পরিবর্তনশীল পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় সকল কিছু, শুধু পরিবর্তন হয় না বেসরকারি শিক্ষকদের ভাগ্যের।
২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার পূর্বে শিক্ষকগণ উন্মুখ হয়েছিলেন হয়তো বা এবার তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের খবর শুনতে পাবেন। অনেক শিক্ষক বাজেট বক্তৃতার সময় একটার পর একটা শব্দ গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন, কোন মাহেন্দ্রক্ষণে অর্থমন্ত্রীর মুখ দিয়ে উচচারিত হবে শিক্ষকদের ন্যায্য পাওনা প্রদানের প্রতিশ্রুতি। কিন্তু না। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার সকল শব্দ শেষ হল। শিক্ষকদের আশার বাণী ধ্বনিত হলো না। শিক্ষকগণ পত্রিকার মাধ্যমে যে একগুচ্ছ সুসংবাদের আশা করছিলেন, তা ন্যাপথলিনের মত দ্রুত নিঃশেষিত হলো।
তবু আশা নিয়েই মানুষ বাঁচে। তাই পত্রিকার মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষকদের হৃদয়ে আরো একটি আশার বীজ অংকুরিত হয়েছিল। তাঁরা জানতে পেরেছিলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ দিয়ে শিক্ষকদের সেই কাঙ্ক্ষিত সুসংবাদ উচচারিত হবে। অনেক পদস্থ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে পত্রিকায় গুরুত্ব সহকারে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ধৈর্য ধারণ করলেন শিক্ষক সমাজ। এবার বুঝি পূর্ণাঙ্গ বোনাস পেয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন। বৈশাখী ভাতার বকেয়া পাবেন। ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট পাবেন। কিন্তু স্বপ্নপূরণে বাস্তবতার দেখা তারা পেলেন না। বাজেট অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য শেষ হলো কিন্তু বেসরকারি শিক্ষকগণ যে তিমিরে সেই তিমিরেই।
আমাদের স্বনামখ্যাত সৎ শিক্ষামন্ত্রী প্রথম মেয়াদে মন্ত্রিত্ব নেয়ার পর শিক্ষকদের অনেক আশার বাণী শুনিয়েছিলেন। বলেছিলেন শিক্ষকদের তিনি স্বতন্ত্র স্কেলে বেতন দেবেন। তারপর কত নদীর গতি বদলে গেল, কত মরা নদীতে জোয়ার এলো, কত শিক্ষক অবসরে গেলেন , কত শিক্ষক জীবন থেকে নিলেন, ছুটি কিন্তু সেই স্বতন্ত্র বেতন স্কেল মুখের কথাতেই থেকে গেল। মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রীর সে মহা পরিকল্পনা কোন অদৃশ্য অন্ধকারে মুখ লুকাল শিক্ষক সমাজ তা দেখতেই পেলেন না।
আর কিছুদিন পর আরেকটা ঈদ। জানি না তারা ১০০ ভাগ বোনাস পেয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন কি না। নাকি আবারো তাদের ২৫ শতাংশ বোনাস পেয়ে অন্তর্দাহ নিয়ে ম্লান মুখে ঈদগাহে যেতে হবে। এও জানি না কবে, কখন, কার মুখে বেসরকারি শিক্ষক সমাজের ভাগ্য পরিবর্তনের বার্তা উচচারিত হবে।
লেখক : প্রধান শিক্ষক, আমড়াতলা চাঁপড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোংলা, বাগেরহাট।