বুরকিনা ফাসোতে জিহাদি হামলার কারণে শত শত স্কুল বন্ধ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বুরকিনা ফাসোতে জিহাদি তৎপরতা ও সহিংসতা চলছে। দেশটির শিক্ষাখাত এই জঙ্গিবাদের অন্যতম শিকার। জিহাদি তৎপরতার কারণে বুরকিনা ফাসোর শতশত স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে এবং ছাত্র ও শিক্ষক হামলার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। গোলযোগপূর্ণ উত্তরাঞ্চলে তিন বছরের বেশি সময় ধরে ইসলামী চরমপন্থীদের হামলা ও হুমকি চলে আসছে। এই কারণে ৩শ’র বেশি স্কুল বন্ধ রয়েছে। খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

মালি সীমান্তবর্তী শহর নেনেবোউরোতে প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক কাসোউম ওউয়েদ্রাওগো বলেন, ‘জিহাদিরা ধীরে ধীরে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে।’ ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে তার এক সহকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। গত বছর নিরাপত্তাজনিত কারণে শিক্ষকরা স্কুল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। স্কুল পরিচালনা করা ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক। ওউয়েদ্রাওগো উত্তরঞ্চলীয় রাজধানী ওউয়াহিগোউইয়ায় চলে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, সেখানে তিনি অন্ন সংস্থানের চিন্তায় আছেন।
এই শিক্ষক আরো বলেন, ‘তারা ‘ফ্রেঞ্চ’ স্কুল চায় না। ‘আরবি’ স্কুল চায়।
তিনি কিভাবে ‘পশ্চিমা’ শিক্ষার ওপর ক্ষুব্ধ ইসলামী চরমপন্থীরা শিক্ষকদের হুমকি দিয়েছে তা বর্ণনা করেন।
ওউয়েদ্রাওগো বলেন, ‘তারা যেন আমাকে সহজে খুঁজে না পায়, সেজন্য আমি গ্রামবাসীদের মধ্যে মিশে থাকতাম।’
তিনি জানান স্কুলে থাকা শিক্ষকদের জন্য বিপজ্জনক।

বুরকিনা ফাসো বিস্তীর্ণ সহিল অঞ্চলের একটি অংশ। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে লিবিয়ায় বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার পর থেকে এটি এখন সহিংস চরমপন্থী ও আইন বহিভর্’তদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে।
২০১২ খ্রিস্টাব্দের ইসলামপন্থীরা মালির উত্তরাঞ্চল দখল করে এবং এরপর নাইজেরিয়ার উত্তরাঞ্চলে বোকো হারামের উত্থান ঘটে।
জিহাদি বিরোধী জি৫ সাহেল ফোর্স বাহিনীর আন্তর্জাতিক সামরিক অভিযান সত্ত্বেও পরিস্থিতির উত্তরণ হয়নি। বরং আরো খারাপ হয়েছে।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, বুরকিনা ফাসো, মালি ও নাইজারের মধ্যবর্তী এলাকায় গত ছয় মাসে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপ হয়েছে।

সেপ্টেম্বর মাসে এক আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৫ খ্রিস্টাব্দের থেকে বুরকিনা ফাসোতে ইসলামী চরমপন্থীদের হামলায় ২২৯ জন নিহত হয়েছে। এ সময় রাজধানী ওউয়াগাদোউগোউয়ে তিনটি বড় ধরনের হামলা চালানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর শিক্ষক বলেন, জিহাদিরা তার স্কুলে হামলা চালিয়ে তা সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘একদিন সশস্ত্র জিহাদিরা গ্রামে এলো। তাদের দেখতে পেয়ে কয়েকজন স্কুল শিক্ষার্থী আমাকে সতর্ক করার জন্য দৌড়ে আমার কাছে এলো। আমরা ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে পড়লাম।
শিক্ষক বলেন, ‘একজন লোক স্কুলের দরজায় গুলি করল। এরপর ভেতরে ঢুকে সবকিছু জ্বালিয়ে দিল।’
কোন অঞ্চলে হামলা চালানো হয়েছে তিনি তাও জানাতে অস্বীকার করেন।
শিক্ষক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য বলেন, অক্টোবর মাসের শেষ দিকে সহিংসতার আশঙ্কায় পূর্বাঞ্চলীয় শহর মাতিয়াকোয়ালিতে বেশ কয়েকটি স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

এক শিক্ষক জানান, জিহাদিরা আশপাশের গ্রামগুলোর মসজিদে গিয়ে এর স্টাফদের চলে যেতে বলে।

শিক্ষক ও ইউনিয়নগুলো সতর্ক করে বলেছে, সরকার ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে হাজার হাজার শিশুকে স্কুলের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0059611797332764