স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী রুম্পার দাফন সম্পন্ন, স্বজনদের বুকফাটা আর্তনাদ

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি |

রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার (২১) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। আজ সকাল ১০ টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয় রুম্পাকে। 

এর আগে ফজরের নামাজের পর ময়মনসিংহের সদর উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায় রুম্পার মরদেহ। এরপরই বিজয়নগর গ্রামে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। মরদেহ পেয়ে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী।

একমাত্র মেয়েকে চিরতরে বিদায় দিয়ে বাবা রুকন উদ্দিন নিজেকে সামলে নিতে পারছেন না কোনোভাবেই। বার বার ছুটে যাচ্ছেন মেয়ের কবরের পাশে। অসহায় পিতার ঝড়ে পরা অশ্রুতে কবরের মাটিও ভিজে উঠছে। মেয়ে হারানোর বেদনা কোনোভাবেই সইতে পারছেন না বাবা।

অপরদিকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন নির্মম হত্যার স্বীকার রুম্পার মা নাহিদা আক্তার। আর্তনাদ করছেন আর সন্তান হারানোর বেদনায় তিনি মুষড়ে পড়েছেন। কান্না যেন থামছেই না। কান্নার শব্দের সাথে সাথে ভেসে আসছে মেধাবী সন্তানের নানা কথা। কখনো চিৎকার করে কাঁদছেন, কখনো ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। 

একপর্যায়ে মায়ের চোখে আর পানি আসে না। তিনি বিহ্বল, নির্বাক। লোক দেখলেই এক পলকে চেয়ে থাকেন। একটু পরপরই শোকে পাথর হয়ে যাচ্ছেন। তার দু'চোখ বেয়ে কেবল পানিই পড়ছিল। কিছু বলতে চেয়েও পারছেন না। হঠাৎ চিৎকার দিয়ে বলেন ‘তোরা এত্ত খারাপ, তোদের মনে মায়া দয়া নেই। তোরা কোন মায়ের পেট থেকে পরিসনি, তোদের বিচার যেন দেইখ্যা যাইতে পারি।

রুম্পার বাবা-মা’র বুকফাটা এমন হাহাকার গ্রামবাসীর বুকেও যেন হাতুড়ি মারছে। এলাকাবাসী বলছেন, মৃত্যুর পরিণতির প্রতিশব্দ এমনভাবে নাড়া দিয়ে যায়নি। এ শুধু মৃত্যুই নয়, বাবা-মায়ের আমৃত্যু বুকফাটা যন্ত্রণা। মেয়েকে পেয়েও হারানোর মর্মভেদী কান্না। তীব্র ব্যথার সাক্ষাৎ অঙ্গীকার। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেয়েকে হারিয়ে এখন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই শোকে বিহ্বল। কোনোভাবেই কান্না থামছে না তাদের। কান্নার সাথে চলছে টানা বিলাপ। এমন আর্তনাদে উপস্থিত কেউই চোখের জল ধরে রাখতে পারছেন না। 

রুম্পার বাবা-মা, স্বজন এবং এলাকাবাসীর এখন একটাই দাবি অপরাধীদের দ্রুত সনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনা। ফেনীর নুসরাত হত্যাকাণ্ডের মতো এই হত্যাকাণ্ডেরও দ্রুত বিচার দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

এর আগে, গত বুধবার রাতে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনে দুই বাড়ির মাঝ থেকে উদ্ধার করা হয় রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা (২১)-এর মরদেহ। তার মৃত্যু নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা কাটেনি।

আজ শুক্রবার রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে তিনটি ভবন আছে। এগুলোর যে কোনো একটা থেকে পড়ে রুম্পা মারা গেছেন। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে, মামলা তদন্তাধীন। ইনজুরিগুলো পেয়েছি, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছে উঁচু কোনও জায়গা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। তার শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করে ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রমনা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছে।

জানা গেছে, রুবাইয়াত শারমিন রুম্পা (২১) স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী ছিলেন। তার বাবা পুলিশ পরিদর্শক রোকন উদ্দিন। তাদের বাড়ী ময়মনসিংহ হলেও থাকতেন মালিবাগের শান্তিবাগে।

ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, উপর থেকে পড়েই তরুণীর মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে ধর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত হতে তার মৃতদেহ থেকে হাইভেজেনাল সপসহ ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। সেই রিপোর্ট এলে এ বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দেয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030250549316406