নভেল করোনা ভাইরাসের ভয়ে রোগীদের সেবা দেয়া থেকে বিরত থাকা বেসরকারি চিকিৎসকরা কাজ শুরু করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে তিনি এ দাবি করেন।
নভেল করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে অনেক চিকিৎসক চেম্বারে বসছেন না এবং অনেক জায়গায় টেকনিশিয়ানরা কর্মস্থলে না থাকায় রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষাও বন্ধ আছে বলে প্রায় রোগীদের কাছ থেকে অভিযোগ আসছে।
গত শুক্রবার অনলাইন ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, নভেল করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও প্রাইভেট চেম্বারগুলো থেকে রোগীরা সেবা না পেয়ে ফিরে গেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঠিক একদিন পরেই পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাবে বলে আশ্বস্ত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বললেন, “এরকম কিছু হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে কিছু হয়েছিল। আমার মনে হয়, আস্তে আস্তে এগুলো কেটে যাচ্ছে। আমাদের চিকিৎসকরা প্রাইভেট দেখতে শুরু করেছেন; হাসপাতালগুলোও রোগী নিচ্ছে।
“গতকালকে (শুক্রবার) বেশ কিছু চিকিৎসক ইয়াং চিকিৎসক …..মেডিকেল অফিসার, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক…….. এদের সাথে আমরা কথা বলেছি। তারা আমাদের কথা দিয়েছেন, এই পরিস্থিতি বদলে দেয়ার জন্য তারা হল সামনে এগিয়ে আসবেন। সবাইকে তারা মোটিভেট করবেন।”
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ভূমিকা নিয়ে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সমালোচনার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, “প্রাইভেট হাসপাতাল আমাদের কথা শুনছে না, এটা আমরা মনে করি না। প্রথমে অবশ্য অবশ্যই কিছু বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল।
“শুধু সারা বাংলাদেশ না, সারা পৃথিবীর গণমাধ্যমে, সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা ধরনের কথা প্রচারিত হচ্ছে। এগুলো সবগুলো যে খুব সত্য তাও কিন্তু নয়। কিন্তু এগুলোতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে।”
আবুল কালাম আজাদ জানান, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিয়ে যখন অভিযোগ আসছে, তখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব বাংলাদেশ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি মো.মনিরুজ্জামান ভুঁইয়াকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন। পরে প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করে রোগীর সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন মনিরুজ্জামান ভুঁইয়াও।
তারপরও বেসরকারি হাসপাতালগুলো ভূমিকা রাখতে সক্রিয় না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান।
তবে চিকিৎসকদের বিষয়টিও মানবিক দৃষ্টিতে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “চিকিৎসকদের কথা চিন্তা করেন, নার্সদের কথা চিন্তা করেন, অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের কথা চিন্তা করেন, তাদেরও কিন্তু পরিবার আছে।
“পরিবারের সদস্যরা এ সমস্ত শুনে তাদের বলে যে, তোমার চাকরির দরকার নাই। তুমি বাসায় থাকো, ওরাও তো মানুষ। ”
কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন বাংলায় অনুবাদ করে তা চিকিৎসক ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলে জানান মহাপরিচালক।
“চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যে ধরনের সামগ্রী প্রয়োজন তার পর্যাপ্ত মজুদ আমাদের কাছে আছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোর তালিকা সংগ্রহ করেছি। পিপিই যেখানে পাওয়া যাবে সে তালিকা তাদের দিয়ে দিয়েছি। সেখান থেকে পিপিই সংগ্রহ করে চিকিৎসক ও নার্সদের তারা (মালিক ও কর্তৃপক্ষ) সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।”
বাংলাদেশ বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল মালিক সমিতির মো.মনিরুজ্জামান ভুঁইয়া জানান, তাদের সমিতিতে ৭ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নিবন্ধিত রয়েছে।
তবে রোগী ফিরিয়ে দেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, “করোনার সংক্রমণের ভয়ে মানুষজন বাসা থেকেই বের হচ্ছে না । আমরা রোগীই পাচ্ছি না। তাহলে সেবাটা কাকে দেব?”
বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে পিপিই সংগ্রহ করে তা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বিতরণ করেছে বলেও দাবি করেন তিনি।