বেতন জটিলতা নিরসনে পলিটেকনিক শিক্ষকদের আলটিমেটাম

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বেতন-ভাতার সংকট সমাধানে এক মাসের সময় দিয়ে কর্মসূচি স্থগিত করেছেন আন্দোলনরত সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের সব শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠন। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর ও বোর্ড কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হলে সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় শিফটের কোনো কার্যক্রমে অংশ না নেয়ার হুমকি দিয়েছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। আন্দোলন স্থগিত করায় ২০ আগস্ট প্রতিষ্ঠান খোলার দিনই হবে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন।

ফাইল ছবি

পলিটেকনিকের শিক্ষকরা তাদের বেতন-ভাতা ৫০ শতাংশ পুনর্বহাল ও পর্যায়ক্রমে শতভাগে উন্নীত করার দাবিতে আন্দোলন করছেন। এ দাবি পূরণ না হলে শিক্ষক-কর্মচারীরা পলিটেকনিকের দ্বিতীয় শিফটের কাজে আর অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে পলিটেকনিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক জহিরুল ইসলাম বলেন, দ্বিতীয় শিফট পরিচালনার জন্য এতদিন ৫০ শতাংশ বেতন-ভাতা দেয়া হতো। পর্যাক্রমে এটা বাড়ানোর কথা। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের পে-স্কেলের পরও ওই অনুসারেই দেয়া হয়েছে ৫০ শতাংশ হারে। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিতর্কিত আদেশে হঠাৎ করে তা পুরনো স্কেলে নির্ধারণ করা হলেই সংকট সৃষ্টি হয়েছে সারাদেশে। এতে শিক্ষকদের সম্মানী ভাতা কমেছে। নতুন এই আদেশ অমানবিক।

তিনি বলেন, সরকারের একটি কার্যকর বিষয়কে এভাবে অকার্যকর করা যায় না। আমরা এক মাসের সময় দিয়েছি। ২০ আগস্ট প্রতিষ্ঠান খেলার দিনই হবে নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য মনোনীত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশেন। এক মাস আমরা আন্দোলন আপাতত স্থগিত করেছি। এই সময়ের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সমস্যার সমাধান করবে। অন্যথায় আমরা আর দ্বিতীয় শিফটের কাজে অংশ নেব না।

গত কয়েকদিনে শিক্ষামন্ত্রী, উপমন্ত্রীসহ কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বোর্ড চেয়ারম্যানের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠকের পর নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তির স্বার্থে কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল সন্ধ্যায় শিক্ষক নেতারা বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও বোর্ড চেয়ারম্যান শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক শিক্ষক করেছেন। সেখানে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। মহাপরিচালক ও চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে, এক মাসের মধ্যে সংকটের সমাধান করতে হবে। তারাও একই সময়ের মধ্যে শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শরণাপন্ন হবেন।

জানা গেছে, আগের ৫০ শতাংশ বেতন-ভাতা বহাল ও পর্যায়ক্রমে শতভাগে উন্নীত করার দাবিতে শিক্ষক-কর্মচারীর আন্দোলনে ১ আগস্ট থেকেই পুরোপুরি অচল হয়ে পড়েছে দেশের সব সরকারি পলিটেকনিকের দ্বিতীয় শিফট। নতুন শিক্ষাবর্ষে ভর্তির জন্য মনোনীত হলেও ভর্তি হতে পারছিল না কোনো শিক্ষার্থী। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বার বার আশ্বাস দিলেও শিক্ষকদের প্রাপ্য বেতন-ভাতার জটিলতা নিরসন করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষক-কর্মচারীরা তাদের পূর্ব ঘোষণা অনুসারে প্রথম শিফটের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশ নিলেও পুরোপুরি বন্ধ রাখেন দ্বিতীয় শিফট। প্রথম শিফটের ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর মতো দ্বিতীয় শিফটেও পড়ালেখা করার সুযোগ পায় আরও ২৫ হাজার শিক্ষার্থী। ফলে চার শিক্ষাবর্ষে প্রথম শিফটের মতো দ্বিতীয় শিফটেও পড়ার সুযোগ পাচ্ছে প্রায় এক লাখ শিক্ষার্থী। আন্দোলনের কারণে এসব শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা পড়েন সংকটে।

কারিগরি শিক্ষার হার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমে প্রথম শিফটের মতোই ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দ্বিতীয় শিফট চালু করা হয় এবং ৩০ শতাংশ হারে দ্বিতীয় শিফটের ভাতা ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত প্রদান করা হয়। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত জাতীয় স্কেল ২০০৯ অনুযায়ী ৫০ শতাংশ হারে উন্নীত করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুন পর্যন্ত জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ অনুযায়ী ৫০ শতাংশ হারে সম্মানী প্রদান করা হয়। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণাণলয় গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই থেকে জাতীয় স্কেল ২০০৯ অনুযায়ী ভাতা উত্তোলনের আদেশ দেয়। তা শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা মেনে নেননি এবং এক বছরের বেশি সময় দ্বিতীয় শিফটের কোনো সম্মানী গ্রহণ করেনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0065200328826904