বেতন বৈষম্য নিরসনে প্রতিশ্রুতি নয়, দ্রুত বাস্তবায়ন চাই

মুন্নাফ হোসেন |

একটা জাতি উন্নতির চরম শিখরে পদার্পণ করতে পারে উপযুক্ত শিক্ষার মাধ্যমে। শিক্ষা শব্দটি হতে শিক্ষক শব্দের উৎপত্তি। শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায় তখনি যখন শিক্ষকের মর্যাদা দেওয়া হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিক্ষার বীজ বপণ করা হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই একজন শিক্ষার্থী ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবতে শিখে; স্বপ্ন দেখে ভালো মানুষ হওয়ার। একজন শিক্ষকই তাকে ভাবতে শেখায়, স্বপ্ন দেখায়। অথচ আমার সোনার বাংলার শিক্ষককে হতে হয়েছে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদটি যেন অভিশাপে পরিণত হয়েছে। ভাবতেই অবাক লাগে  যে, শিক্ষক হলো তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী। এটা সহকারী শিক্ষকদের জন্য অপমান। একজন এসএসসি পাস কৃষি ডিপ্লোমাধারী যেখানে ১০ম গ্রেডে বেতন পান সেখানে প্রাথমিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা পান ১৪তম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকরা পান ১৫তম গ্রেড।

দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষ বেতন বৈষম্য দূরীকরণের আশ্বাস দিয়ে আসছেন। কিন্তু বাস্তবে ফলাফল এখনও শূন্য। প্রতিমন্ত্রী, সচিবসহ কর্তাব্যক্তিরা শুধু প্রতিশ্রুতিই দিয়ে যাচ্ছেন, কিন্তু পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। একটার পর একটা পরিপত্র দিয়ে শিক্ষকদের ঘুম হারাম করে দেওয়া হছে অথচ বেতন বৈষম্যের অবসান হচ্ছে না। সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১তম গ্রেডে দিতে কোনো জটিলতা নেই। বর্তমানে সহকারী শিক্ষক হতে হলে তাকে স্নাতক পাস হতে হবে। তাহলে ১১তম গ্রেড দিতে জটিলতা কোথায়? আর প্রতিশ্রুতি চাই না, বেতন বৈষম্যের অবসান চাই।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার প্রথম হাতেখড়ি হয় প্রতিটা মানুষের। একটা শিশুকে হাতে-কলমে পড়ালেখা শেখানো অত্যন্ত কষ্টের। এ কাজটি অনেক দুরূহ। অতি আদরে পথ চলতে শেখানো হয় প্রতিটি শিশুকে। এখানেই তার নৈতিক ও বুদ্ধিদীপ্ত বিকাশ ঘটে। এমন কঠিন কাজটি করে থাকেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ। অথচ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকগণ বেতন পান ১৫তম গ্রেডে। 

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকগণ ১০ম গ্রেডে বেতন পান।  আমি মনে করি প্রধান শিক্ষকদের আরও উপরে নেওয়া যায়। এতে তাদের মর্যাদা আরও বাড়বে। অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে আনলে বৈষম্য দূর হবে। সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণে অনেকদিন ধরে আন্দোলন চলে আসছে। কিন্তু তাদের আন্দোলনে হালে পানি পায়নি। যৌক্তিক আন্দোলনে সরকারের উচ্চমহল সুদৃষ্টি দিলে বেতন বৈষম্য দূর করা কঠিন কাজ নয়। 

বর্তমানে এইচএসসি পাস নার্সদের ৯ম গ্রেডে বেতন দেয়া হয়। এজন্য অবশ্যই সরকার প্রশংসার দাবিদার। কিন্তু স্নাতক পাস সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৫তম। এটা কেমন বৈষম্য?

দেশ বর্তমানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ উন্নয়নের সাথে সাথে বেড়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য। একজন সহকারী শিক্ষক যে বেতন পান তা দিয়ে সন্তানের লেখাপড়া চালিয়ে সংসার চালানো খুব কষ্টের।  তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল  ৯টা হতে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত পাঠদান করানো হয়। তাই অন্য কোনো কাজ করে উপার্জন করা সম্ভব নয়। এ অবস্থায় বেতন বৃদ্ধি করা অতীব জরুরি।

অন্যদিকে, কৃষি ডিপ্লোমাধারীরা এইচএসসি পাস করে বেতন পান ১০ম গ্রেডে। এতে কোনো অভিযোগ নেই, নেই কোনো কষ্ট। কষ্ট একটাই, যারা অত্যন্ত পরিশ্রম করে ছোট ছোট শিশুদের মানুষ করছেন তাদের বেলায় বেতন বৈষম্য কেন?

বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে হয়তো এমন বৈষম্য হতো না। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে হলে বেতন বৈষম্য দূর করা ছাড়া উপায় নেই। শুধু উচ্চ মহলের একটু সুদৃষ্টি দরকার। ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনিমার্ণে সকল স্তরে বৈষম্য দূর করা জরুরি।

গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রীর নিকট আবেদন যত দ্রুত সম্ভব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের মান উন্নয়নে ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে বেতন-বৈষম্য দূর করে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে এগিয়ে আসুন।

লেখক: সহকারী শিক্ষক, মমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধনবাড়ী, টাঙ্গগাইল।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার - dainik shiksha মাকে ভরণপোষণ না দেয়ায় শিক্ষক গ্রেফতার ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025289058685303