ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়ার এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠটি ব্যবহূত হয় ঈদগাহ হিসেবেও। তবে এক বছর ধরে লেবুর পাইকারি হাট বসার কারণে মাঠে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে হাটে আসা যানবাহনের কারণে বেহাল হয়ে পড়ায় মাঠটিতে আসন্ন ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠান নিয়েও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ফুলবাড়িয়ার অন্তত ২০টি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লেবুর চাষ হয়। পার্শ্ববর্তী সখীপুর, ভালুকা ও ঘাটাইলেরও বেশকিছু গ্রামের মানুষ লেবু আবাদ করেন।
এসব গ্রামে উৎপাদিত লেবু বিক্রির জন্য এ হাটে আনা হয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লেবু কিনতে আসেন পাইকাররা। পুরো মাঠজুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয় ভ্যান, রিকশা, পিকআপ ও ট্রাক। এসব যানবাহনের কারণে মাঠটি আর খেলাধুলার উপযোগী নেই। মূলত হাটের ময়লা-আবর্জনা ও কাদার কারণে এটিকে আর মাঠ বলেই মনে হবে না।
তারা আরো জানান, সোমবার ও বৃহস্পতিবার সপ্তাহে দুদিন এনায়েতপুর বাজারের নির্ধারিত স্থানে হাট বসে। তবে বিদ্যালয়ের মাঠটিতে লেবুর হাট বসছে প্রতিদিনই। যে কারণে দিন দিন বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে। বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচাকেনা চলার কারণে খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া ভারী ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচলের কারণে মাঠটি একেবারে বেহাল হয়ে পড়েছে। বৃষ্টি হলেই পুরো মাঠ কাদা ও পানিতে একাকার হয়ে যায়।
এ অবস্থায় ঈদুল ফিতরের ঈদের নামাজ এ মাঠে আদায় করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে। ফলে তারা দ্রুত ঈদের আগেই মাঠ থেকে লেবুর হাট সরিয়ে এনায়েতপুর বাজারের নির্ধারিত স্থানে বসানোর দাবি জানিয়েছেন।
বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, এক বছর ধরে হাট বসার কারণে তাদের খেলাধুলা বন্ধ। কয়েক দিন আগে একটি ক্লাবের ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হলেও শেষ পর্যন্ত হাটের কারণে খেলা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ রয়েছে এনায়েতপুর বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি দৌলত আলী দুলু স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তার ইচ্ছেতেই এখানে প্রতিদিন হাট বসছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দৌলত আলী দুলু বলেন, ‘বাজারে জায়গা না থাকায় খেলার মাঠে লেবুর হাট বসানো হয়েছে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সামনে রাস্তার কাজ চলছে। কাজ শেষ হলেই বাজার রাস্তায় নিয়ে আসব।’
এনায়েতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফিরোজা খাতুন বলেন, ‘আমি গত মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে এখানে যোগদান করেছি। বিদ্যালয় মাঠে প্রতিদিন বিকালে লেবুর হাট বসার বিষয়টি আমি ম্যানেজিং কমিটির সভায় জানিয়েছি। সভাপতি ইজারাদারের সঙ্গে কথা বলে হাট সরানোর জন্য চেষ্টা করছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর জরুরি। আমি সীমানা প্রাচীর তৈরির জন্যও অনুরোধ করব।’
কথা হলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার জীবন আরা বেগম জানান, এনায়েতপুরে বিদ্যালয় মাঠে হাটের বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লীরা তরফদারও।
কথা হলে এনায়েতপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. কবির হোসেন তালুকদার বলেন, ‘মাঠে যারা লেবুর হাট বসিয়েছে, স্থানীয়ভাবে তারা প্রভাবশালী। খেলার মাঠটি দখলমুক্ত করার ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে । তারা এ ব্যাপারে নোট লিখে নিয়ে গেছেন।’