বিশ্ব শিক্ষক দিবসে সব শিক্ষকদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা

অধ্যক্ষ মো. কাওছার আলী শেখ |

৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকদের অবদানকে স্মরণ করার জন্য জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর সদস্যভূক্ত প্রতিটি দেশে ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতি বছর এদিনে দিবসটি উদযাপন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, “YOUNG TEACHER : THE FUTURE OF THE PROFESSION”।

বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে ও তরুণরা শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় আগ্রহ নিয়ে পেশাদারিত্ব গ্রহণ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। এ উপলক্ষে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।  ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির (বিটিএ) উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব এর সামনে থেকে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়।

আরও দেখুন: বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন শুরু হলো যেভাবে (ভিডিও)

শিক্ষকদের কাজের স্বীকৃতি ও সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে বিশ্বের ১৬৭টি দেশের ২১০টি জাতীয় সংগঠনের প্রায় তিন কোটি ২০ লাখ সদস্যের প্রতিনিধিত্বকারী আন্তর্জাতিক শিক্ষক সংগঠন ‘এডুকেশন ইন্টারন্যাশনাল’ গঠিত হয়। এ আন্তর্জাতিক সংগঠন জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর প্রণীত দলিলটি যথাযথ বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করার অর্থবহ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ক্রমাগত অনুরোধ ও আহ্বান জানায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কোর ২৬তম অধিবেশনের গৃহীত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ড. ফ্রেডারিক এম মেয়রের যুগান্তকারী ঘোষণার মাধ্যমে ৫ অক্টোবর ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস’ পালনের শুভ সূচনা করা হয়।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই যথাযোগ্য মর্যাদায় বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালিত হয়ে আসছে। শিক্ষকদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কিত সাফল্যকে সমুন্নত রাখাসহ আরও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ৫ অক্টোবর থেকে বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে এ দিবসটি উদযাপিত হয়ে থাকে। 

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের জাতির জনকের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, একটি সাম্য ও বৈষম্যহীন সমাজ তথা জাতি বিনির্মাণে। এ লক্ষ্যে যুদ্ধ করেছে লাখ লাখ বাঙালি। আমরা কি পেরেছি জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে? মুক্তিযুদ্ধের যে স্বপ্ন ও চাওয়া তার কতটুকুইবা এ সমাজে বাস্তবায়ন হয়েছে? বড় বৈষম্য এ রাষ্ট্রের শিক্ষা ব্যবস্থায়! 

শিক্ষা তথা শিক্ষক সমাজের সাথে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের নানামূখী বিমাতাসুলভ আচরণ আমরা দেখতে পাই। একজন শিক্ষক তাঁর সমগ্র অর্জনটুকু ঢেলে দেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করলেও শিক্ষকের জীবনের আঁধার কাটে না। একই রাষ্ট্র, একই পাঠ্যপুস্তক, একই সিলেবাস এবং অভিন্ন পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করলেও সরকারি এবং বেসরকারি শিক্ষকদের ক্ষেত্রে রয়েছে পাহাড়সম বৈষম্য। 

বেসরকারি বিদ্যালয় শিক্ষকরা এসব সমস্যার সমাধান দেখেন কেবলমাত্র শিক্ষাব্যবস্থা সরকারিকরণ তথা জাতীয়করণের মধ্যে। শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নের আশা নিয়ে গোটা জাতির শিক্ষক সমাজ আশার আলো দেখলেও তা বাস্তবায়নে রয়েছে ধীর গতি। শিক্ষানীতি ২০১০ দ্রুত বাস্তবায়ন হলে আমাদের দেশের মেধাবি শিক্ষার্থীরা শিক্ষকতা পেশায় ঝুঁকবে, জাতি হবে আরও উন্নত, আরও শিক্ষানুরাগী।

শিক্ষাক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্যের জন্য গবেষণা বৃদ্ধি করতে হবে। আর এর জন্য বাড়াতে হবে বরাদ্দ। গবেষণার জন্য আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশের মাটিতে পা বাড়ায়। গবেষণা তথা উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশের মাটিতে গেলেও অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিশ্চয়তার জন্য উন্নত জীবনযাত্রা ছেড়ে অধিকাংশই আর দেশে ফিরে আসেন না। যদি যথাযথ মর্যাদা ও আর্থিক নিশ্চয়তা দেয়া যায় তবে জাতির মেধাবী সন্তানেরা দেশের মাটিতে ফিরে তাঁদের মেধাকে এ দেশের কল্যাণে কাজে লাগাতে পারেন। 

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে মূল প্রতিপাদ্য ধারণ করে আমাদের জাতীয় পাঠ্যক্রম ও শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে তা যথাযথভাবে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যাতে আমাদের আগামী প্রজন্ম সত্যিকারের দেশপ্রেমিক ও মূল্যবোধসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে এবং কর্মদক্ষতা নিয়ে জাতি গঠনে অবদান রাখতে পারে। তাহলেই শিক্ষকতার মতো এমন মহানব্রত পেশায় আবার নতুন করে আশার আলো জাগবে। যে সব শিক্ষকরা পেশায় নিয়োজিত তাদের বেতন কাঠামো আরও উন্নীত করতে পারলে শিক্ষকরা পাঠদানে আরও বেশি মনোযোগী হবেন। তখন তাদের আর্থিক দৈন্য দশা থাকবে না। আর ক্লাসে পাঠদানের পূর্বে নিজেকে আরও যোগ্যতাসম্পন্ন করে ক্লাসে উপস্থাপন করবেন। প্রকাশিত হবে শিক্ষকদের শাণিত মেধা। তৈরি হবে সৃজনশীল মেধাবী জাতি।

সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি যুদ্ধবিধস্ত দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, পরবর্তীতে তাঁরই সুযোগ্য তনয়া শিক্ষা ও শিক্ষকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক ২৬ হাজার ১৯৩টি রেজিস্টার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়কে একযোগে জাতীয়করণ করায় এদেশের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থাকে পূর্ণাঙ্গরূপে জাতীয়করণ করা হয়েছে। যার ফলে প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়মূখী করা সম্ভব হয়েছে। তাই এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমাদের প্রত্যাশা প্রাথমিক শিক্ষার ন্যায় মাধ্যমিক শিক্ষাকে সরকারিকরণ করে অচিরেই শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারি এবং বেসরকারি বৈষম্য দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তরুণ ও মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় আগমনের পথ সুগম করা হবে।

অধ্যক্ষ মো. কাওছার আলী শেখ : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ) 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037820339202881