রাজধানীর নাজিমুদ্দীন রোডের পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি ভবনের ছাদে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের এক ছাত্র মারা গেছেন। তাঁর নাম বিজয় সৌরভ (২৫)। ওই ঘটনায় আহত হয়েছেন কারাগারে দায়িত্বরত পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) কনস্টেবল মো. সরোয়ার। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের পাশের তিনতলা অনুসন্ধান ভবনের ছাদে এ ঘটনা ঘটে।
প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ জানায়, নিহত বিজয়ের বাবার নাম মোজাম্মেল হক। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর বেলাব থানার ভাবলায়। বিজয় এসবির কনস্টেবল সরোয়ারের বন্ধু ছিলেন। সরোয়ারের সঙ্গে কারাগারের ছাদে গেলে তিনি বিদুৎস্পৃষ্ট হন। বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন সরোয়ার। বিজয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে নেওয়া হয়েছে। আহত এসবি সদস্যের চিকিৎসা চলছে একই হাসপাতালে। তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।
নিহত বিজয়ের ভাই শুভ বলেন, তাঁর ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র। ঘটনার খবর পেয়ে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে তিনি ঢাকায় এসেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত তিনি ঢাকা মেডিক্যালে পৌঁছাননি। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ টি এম গোলাম রাব্বানী বলেন, বিজয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কি না তাঁর জানা নেই। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী রাজারবাগ পুলিশ লাইনের কনস্টেবল নুরুল আমিন বলেন, ‘আমার ডিউটি ছিল কারাগারের একটি ভবনের গেটে। দুপুরে হঠাৎ অনুসন্ধান ভবনের ছাদে এক যুবককে বিদ্যুতের তারে আটকাতে দেখে মাইকিং করে তাঁকে উদ্ধারের ঘোষণা দিই। পরে তাঁকে উদ্ধার করা হলেও বাঁচানো যায়নি।’
এই কারাগারেই একটি ভবনের নিচতলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে। এ ছাড়া নানা কারণে এখনো পুরনো এই কারাগারের গুরুত্ব রয়েছে। বিভিন্ন কাজে অনেকেই এই কারাগারের অনুসন্ধান ভবনে নাম নিবন্ধন করতে আসেন।
একজন তরুণের এভাবে মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল কারাগারে কিছুটা আতঙ্ক ছড়ায়। ঘটনাটি তিনতলা ভবনের ছাদের ওপর হওয়ায় দূর থেকে
সাধারণ মানুষও তা দেখতে পায়। স্পর্শকাতর এলাকার কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্যেও এক তরুণের কারাগারের ছাদে ওঠা ও বিদ্যুতের তারে জড়ানোর ঘটনায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে কি না এর তদন্ত চলছে বলে কারা সূত্র জানিয়েছে।
লালবাগ জোনের পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) ফারুক আহমেদ জানান, খালেদা জিয়ার মামলার শুনানি চলায় সকাল থেকেই পুরো এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তা ছিল। কনস্টেবল সরোয়ারের দায়িত্ব ছিল অনুসন্ধান ভবনের ছাদ থেকে পরিস্থতি পর্যবেক্ষণ করা। এসবির মেডিক্যাল জোনের একজন সদস্য জানান, দুপুরে আদালতে শুনানির বিরতিতে দেখা যায়, তৃতীয় তলার ছাদে বিদ্যুতের তারের সঙ্গে এক যুবকের বাঁ হাত আটকে আছে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের হেল্প ডেস্কে ফোন করে সহযোগিতা নেওয়া হয়।
সূত্র জানায়, ফায়ার সার্ভিস আসার আগেই পাশের ভবনের ছাদ থেকে একটি শুকনো বাঁশের টুকরা দিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হয়। বাঁশের ওই টুকরা ব্যবহার করেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট দুজনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুপুর আড়াইটায় ওই ছাত্রকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসক।
কারা সূত্র জানায়, ওই ভবনের ছাদের পাশে ৪৪০ ভোল্টেজের তার রয়েছে। ওই ছাত্র ও এসবি সদস্য ছাদে ওই তারের পাশে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলেন।