বিশ্বজুড়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কোটি ছাড়াল, মৃত্যু প্রায় ৫ লাখ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর সাত মাসের মাথায় বিশ্বে এ ভাইরাসে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে গেল। চীনের উহান থেকে পৃথিবীময় ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যাও পাঁচ লাখের কাছাকছি পৌঁছে গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাত দিয়ে রয়টার্স লিখেছে, প্রতিবছর বিশ্বে যত লোক মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়, সাত মাসে মোটামুটি তার দ্বিগুণ মানুষকে সংক্রমিত করেছে নতুন করোনাভাইরাস। আর করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে, তা এক বছরে ইনফ্লুয়েঞ্জায় মৃত্যুর প্রায় সমান।

এমন এক সময় এই দুঃখজনক মাইলস্টোনে বিশ্ব পৌঁছালো, যখন মহামারীতে পর্যুদস্ত অনেক দেশ লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ শিথিল করে অর্থনীতি সচল করার চেষ্টায় আছে।

জীবন ও জীবিকার প্রশ্নে ভারসাম্য আনতে গিয়ে কর্মক্ষেত্র আর সামাজিক জীবন যাপনে আনতে হচ্ছে নানা ধরনের পরিবর্তন, যা চালিয়ে যেতে হতে পারে করোনাভাইরাসের টিকা না পাওয়া পর্যন্ত।

অর্থনীতি সচল করার চেষ্টার মধ্যে অনেক দেশে সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করায় ফের আংশিক লকডাউনের পথে যেতে হচ্ছে অনেক সরকারকে; আগামী দিনগুলোতেও বার বার এই ধারা ফিরে আসবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। 

জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাত্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ সময় রোববার বিকালে সাড়ে ৪টায় বিশ্বে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ১ হাজার ৫২৭ জন। আর মোট মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৯৯ হাজার ১২৪ জন।

বিভিন্ন দেশের প্রকাশ করা সরকারি তথ্যের বরাতে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, বিশ্বে এ পর্যন্ত যত রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার ২৫ শতাংশ করে হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ইউরোপে। এছাড়া ১১ শতাংশ রোগী এশিয়ার এবং ৯ শতাংশ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান শহরে নতুন ধরনের এই করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মানবদেহে ধরা পড়ে; খুব দ্রুত বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা।

পরে এ ভাইরাসের নাম দেয়া হয় নভেল বা নতুন করোনাভাইরাস। আর এ ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগের নাম দেয়া হয় কোভিড-১৯।

চীনে প্রথম মৃত্যুর দুদিন পর ১৩ জানুয়ারি থাইল্যান্ডে প্রথম রোগী ধরা পড়ার পর জানা যায়, চীনের রাষ্ট্রীয় সীমানা পেরিয়ে গেছে এই ভাইরাস।

তারপর হু হু করে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা, দেড় মাসের মধ্যে এন্টার্কটিকা বাদে সব মহাদেশেই ধরা পড়ে রোগী। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তখন এই পরিস্থিতিকে মহামারী আখ্যায়িত করে।

কঠোর লকডাইনে চীন তিন মাসের মধ্যে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও ততদিনে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র এবং পরে রাশিয়ায় ব্যাপক মাত্রা পায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব।

প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর চার মাসের মাথায় ১ এপ্রিল বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়ায়। এর পরের সাত সপ্তাহে আরও ৪০ লাখ মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়ায় ২১ মে আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধ কোটি ছাড়িয়ে যায়। এরপর পাঁচ সপ্তাহের মাথায় সেই সংখ্যা কোটিতে পৌঁছে গেল।

এখন এ ভাইরাসের বিস্তারের নতুন উপকেন্দ্র হয়ে উঠেছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলো, বিশেষ করে ব্রাজিল এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারত। গত এক সপ্তাহে বিশ্বে যত নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, তার এক তৃতীয়াংশই এ দুটো দেশে।  

গত ১৯ জুন ব্রাজিলে রেকর্ড ৫৪ হাজার ৭০০ নতুন রোগী শনাক্ত হয়। আর ভারতে ২৭ জুন ১৯ হাজার ৯০০ রোগী শনাক্তের সংখ্যাটি ছিল সেখানে এক দিনের সর্বোচ্চ।

লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে করোনাভাইরাসে মোট মৃত্যু ইতোমধ্যে এক লাখ ছাড়িয়েছে। আগামী অক্টোবরের মধ্যে তা বেড়ে ৩ লাখ ৮০ হাজার হতে পারে বলে পূর্বাভাস এসেছে এক গবেষণায়।

কঠোর বিধিনিষেধে মহামারী অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা চীন, নিউ জিল্যান্ড আর আস্ট্রেলিয়াতেও গত মাসে কিছু নতুন সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ২৫ লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষের দেহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

বিধিনিষেধের মধ্যে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে সংক্রমণের গতি কিছুটা কমে এলেও লকডাউন তুলে দেয়ার পর এখন তা আবার বাড়ছে। আগে যেসব এলাকা সংক্রমণের বাইরে ছিল, এখন সেসব এলাকাতেও ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার খবর আসছে। 

এছাড়া ব্রাজিলে ১৩ লাখ ১৩ হাজার, রাশিয়ায় ৬ লাখ ৩৩ হাজার, ভারতে ৫ লাখ ২৮ হাজার, যুক্তরাজ্যে ৩ লাখ ১১ হাজার কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ার তথ্য দেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। 

মৃত্যুর সংখ্যাতেও বিশ্বে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর পরেই রয়েছে ব্রজিল, সেখানে সরকারের নথিতে এসেছে ৫৭ হাজার মানুষের মৃত্যুর তথ্য। এছাড়া যুক্তরাজ্যে ৪৩ হাজারের বেশি ও ইতালিতে ৩৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। 

অনেক দেশে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ঘাটতি থাকায় এবং কোনো কোনো দেশ হাসপাতালের বাইরে মারা যাওয়া ব্যক্তিরা হিসাবের মধ্যে না আনায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0043981075286865