ঝালকাঠি কেবিআর রাজমহল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরনো চেহারা গত ৯৫ বছরেও বদলায়নি। বিদ্যালয় ভবন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। ছাদ চুইয়ে বৃষ্টির পানি শ্রেণিকক্ষে পড়ছে। ভাঙা জানালা দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকছে। কখনো শিক্ষার্থীদের মাথায় চুন-সুরকি খসে পড়ছে। এসব কারণে বিদ্যালয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। তবে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি টিকিয়ে রাখতে নতুন ভবন নির্মাণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
জানা যায়, সদর উপজেলার কেওড়া ইউনিয়নের শিক্ষাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করে তিনটি গ্রামের মধ্যস্থানে ১৯২৩ সালে তৎকালীন জমিদার যদুনাথ দত্তবণিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়ের জন্য স্থানীয় সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত দুই একর জমি দান করেন। তিনটি গ্রামের (কেওড়া, বেলদা খান ও রনমতি) প্রথম অক্ষর দিয়ে এর নামকরণ হয় কেবিআর রাজমহল ইনস্টিটিউশন। ওই সময় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিদ্যালয়টি রেজিস্ট্রেশন পায়।
আটটি কক্ষে শুরু হয় প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরপরই প্রতিষ্ঠাতা ও জমির দাতারা ভারতে চলে যান। ফলে অর্থনৈতিক দীনতায় পড়ে বিদ্যালয়টি। বন্ধ হয়ে যায় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠদান। যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকায় কমে যায় শিক্ষার্থীর সংখ্যাও। পুরনো ভবনের আটটি কক্ষের মধ্যে তিনটিতে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত কোনো রকম পাঠদান চলে। অন্য একটি কক্ষ লাইব্রেরি ও অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। অন্য চারটি কক্ষ ধীরে ধীরে পরিত্যক্ত হয়ে যায়।
১৯৭৮ সালে ইনস্টিটিউট থেকে রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় কেবিআর রাজমহল বিদ্যালয়। ২০১৩ সালে এটিকে জাতীয় করা হয়। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে কোনো রকমে টিকে থাকলেও কখনো সংস্কার করা হয়নি বিদ্যালয়ের ভবন। চুন-সুরকির ওপর রং করেই পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান ইমাম বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এর দৈন্যদশা কর্তৃপক্ষের চোখে পড়ছে না। ভবনটি গত বছর পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।’
এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক রুমা আক্তার বলেন, ‘যেকোনো সময় ছাদ ভেঙে মাথায় পড়তে পারে। তাই আমি আমার মেয়েকে নিয়ে সব সময় দুশ্চিন্তায় থাকি।’
স্থানীয় মসজিদের ইমাম আবদুল মজিদ হাওলাদার বলেন, ‘বিদ্যালয়টির করুণ অবস্থার কারণে অভিভাবকরা এখানে সন্তানদের ভর্তি করতে চান না।’
ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. ছাইয়াদুজ্জামান বলেন, ‘নতুন ভবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে নতুন ভবন দেওয়া হবে।’
ঝালকাঠি সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম হারুন অর রশীদ বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে একসময় ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হতো। দীর্ঘদিন ধরে তা বন্ধ রয়েছে। আবারও এটি চালু করতে হলে একটি পরিচালনা কমিটি করতে হবে। ওই কমিটি কাগজপত্রসহ বোর্ডে আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিতে পারে।’