খুবই যৌক্তিক ও ফলপ্রসূ হতো; যদি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হতো। গুচ্ছ পদ্ধতি নিঃসন্দেহে শিক্ষার্থীবান্ধব পদ্ধতি হতো। মেডিকেল পরীক্ষার মতো সব বিশ্ববিদ্যালয়ের মান নির্ধারণ করে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ করা হলে অনেকাংশেই ছাত্রছাত্রীদের সুবিধা হতো; অভিভাবকের ভোগান্তিসহ দুশ্চিন্তার অবসান ঘটত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বলার অপেক্ষা রাখে না, ১২ বছরের মেধা ১ ঘণ্টায় মূল্যায়ন করায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা অবমূল্যায়নের শিকার হয়। কারণ ১ ঘণ্টায় একজন শিক্ষার্থীর মান, মেধা, সক্ষমতা যাচাই করা অসম্ভব। এর মধ্যে কেউ শারীরিকভাবে অসুস্থ হলে কিংবা যাতায়াত সমস্যায় পড়লে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বপ্ন তার চিরদিনের জন্য নিভে যায়। আবার মাত্র এক মার্কস বা হাফ মার্কসের জন্য অকৃতকার্য হয়ে বিনষ্ট হয় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর স্বপ্ন, নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তাদের মেধার অস্তিত্ব, সংকীর্ণ গণ্ডিতে আবদ্ধ হয়ে যায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীর বিচরণের পথ।
আমরা যে শৈশবে ‘একবার না পারিলে দেখ শতবার, কেন পারিবে না তাহা ভাব একবার’ কবিতাচর্চা করে বড় হয়েছি; তা কি আদর্শিক প্রয়াস ছিল, নাকি তা অন্তঃসারশূন্য বুলি মাত্র ছিল? আরেকটি বিষয় বলতে খুব লজ্জা লাগে- আজকে যারা চেয়ারে বসে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করেছে, তারা নিজেরাই অনেকে ‘সেকেন্ড টাইমার’ ছিল। বিশ্বের প্রায় সব টপ লেভেলের বিশ্ববিদ্যালয়েই একাধিকবার ভর্তির সুযোগ রয়েছে।
ঢাবি, রাবি, জবি ও চবিতে কেন তা করা যায় না? একটি বিষয় ভাবতে অবাক লাগে- ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ ছিল। এটাকে ২০১৬ সালে এসে বন্ধ করতে হল? এ ক্ষুদ্র একটি ভুল অনুধাবন করতে আমাদের দেশের শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবীদের প্রায় ১০০ বছর লেগে গেল?
বিসিএস ও মেডিকেল পরীক্ষা যেখানে একাধিকবার দেয়া সম্ভব হয়; সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা কেন বন্ধ করা হবে? এটি শুধু অযৌক্তিক নয়, অন্যায়ও বটে। এ ব্যবস্থা রহিতকরণ এখন সময়ের দাবি। আগামী প্রজন্মকে আত্মপ্রত্যয়ী ও স্বপ্নজয়ী করতে ঢাবি, রাবি, চবি, জবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ দেয়া জরুরি।
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: যুগান্তর