বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষকের মর্যাদা চাই

ফরিদ আহাম্মদ |

প্রতি বছর ৫ অক্টোবর ঘটা করে বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপিত হয়। এই দিবসে বক্তারা শিক্ষকদের মান-মর্যাদা বৃদ্ধিসহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে থাকেন। বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিক, কলামিস্টরা শিক্ষকদের পক্ষে পত্রিকায় লেখালেখি করেন। কিন্তু শিক্ষক দিবস চলে গেলে শিক্ষকদের কথা আর কেউ মনে রাখে না। যারা এখন সরকারের বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরাও যে কোনো না কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে পড়েছেন সেটাও তাঁরা বেমালুম ভুলে যান। এমনকি শিক্ষকদের খাটো করে কথা বলতেও দ্বিধাবোধ করেন না।

এক সময় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পাত্রের কাছে কোনো সচেতন অভিভাবক তাঁর মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইতেন না। কারণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক যে বেতন পেতেন তাতে সচ্ছলতার সাথে একটি সংসার চালানো কঠিন ছিল। ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল নির্ধারণ করার পর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদা কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পেয়েছে। যার অবদান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার। একমাত্র বেতন বৃদ্ধি ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যান্য ক্ষেত্রে খুব একটা উন্নতি হয়নি। শিক্ষক নেতারা বিভিন্ন দাবি নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রীর কাছে বার বার গেলেও আশ্বাস দেয়া ছাড়া কোনো দাবি এখনো পর্যন্ত বাস্তবায়ন হয়নি। 

আরও দেখুন: বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন শুরু হলো যেভাবে (ভিডিও)

প্রধান শিক্ষকদেরকে পদমর্যাদা দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষণা করা হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণি ঘোষণার ফলে ফিক্সেশন জটিলতার কারণে অনেক সিনিয়র প্রধান শিক্ষক জুনিয়র শিক্ষকদের সমান অথবা তাদের চেয়ে কম বেতন পাচ্ছেন। এই সুযোগে ফিক্সেশন জটিলতা নিরসনের কথা বলে কোনো কোনো শিক্ষক সংগঠনের ব্যানারে কিছু শিক্ষক নামধারী দালাল শিক্ষকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

প্রধান শিক্ষকের তিন ধাপ নিচে সহকারী শিক্ষকদের বেতন-স্কেল নির্ধারণ করার ফলে ব্যাপক বেতন-বৈষম্য দেখা দিয়েছে। যার ফলে সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। কর্তৃপক্ষের ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আদালতে বার বার মামলা হচ্ছে। যার জন্য সরকার কোনো সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করতে পারছে না। শুধু তাই নয়, মামলার প্রায় সবগুলো রায় সরকারের বিরুদ্ধে যাচ্ছে। যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়ন না হয়ে নিম্মগামী হচ্ছে। 

সহকারী শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব দিয়ে প্রধান শিক্ষককের মর্যাদা দেয়া হলেও তাদের এখনো পর্যন্ত পদোন্নতি দেয়া হয়নি। যার ফলে, পুরাতন প্রধান শিক্ষক ও চলতি দায়িত্ব প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে মর্যাদার লড়াই তৈরি হয়েছে যা প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে বড় বাধা।

পুল ও প্যানেল শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে নব সরকারিকরণ বিদ্যালয়গুলোতে এখন শিক্ষক সংখ্যা কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ জন করে কর্মরত আছেন। কিন্তু এখনো অনেক সাবেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৩ জন করে শিক্ষক কর্মরত আছেন। যার ফলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকরা কাঙ্ক্ষিত স্থানে বদলি হতে পারছে না। প্রাথমিক শিক্ষক বদলি নীতিমালায় বদলির সময়কাল জানুয়ারি থেকে মার্চ (তিন মাস) উল্লেখ থাকায় কোনো বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষকের পদ শূন্য হলেও বাকি ৯ মাসের মধ্যে শিক্ষক বদলির মাধ্যমে শূন্যপদ পূরণের কোনো সুযোগ নেই। যার ফলে পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত ঘোষণা দিয়েও সরকার কোনো রহস্যজনক কারণে তা বাস্তবায়ন থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে।

পরিশেষে বলব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার মূল ভিত্তি রচনা করে। তাই তাঁদের দীর্ঘ দিনের দাবি সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড প্রদান করে সামাজিক ও পেশাগত মর্যাদা বাড়ানোর মাধ্যমে উপরোক্ত সমস্যাবলী চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে প্রাথমিক শিক্ষার মান উন্নয়ন অবশ্যই সম্ভব।

ফরিদ আহাম্মদ : সহকারী শিক্ষক, নালিতাবাড়ী, শেরপুর।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033400058746338