বুক ভরা জ্বালায় প্রাথমিকের দপ্তরিরা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

বুক ভরা যন্ত্রণা নিয়ে (১ সেপ্টেম্বর) মিরপুরের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে প্রাথমিকের দপ্তরি কাম প্রহরীরা। এ সময় নিজেদের জটিলতা নিরসনে ৪ দাবিতে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁরা। অতিরিক্ত মহাপরিচালক তাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দেন। তাদের চাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মতো চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর, বিধি অনুযায়ী কর্মঘণ্টা, বেতন, ছুটি প্রদান। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সরকারি। শিক্ষকরাও সরকারি বেতনভাতা পায়। কেবল মাত্র আদিম যুগে ‘কৃতদাসের’ মতো দপ্তরিরা সার্বক্ষণিক কর্মচারী। তারা ‘মানুষ’ না ‘জড় পদার্থ’ এ প্রশ্নের অবতারণা করে গত বছরের ৩ মে দৈনিক শিক্ষাডটকমে “প্রাথমিকের দপ্তরিরাও মানুষ” শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। মহান সৃষ্টিকর্তা তাদের মানুষরূপে সৃষ্টি করলেও সংশ্লিষ্টরা উচ্চ আদালতের রায়ের পরেও আজও তাদের মানবসন্তান হিসেবে পুরোপুরি স্বীকৃতি দেয়নি। এ প্রেক্ষাপটে আমার এ মুহূর্তে প্রয়াত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী সুবীর নন্দীর একটি গানের কথা মনে পড়ে গেল। গানটি হলো, “এক হৃদয়হীনার কাছে হৃদয়ের দাম কী আছে”।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু ও তাঁর যোগ্য উত্তরসুরি দেশনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো হৃদয়হীনা নন। তাঁদের গরিব মানুষের প্রতি রয়েছে অগাধ ভালোবাসা। প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ অসংখ্য হৃদয়হীনের কর্মস্থান। তাই, দেশ-বিদেশের বিদ্যমান শ্রম আইন উপেক্ষা করে দপ্তরি কাম প্রহরীদের সার্বক্ষণিক ডিউটি করতে বাধ্য করা হয়।

দপ্তরি কাম প্রহরীদের চাকরি রাজস্ব খাতে স্থানান্তরের জন্য গত ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে মহামান্য হাইকোর্ট রিট পিটিশন (নং-১৭৮৩/১৭) দায়ের করা হয়। গত ৩০ জানুয়ারি এ রিট পিটিশনের রায় ঘোষণা করা হয়। যাতে তাদের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটে। রায়ে দপ্তরি কাম প্রহরী পদটি রাজস্বখাতে নেয়ার আদেশ দেন হাইকোর্ট। রিট পিটিশনের রুলের জবাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে সহকারী পরিচালক আব্দুল আলিম বলেন, “They (Petitioners) only perform their duty during school period and in addition to perform their duty if it is required by the school managing committee for special school purpose only. There is no scope to consider the word `Sarbokhonik' in condition no.2 of the appointment letter as 24 hours of a day. It usually means school time." কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দপ্তরি কাম প্রহরীদের মাঠ পর্যায়ে ২৪ ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করতে হয়।

হাইকোর্টে মহাপরিচালক মহোদয়ের পক্ষে জবাবের বিপরীতে সারাদেশে চলছে দপ্তরি কাম প্রহরীদের অমানবিক নির্যাতন। কতিপয় ব্যক্তিকে বেআইনিভাবে চাকরিচ্যুতিও করা হয়েছে। কিন্তু বুঝতে কষ্ট হয়, কতিপয় ডিগ্রিধারী মুর্খরা কীভাবে সার্বক্ষণিক ডিউটির কথা ভাবেন!

হাইকোর্টের রায়ের আলোকে আজকে ৪ দফা শুধু তাদের দাবি নয়, মানুষ ও নাগরিক হিসেবে কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করা অধিকার রক্ষার আদেশ। অধিকার বঞ্চিত হলে কেউ যদি বিধি বহির্ভূত কাজ করে এ দায় পড়বে যারা তাদের অধিকার বঞ্চিত করেছেন। দপ্তরি পদবিটি অতি প্রাচীন। এ পদবি দিয়ে সংশ্লিষ্টরা তাদের কর্মস্পৃহাকে দাবিয়ে রেখেছেন। শিক্ষকদের পাশাপাশি দপ্তরি কাম প্রহরীরা প্রাথমিক মানোন্নয়ন অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছেন। এক কথায় তাদের সহযোগিতা ছাড়া বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা অনেকটা শৃঙ্খলাবিহীন। তারা বিদ্যালয়ের সহায়ক ব্যক্তি হিসেবে কাজ করেন বিধায় তাদের পদবি বিদ্যালয় সহায়ক করার সবিনয় নিবেদন করছি। যেহেতু বঙ্গবন্ধু, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য হাইকোর্ট হৃদয়হীন নয়। সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালক, সচিব ও প্রতিমন্ত্রীরাও হৃদয়হীনার মাঝ থেকে দ্রুত বের হয়ে আসবেন এ প্রত্যাশা করছি।

স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে দপ্তরি ভাইয়েরা তাদের অধিকার ভোগ করুক। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ তাদের দুঃখ-কষ্ট ও অধিকার আন্দোলনে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান রইলো। জয় হোক বাংলার শ্রমজীবী মানুষের। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।

মো. সিদ্দিকুর রহমান: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050599575042725