাধ্যমে হাজিরা খাতা বাড়িতে এনে সই করেন। অনেকে আবার দিনের পর দিন বিদ্যালয়ে না গিয়ে ভাড়া করা শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রক্সি দিয়ে (প্যারা শিক্ষক বলা হয়) ক্লাস করিয়ে থাকেন। এসব অনিয়ম বন্ধ করতেই মূলত বায়োমেট্রিক হাজিরা চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

সূত্র জানায়, গত মার্চে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পর ২৮ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে চিঠি দিয়ে সব জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাদের তা জানিয়ে দেওয়া হয়। অধিদপ্তরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মো. এনামুল কাদের খান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়কে তাদের স্লিপ (School Level Improvement Plan- বিদ্যালয় পর্যায়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা) ফান্ড থেকে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মধ্যে এই বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। বিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ দায়িত্বে এই মেশিন আগামী জুনের মধ্যেই কিনবে।

একাধিক প্রধান শিক্ষক জানান, তারা সরকারি আদেশটি জেনেছেন। যন্ত্র কেনার উদ্যোগ নিয়েছেন। তাদের বিদ্যালয়ে তা বসাবেন। ঝালকাঠির রাজাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিক হাবিবুর রহমান জানান, 'বিদ্যালয় সংস্কারের টাকা থেকে এ ডিভাইস কেনার বরাদ্দ পেয়েছি। বিদ্যালয়ে এখন রমজান ও ঈদের ছুটি চলছে। ঈদের পর যন্ত্রটি কিনে লাগাব।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, এ যন্ত্র কেনার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সরকারদলীয় রাজনৈতিক কর্মী পরিচয়ে স্থানীয় পর্যায়ে একশ্রেণির সিন্ডিকেটের উদ্ভব হয়েছে। তারা কমদামে নিম্নমানের যন্ত্র কিনে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেশি দামে বিদ্যালয়গুলোকে গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা আরও জানান, এ যন্ত্রের বাস্তব কিছু সমস্যাও আছে। মফস্বল বা গ্রামাঞ্চলে অবস্থিত বিদ্যালয় যেখানে ইন্টারনেট নেই এবং বিদ্যুৎ থাকে না বা লোডশেডিং, সেখানে বায়োমেট্রিক হাজিরা খুব বেশি কার্যকর হবে না। তারা বলেন, আর বর্তমানে বাজারে যেসব বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন পাওয়া যায়, তার বেশিরভাগই চায়না থেকে আমদানি করা নিম্নমানের। এগুলো খুব বেশি দিন কাজ করবে বলে মনে হয় না। এতে সরকারের অর্থ অপচয়ের পাশাপাশি সিন্ডিকেটের কারণে আর্থিক দুর্নীতির আশঙ্কা রয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম আল হোসেন বলেন, 'দেশের বেশিরভাগ এলাকাতেই এখন বিদ্যুৎ আছে। বিদ্যুতের সমস্যা খুব বেশি জায়গায় নেই। আর স্কুল কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই দেখেশুনে ভালো যন্ত্রটিই কিনবে।' 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037529468536377