বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে শিক্ষক পরিষদ গঠন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ব্রজমোহন কলেজের ইতিহাসে এবারই প্রথম নির্বাচন না করে অধ্যক্ষ তাঁর নির্বাহী আদেশে ওই পরিষদ গঠন করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। কনিষ্ঠ শিক্ষককে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক করায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা। অধ্যক্ষর নির্বাহী আদেশে করা শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক হয়েছেন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আল আমিন। তারা সবাই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তা ও শিক্ষক।
ব্রজমোহন কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ও ইতিহাস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক গোলাম মুর্তজা অভিযোগ করেন, ব্রজমোহন কলেজের ইতিহাসে এবারই প্রথম কোনও সহকারী অধ্যাপককে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিলে কোনও সিদ্ধান্তও হয়নি। এমনকি অনানুষ্ঠানিকভাবেও আমাদের জানানো হয়নি। হঠাৎ জরুরি সভা ডেকে তিনি (অধ্যক্ষ) কমিটি ঘোষণা দেন। নির্বাচন না দিয়ে প্রহসনমূলকভাবে অধ্যক্ষ নির্বাহী ক্ষমতাবলে কমিটি করেছেন।
ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মোর্শেদ দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, একাডেমিক কাউন্সিলে সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হচ্ছেন বর্তমান সম্পাদক। জ্যেষ্ঠদের পাশ কাটিয়ে তাকে শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক করায় জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
বর্তমান কমিটির সদস্য করা হয়েছে সম্পাদকের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়ে থাকা হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তপন কুমার সাহাকে। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ ঘোষিত কমিটিতে আমাকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু আমার কাছ থেকে এব্যাপারে কোন অনুমতিও নেওয়া হয়নি। বিষয়টি জানার পর অধ্যক্ষর কাছে গিয়ে আমার নাম বাদ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি। তিনি আরো বলেন, ব্রজমোহন কলেজে এধরণের কোনও কমিটি আগে করা হয়নি।
গত ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষক পরিষদের গঠনতন্ত্র প্রণয়নের জন্য একটি আহব্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির আহ্বায়ক করা হয় কলেজের তখনকার ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক এবং বর্তমানে পিরোজপুর সরকারি সোরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ড. গোলাম কিবরিয়াকে। তিনি দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, আমাকে গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছিল। গঠনতন্ত্রের খসড়াও করেছিলাম। কিন্তু গত ২৭ ডিসেম্বর আমি বর্তমান কর্মক্ষেত্রে যোগদান করায় ওই খসড়া গঠনতন্ত্র জমা দেওয়া হয়নি। গত ২০০৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত আমি ব্রজমোহন কলেজে শিক্ষকতা করেছি। এই সময়ের মধ্যে কোনও সহকারী অধ্যাপক শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক নির্বাচিত হননি। সহযোগী অধ্যাপকরাই সম্পাদক হয়েছেন।
বর্তমান পরিষদের সম্পাদক মো. আল আমিন দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, কনিষ্ঠরা বিশেষ করে সহকারী অধ্যাপকরা সম্পাদক হতে পারবেন না এমন কোন নিয়ম ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষক পরিষদের গঠনতন্ত্রে নেই। বর্তমান গঠনতন্ত্রে সেটা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। তা ছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কনিষ্ঠরা শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক আছেন। আমার বয়স ৩৪ বছর। গত ১৫ বছর ধরে আমি ক্যাডার হিসেবে চাকরি করছি। কলেজ কর্তৃপক্ষ যেভাবে ভালো মনে করেছেন সেভাবেই আমাকে সম্পাদক নির্বাচন করেছেন। শিক্ষকদের ক্ষোভ থাকলে সেটা তারাই ভালো বলতে পারবেন। নির্বাচন ছাড়া সম্পাদক করার কারণ কি জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তারপর কেন নির্বাহী আদেশে হয়েছে সেটা অধ্যক্ষ বলতে পারবেন।
এ ব্যাপারে ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ মো. শফিকুর রহমান শিকদার দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, কমিটি করার জন্য গঠনতন্ত্র করা হয়েছে। কমিটির সম্পাক আল আমিনের পক্ষে ৯৩ জন শিক্ষকের স্বাক্ষর আছে। তাই তাকে সম্পাদক করা হয়েছে। বেশিরভাগ শিক্ষক সম্পাদকের পক্ষে থাকার পরও কেন নির্বাচন দেওয়া যায়নি। এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যক্ষ বলেন, নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন নিয়ে দুইটি গ্রুপ হওয়ায় নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। তাই নির্বাহী আদেশে ওই কমিটি গঠন করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক দৈনিকশিক্ষা ডটকমকে বলেন, অধ্যক্ষ সঠিক বলেননি। এক পক্ষে যদি ৯৩ জন শিক্ষক থাকেন তাহলে তো নির্বাচন দিয়েই তাকে সম্পাদক করা যেত। বাস্তবে ওইসব শিক্ষকদের চাপ দিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে।