দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে ফেনীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার বিচার। আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর গ্রহণ করা হয়েছে সকল সাক্ষীর সাক্ষ্য। সম্পন্ন হয়েছে জেরাও। আগামীকাল রোববার ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৩৪২ ধারায় সকল আসামিকে পরীক্ষা করবে আদালত। তবে শুরু থেকেই মামলার বিচার বিলম্বিত করার সকল প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আসামিপক্ষ। এখনো সেই প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছে আসামিপক্ষ।
জানা গেছে, বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টার মধ্যেও মাত্র ৪০ কার্যদিবসে ৯১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদ। এখন আসামি পরীক্ষা সম্পন্ন হলে মামলাটির যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য দিন ধার্য হবে। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর চলতি মাসেই মামলাটির বিচার শেষ হতে পারে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। এর আগে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে দুই শিশু রাজন ও রাকিব হত্যা মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির এক অনন্য নজির সৃষ্টি করে দেশের বিচার বিভাগ। তখন শেখ শামিউল আলম রাজন হত্যা মামলা ১৪ কার্যদিবস এবং রাকিব হত্যার বিচার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে শেষ করা হয়। আইন বিশেষজ্ঞরা জানান, বিচারক, আইনজীবী, পুলিশ এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চাইলে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যে যায় এটি তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। আমরা নুসরাত হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির ক্ষেত্রেও সেই প্রচেষ্টা দেখতে পাচ্ছি।
এ প্রসঙ্গে নুসরাত হত্যা মামলায় বাদী পক্ষের আইনজীবী মো. শাহজাহান সাজু বলেন, রোববার আসামিদের পরীক্ষার জন্য দিন ধার্য রয়েছে। তবে আসামি পক্ষ প্রতিদিনই নতুন নতুন দরখাস্ত দিয়ে মামলার বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা আইনি ব্যাখ্যার মাধ্যমে সেই সমস্ত দরখাস্তের জবাব দিচ্ছি। যাতে মামলার বিচার কোনোভাবেই তারা বিলম্বিত করতে না পারে। তিনি বলেন, রায় কবে হবে এটা সম্পূর্ণ আদালতের বিষয়। তবে চলতি মাসে রায় হতে পারে বলে আশা করছি।
ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর ফরিদ আহমেদ হাজারী বলেন, সাক্ষীদের পুনরায় জেরার নামে বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে আসামিপক্ষ। শুনেছি আসামিরা সাফাই সাক্ষী দেবে। যদি সাফাই সাক্ষী দেয় তাহলে মামলাটি নিষ্পত্তি হতে হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। বিচার বিলম্ব চেষ্টার অভিযোগ অস্বীকার করে আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াসউদ্দিন নান্নু বলেন, তাদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। কারণ এত অল্প সময়ে ৯১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করে মামলাটি এ পর্যায়ে আসা নজিরবিহীন। সাফাই সাক্ষী দেবেন কী না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ পাঁচ জন আসামির পক্ষে আমি মামলা পরিচালনা করছি। আমার কোনো মক্কেল সাফাই সাক্ষী দেবে না। তবে অন্যদের কথা বলতে পারছি না।
ফেনীর সোনাগাজী সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় গত ৬ এপ্রিল নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। এ ঘটনায় সারাদেশে নিন্দার ঝড় ওঠে। নুসরাত হত্যার বিচার চেয়ে রাজপথে মানববন্ধন করে সাধারণ জনগণ। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করলে তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের কাছে। এরপরই দ্রুত গ্রেফতার হতে থাকে আসামিরা। অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে দ্রুত দাখিল করা হয় চার্জশিট। অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার পর গত ২০ জুন ট্রাইব্যুনাল সকল আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৪(১)/৩০ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন। ২৭ জুন বাদী সাক্ষ্য গ্রহণের মধ্যদিয়ে শুরু হয় বিচার।
এ হত্যাকাণ্ডের পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বেশিরভাগ মানুষ নুসরাত হত্যার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারা সবাই চান এই মামলার বিচার দ্রুত সম্পন্ন হোক।’