শিক্ষক নিবন্ধনসহ সকল শর্ত শিথিল করে বিলুপ্ত ছিটমহলের ১২ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ব্যাপারে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড এবং তিন জেলা প্রশাসকের মতামত চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। একই চিঠি পাঠানো হয়েছে পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকের কাছেও।
চিঠিতে বলা হয়, শিক্ষক নিবন্ধন শর্ত শিথিল সাপেক্ষে ১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আবেদন করেছে বাংলাদেশ ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে এ আবেদনগুলো মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে পাঠানো হয়েছে।
এর প্রেক্ষিতে পাঠানো চিঠিতে ১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির ব্যাপারে দিনাজপুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের এবং পঞ্চগড়, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসকদের মতামত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণায়ে পাঠাতে বলা হয়েছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ এ বিষয়ে জানান, তিন জেলা প্রশাসকের কাছে বিলুপ্ত ছিটমহলের ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতামতের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পত্র এসেছে। তার মধ্যে লালমনিরহাট জেলার হাতিবান্ধা উপজেলার উত্তর গোতামারী বিলুপ্ত ছিটমহলের আজিমপুর উত্তর গোতামারী মইনুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাটগ্রাম উপজেলার বাসকাটা দয়ালটারী নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় নাম রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের আদেশ রয়েছে, তাই দ্রুত মতামত প্রেরণ করা হবে।
এর আগে গত ৬ মে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বিলুপ্ত ছিটমহলের পাঠদানকৃত সকল স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা এমপিওভুক্তির নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেয়া হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক-৭ ওয়াহিদা মুসাররত অনীতা স্বাক্ষরিত চিঠিটি গত ১১ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পৌছায়।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলার অধীন বিলুপ্ত ছিটমহলে তিনটি হাইস্কুলকে পাঠদানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হলো-দাশিয়ার ছড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, দাশিয়ার ছড়া সমন্বয়পাড়া উচ্চবিদ্যালয়, দাশিয়ার ছড়া কামালপুর মাইনুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়। অনুমোদনবিহীন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- মইনুল মোস্তফা মহাবিদ্যালয়, দাশিয়ার ছড়া টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দাশিয়ার ছড়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়, হায়তগঞ্জ নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুননেছা দাখিল মাদ্রাসা, সাহেবগঞ্জ কুরশা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। লালমনিরহাটে পাঠদানের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তিনটি। উত্তর গোধামারি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাঁশকাটা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বাঁশকাটা মমিনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এছাড়া অনুমোদনহীন গোয়ালমারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। আর নীলফামারীতে মইনুল মোস্তফা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে একটি স্কুল রয়েছে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক রবীন্দ্র নারায়ণ ভট্টাচার্য বলেন, এ পর্যন্ত ১৪টি স্কুলের পাঠদানের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল। আরো অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেগুলো অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিলুপ্ত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির সভাপতি (পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট) মফিজার রহমান জানান, পঞ্চগড় জেলার অধীন ছিটমহলে পাঠদানের অনুমতিপ্রাপ্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো মফিজার রহমান কলেজ, বঙ্গবন্ধু আলিম মাদরাসার দাখিল স্তর, রাজমহল উচ্চবিদ্যালয়, দেলুয়াডাঙ্গা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, শেখ রাসেল উচ্চবিদ্যালয়, তালডাঙ্গা উচ্চবিদ্যালয়, মোজুহার হোসেন উচ্চবিদ্যালয়, দিন বাজার উচ্চবিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুননেছা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সেরাজুল ইসলাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এমপি লুৎফর রহমান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতির জন্য দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক পরিদর্শন প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে। এছাড়া পাঠদানের অনুমতি ছাড়া সিরাজুল ইসলাম নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নববাংলা নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও হাজিরহাট নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
বিলুপ্ত ছিটমহলের ১২ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমপিভুক্তির ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নজর দেয়ায় খুশি ছিটমহলবাসীরা। ভারত-বাংলাদেশ বিলুপ্ত ছিটমহল সংগ্রাম কমিটির সাধারন সম্পাদক গোলাম মোস্তফা জানান, ৬৮ বছর পর শিক্ষার আলো পাবে বিলুপ্ত ছিটমহলের মানুষ। প্রধানমন্ত্রী সুনজর দেওয়ায় ১১২টি বিলুপ্ত ছিটমহল মানুষ খুশি। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিট ছিটমহলবাসীরা বাংলাদেশী নাগরিকত্ব লাভ করে। এত দিন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত ছিল তারা।
২০১৫ খ্রিস্টাব্দের ১ আগস্ট বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর জীবনযাত্রা। তবে এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় শিক্ষক-কর্মচারীরা বিনা বেতনে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। একাডেমিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় শিক্ষার্থীরা সরকারের উপবৃত্তি সুবিধা পাচ্ছেন না। এ থেকেই দাবি ওঠে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির। এ দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: কী আছে পাটগ্রাম ছিটমহলে ২০ শিক্ষকের কপালে