বেতন-ভাতা বঞ্চিত প্রাথমিকের ১২৩ শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

একই চাকরিতে দ্বিমুখী নীতির শিকার হচ্ছেন খাগড়াছড়ির প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষকরা। দেশের অন্যান্য জেলায় একই কর্মসূচির অধীন নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা সরকারি বিধিমতো সব সুযোগ-সুবিধার আওতায় এলেও ব্যত্যয় ঘটেছে খাগড়াছড়িতে। গেল ৩ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না খাগড়াছড়ি জেলা সদরের ৫১ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক। জেলার তিন উপজেলার এমন অন্তত ১২৩ শিক্ষক বোনাস ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির সুযোগ থেকে বঞ্চিত।

অভিযোগ ওঠেছে, জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারী মনোভাবের কারণে শতাধিক পরিবারে দেখা দিয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। গত ঈদুল আজহায় মুসলিম শিক্ষকরা বোনাস বঞ্চিত হওয়ার পর এখন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষক পরিবার দুর্গাপূজায় বোনাস না পাওয়ার আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। উদ্ভট অজুহাত দেখিয়ে জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয় শিক্ষকদের বেতন-ভাতা আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষা কার্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ৫১ শিক্ষক-শিক্ষিকা গত জুলাই থেকে কোনো বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। এছাড়া অতিসম্প্রতি পানছড়ি উপজেলার ৪০ ও মহালছড়ি উপজেলার ৩২ শিক্ষক বেতন পেলেও তাঁদের ইনক্রিমেন্ট আটকে দিয়েছে জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়।

প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ ও ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৩) এর আওতায় এ সব শিক্ষক নিয়োগ পান। নিয়োগের পর থেকে তাঁরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পেয়ে আসলেও চলতি বছরের জুলাই মাসে হঠাৎ করেই জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের কর্মকর্তারা তাঁদের বেতন-ভাতা ও ইনক্রিমেন্ট আটকে দেন। এর মধ্যে মুসলমানদেরকে ঈদুল আজহার বোনাসও দেওয়া হয়নি। আসন্ন দুর্গাপূজায় সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বেতন ও বোনাস সুবিধা পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয়ে শিক্ষকরা। পারিবারিকভাবে অসচ্ছল শিক্ষকরা অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

জেলা প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ধনা চন্দ্র সেন ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশাপ্রিয় ত্রিপুরা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের বিতর্কিত ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলেন, এ নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। শিক্ষক নেতারা অবিলম্বে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, বোনাস ও ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার দাবি করেন।

জানা গেছে, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে ২৫ জুলাই মুসলিম শিক্ষকদের বোনাসসহ জুলাই ২০১৮ মাসের বেতন-ভাতার বিল জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে দাখিল করা হয়। কিন্তু হিসাবরক্ষণ কার্যালয় দাখিলকৃত বিল নির্ধারিত সময়ে পাস না করে ৮ আগস্টের টি-০০০৯৮৩ নং স্মারকে একটি আপত্তি জানায়। যেখানে ১ জুলাই হতে অনলাইনে বেতন নির্ধারণ করে বেতন বিল দিতে বলা হয়। সেই অনুযায়ী ৪ সেপ্টেম্বর জুলাই ও আগস্ট ২০১৮ মাসের বেতন বিল দাখিল করে শিক্ষা অফিস। অথচ হিসাবরক্ষণ অফিস বেতন-ভাতা ও বোনাস ছাড় না দিয়ে উল্টো ২৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষকদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি (ইনক্রিমেন্ট) ছাড়াই বেতন বিল দাখিলের কথা বলে শিক্ষা অফিসকে চিঠি পাঠায়।

এর আগে পিইডিপি-৩ এর আওতায় ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে সরকারের প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এক পত্রের মাধ্যমে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রতিটিতে ১ জন করে মোট ৩৭ হাজার ৬৭২ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। যেখানে অস্থায়ী রাজস্ব খাতে পদগুলো সৃষ্টি হলেও কর্মসূচির মেয়াদ শেষে রাজস্ব বাজেটের সংশ্লিষ্ট খাতের বরাদ্দ থেকে নির্বাহ করার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনাও জারি করা হয়।

জেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘চাকরি উন্নয়ন প্রকল্পে থাকাকালীন ইনক্রিমেন্ট দেওয়ার বিধান নেই। সরকারি বিধির বাইরে কিছু করতে পারি না। তবুও বিষয়টিতে সিদ্ধান্তের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্পের নয়; রাজস্ব খাতেই তাঁদের চাকরি হয়েছে। তাঁদের বেতন-ভাতা ও বার্ষিক বেতন বৃদ্ধির সুবিধা না পাওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তাঁরা যোগদানের তারিখ থেকে সব ধরনের আর্থিক সুবিধাদি পাবেন।’

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ২১ জানুয়ারি জারিকৃত পত্রের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা আছে, ‘সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায় পিইডিপি-৩ হতে বেতনভুক্ত হলেও বর্ণিত শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ সম্পূর্ণ রাজস্ব পদে পদায়নকৃত। এ ক্ষেত্রে অন্যন্য রাজস্বখাতভুক্ত শিক্ষক/শিক্ষিকাগণের ন্যায় সকল আর্থিক সুবিধা প্রাপ্য হবেন।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031890869140625