বেসরকারি খাতের কর্মীরা হঠাৎ চাকরিচ্যুত হলে পাবেন বেকারত্ব ভাতা। জাতীয় সামাজিক বীমা স্কিমের আওতায় এটি বাস্তবায়ন করা হবে। তিন বছর আগে অনুমোদন পাওয়া জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রের সুপারিশের ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এর অংশ হিসেবে বর্তমানে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এটির ফলাফলের ভিত্তিতে এ সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। কৌশলপত্রটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়ন সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। এটি মূল্যায়ন করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, তরুণ ও কর্মোপযোগীদের জন্য প্রস্তাবিত কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে কর্মসৃজনমূলক (ওয়ার্ক ফেয়ার) কর্মসূচিসমূহের একীভূত ও বেকারত্ব বীমা। পাশাপাশি কর্মোপযোগী নারীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আর বেসরকারি খাতের কর্মীদের জন্য বেকারত্ব ভাতা চালুর সুপারিশ করা হয়েছিল। সেটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গবেষণাটি পরিচালনার মাধ্যমে এ ভাতা কিভাবে, কত টাকা, কাদের জন্য এবং এটি কতটা টেকসই হবে- ইত্যাদি সব বিষয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
সূত্র জানায়, দারিদ্র্য ও অসমতা কমানোর গতি ত্বরান্বিত করতে সরকারের সব সামাজিক সুরক্ষামূলক কার্যক্রম সমন্বিত ও কার্যকর ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে প্রথমবারের মতো ২০১৫ সালে গ্রহণ করা হয় জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্র। এর মূল উদ্দেশ্যই হল দেশের সব সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা লাভের যোগ্য নাগরিকের জন্য এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা কার্যকরভাবে দারিদ্র্য ও অসমতা প্রতিরোধ করতে পারে। সেই সঙ্গে ব্যাপকতর মানব উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখতে পারে। কৌশলপত্রটি ২০১৫ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এর মধ্যে প্রথম তিন বছরের বাস্তবায়ন অগ্রগতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- কৌশলপত্রে বিদ্যালয়গামী শিশুদের জন্য জেন্ডার বৈষম্য না করে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অতিদরিদ্র শিশুদের ৫০ শতাংশ শিশুকে উপবৃত্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ইতিমধ্যেই বাজেটে এ প্রস্তাবনার প্রতিফলন দেখা গেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দ ছিল ৯৭০ কোটি টাকা। সেটি বেড়ে চলতি অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায়। সুপারিশ অনুযায়ী ইতিমধ্যেই বয়স্ক ভাতার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভাতার পরিমাণ ছিল ৩০০ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫০০ টাকায় উন্নীত করা হয়। তাছাড়া গত তিন বছরে উপকারভোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০ লাখ। কৌশলপত্রের সুপারিশ অনুযায়ী ইতিমধ্যেই অর্থমন্ত্রী চলতি অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় বেসরকারি পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত সব কর্মজীবীর জন্য একটি সার্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার রূপরেখা উপস্থাপন করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পোষ্যদের নিরাপত্তা ও কল্যাণে যেসব কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলো মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ কর্মসূচির নামে অব্যাহত রাখার নির্দেশনা রয়েছে কৌশলপত্রে। ইতিমধ্যেই মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতার পরিমাণ মাসিক ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। তবে এক্ষেত্রে সঠিক মুক্তিযোদ্ধা নির্ণয়ের চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া চলতি অর্থবছরে প্রতিবন্ধী সহায়তার আওতা ২১ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বর্তমানে ১০ লাখের বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধী ভাতা পাচ্ছেন। সমাজের অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং বিধবা ও স্বামী নিগৃহীত মহিলাদের ভাতা গ্রহীতার সংখ্যা বাড়ছে। বর্তমানে এ সুবিধার আওতায় ১৪ লাখ নারী রয়েছে। একটি শক্তিশালী ও পুনর্গঠিত সমাজসেবা অধিদফতর প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অর্থ বিভাগে ইতিমধ্যেই একটি কেন্দ্রীয় তথ্য ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি স্থাপিত হয়েছে। এ ব্যবস্থায় অন্তঃ এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় সামাজিক নিরাপত্তা উপকারভোগীদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র তুলনামূলক যাচাই-বাছাই করা যাচ্ছে। সুপারিশ অনুযায়ী উপকারভোগীদের কাছে সরাসরি টাকা পৌঁছাতে জি-টু-পি পেমেন্ট ব্যবস্থা পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়েছে।