ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। বৈধ অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর না করায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এক আদেশে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিদ মন্ডলের সাক্ষরে বেতন না দিতে রুপালী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপককে চিঠি দেন। ফলে গত মাস থেকে কলেজের ১০৭ জন শিক্ষক কর্মচারী বেতন তুলতে পারছেন না। বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে এ খবর নিশ্চিত করেন কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রানী সাহা।
এদিকে বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে সরকারি মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরা ফুঁসে উঠেছে। কয়েক দিন ধরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিদ মন্ডলের কক্ষে এই সব বিষয় নিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা প্রায়ই হৈ চৈ করছেন। ফলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মজিদ মণ্ডল এখন জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য শিক্ষক-কর্মচারীদের এড়িয়ে চলছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সহাকারী পরিচালক আব্দুল কাদের সাক্ষরিত (কলেজ-৩) চিঠি সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশনের রিট পিটিশন ১০৩২/১৬ রায় মোতাবেক কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমানের বরখাস্ত আদেশ প্রত্যাহার পূর্বক তাকে চাকরিতে পুনর্বহাল করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ করা হয়।
কিন্তু অধিদপ্তরের সেই আদেশ তিনি প্রতিপালন না করে টালবাহানা করেই চলেছেন। এ কারণে মজিদ মন্ডলের সাক্ষরে শিক্ষক-কর্মচারীদের আর কোন বেতন না দিতে রুপালী ব্যাংক কালীগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপককে কয়েক সপ্তাহ আগে চিঠি দেয়া হয়েছে। শাখা ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম চিঠি প্রাপ্তির কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, গত মাসে সরকারি মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের কোন বেতন সিট আসেনি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রানী সাহা জানান, বেতন বন্ধ হয়নি। অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির কাছে একটি আবেদন করেছেন। তার প্রেক্ষিতে ডিজি অফিস থেকে বলেছে মজিদ মন্ডলের স্বাক্ষরে যেন বেতন না দেয়া হয়। যে কারণে চেকে স্বাক্ষর করেও চেক পাস হচ্ছে না। এ জন্য আমরাও সাক্ষর করছি না। ডিজির চিঠির বাইরে ব্যাংক ম্যানেজারও কাজ করতে পারছে না। এখন সব কিছুই বন্ধ আছে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রানী সাহা জানান।
তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ১০৭ শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন সাময়িক বন্ধের পর সদ্য সরকারিকরণকৃত এই কলেজটি নানাবিধ ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। আর্থিক দুর্নীতিসহ জাল পত্রিকা তৈরি করে কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে ১৫ জনের চাকরি প্রদানের বিষয়টি নিয়ে খুব শিগগিরই তদন্তে নামছে দুদক। তদন্তে প্রমাণিত হলে আব্দুল মজিদ মন্ডলকেও বরখাস্ত করা হতে পারে এমন আভাস দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের একটি সূত্র। বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডলের কাছে ফোন করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ফোন কেটে দেন। পরে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি আর ফোন ধরেননি।