আন্তর্জাতিক দরপত্রের কারণে দেশীয় মুদ্রণ শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, পাশাপাশি সরকারও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে-এমন দাবি করেছেন দেশীয় মুদ্রণ শিল্পে জড়িত উদ্যোক্তারা। মুদ্রাকররা বলছেন, ২০২০ শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের বই মুদ্রণের জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্রে দেওয়া হলে শত কোটি টাকা গচ্চা যাবে। এতে দেশের টাকা চলে যাবে বিদেশে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশি শিল্প। এই শিল্পে উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মুদ্রাকররা বলেছেন, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত প্রাথমিকের বিনামূল্যের বই মুদ্রণের মোট ব্যয়ের নয় শতাংশ অর্থ দিতো বিশ্ব ব্যাংক। আর এই অর্থ প্রদানের শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হতো। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হওয়ার পর সম্পূর্ণ দেশীয় দরপত্রেই কাজ করা হবে এমন ঘোষণা দিয়েছিল এনসিটিবি। কিন্তু এখনও বন্ধ হয়নি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান।
মুদ্রণ শিল্পে জড়িত উদ্যোক্তারা বলেছেন, আন্তর্জাতিক দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী ১৫ শতাংশ কম দরে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সেখান থেকে তাদের মোট মূল্যের উপর সাত শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো আট শতাংশ কম দরে কাজ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
অপরদিকে বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হচ্ছে মোট কাজের মূল্যের উপর অতিরিক্ত ৩১ শতাংশ প্রণোদনা। সেই হিসেবে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রণোদনার সঙ্গে তুলনা করলে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে ২৩ শতাংশ অতিরিক্ত প্রণোদনা পাচ্ছে। ফলে আগামীতে প্রাথমিকের পাঠ্যবই মুদ্রণে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার সুযোগ নেই।
মুদ্রণ শিল্প সমিতির সভাপতি শহীদ সেরনিয়াবাত সাংবাদিকদের বলেছেন, বাংলাদেশ কাগজ ও মুদ্রণ শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ। প্রাথমিকের বইতে যেহেতু এখন আর বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন নেই ফলে আমরা কোনোভাবেই মনে করি না, আর আন্তর্জাতিক দরপত্রের প্রয়োজন আছে।
মুদ্রণ শিল্প মালিকরা বলছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন কাগজের মিলগুলো বর্তমানে গুণগতমানসম্পন্ন কাগজ উত্পাদন করছে। এমনকি এসব কাগজ বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এছাড়া বাংলাদেশে মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে দুই শতাধিক ওয়েব মেশিন আছে। যারা মাত্র তিন মাসেই ৩৫ কোটি বই ছাপতে সক্ষম।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় দরপত্রের যে নির্দেশিকা দেবে সে আলোকেই দরপত্র আহ্বান করা হবে। এখানে এনসিটিবির নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত নেই।