বেহাতের আশঙ্কায় আলতাফ মাহমুদ সংগীত স্কুলের সম্পত্তি

বরিশাল প্রতিনিধি |

'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি'- অমর একুশের এই অবিনাশী গানের সুরকার ভাষাসংগ্রামী, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের স্মৃতিচিহ্ন বরিশাল থেকে মুছে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ৪৭ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের নামে লিজ নেওয়া অর্পিত সম্পত্তি (ভিপি) বেহাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ১০ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি লিজ নিয়ে নগরীর হাসপাতাল সড়কে ওই সংগীত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হলেও বিদ্যালয়ের জমি নিজের দাবি করে বরিশাল যুগ্ম জেলা জজ ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আদালতে মামলা করেছেন জনৈক শৈল দে।

তবে জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জমিটি রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাবেন বলে সাংবাদিকদের বলেছেন। অন্যদিকে, বরিশালের সামাজিক-সাংস্কৃতিক নেতাসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও সংগীত বিদ্যালয় রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বরিশাল সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন বলেন, ১৯৭২ সালে বরিশাল নগরের বেশ কয়েকজন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ মাহমুদের নামে সংগীত বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরে ওই জমিটি সংগীত বিদ্যালয়ের নামে লিজ (বরাদ্দ) দেয় জেলা প্রশাসন। সেই থেকে হাসপাতাল সড়কের ওই পুরোনো একতলা ভবনে শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে।

সূত্র জানায়, ১৯৯৯ সালে নগরীর রূপাতলী এলাকার বাসিন্দা রফিক উদ্দিন আহম্মেদ রফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা ওই জমি তাদের দাবি করে জিয়াউদ্দিন হাসান কবিরকে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্ব দেন। কিন্তু ২০০৭ সালে ওই জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে সরকারি গেজেটভুক্ত হয়। ২০০৮ সালে রফিক উদ্দিন আহম্মেদ রফিজ ও তার পরিবারের সাত সদস্য ওই জমি শৈল দের কাছে ১৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। অন্যদিকে, ২০১২ সালের বিএস রেকর্ডেও সংগীত বিদ্যালয়ের ওই জমি জেলা প্রশাসনের এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। এদিকে, ক্রেতা শৈল দে  দখলে যেতে না পেরে ২০১২ সালে বরিশালের যুগ্ম জেলা জজ ও অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আদালতে জেলা প্রশাসককে বিবাদী করে মামলা করেন। ওই মামলার বাদী শৈল দে দাবি করেন, তিনি ওই জমি দলিলমূলে কিনেছেন।

উল্লেখ্য, এই শৈল দে হচ্ছেন অমৃত লাল দে অ্যান্ড কোম্পানির চেয়ারম্যান বিজয় কৃষ্ণ দের স্ত্রী।

তবে জেলা প্রশাসনের অর্পিত সম্পত্তি সেল থেকে আদালতে দেওয়া ভিপি আইন সহকারী নুরুল ইসলামের বর্ণনায় বলা হয়েছে, এ জমি শহীদ আলতাফ মাহমুদ সংগীত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি লিজ নিয়ে ১৯৭২ সাল থেকে সুনামের সঙ্গে পরিচালনা করে আসছে। এ জমিতে সরকার পক্ষে লিজ ছাড়া অন্য কারও স্বত্ব বা দখল নেই। এ জমি নগরের প্রাণকেন্দ্রে ও অধিক মূল্যবান হওয়ায় জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজ সৃষ্টি করে মামলা করা হয়েছে।

বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ বলেন, শহীদ আলতাফ মাহমুদ বাঙালির জাতীয় সত্তার প্রতীক। তার স্মৃতি রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। তাই শহীদ আলতাফ মাহমুদের নামে প্রতিষ্ঠিত সংগীত বিদ্যালয়টি যে স্থানে আছে, সেখানেই রাখতে প্রয়োজনে বরিশালের সংস্কৃতি কর্মীরা আন্দোলনে নামবেন।

সংগীত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি এসএম ইকবালও প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে নামার কথা বলেন।

জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, জমিটি নিজের দাবি করে শৈল দে আদালতে মামলা করেছেন। জেলা প্রশাসন থেকে আদালতে জবাব দাখিল করা হয়েছে। এ সম্পত্তি ও বিদ্যালয়টি রক্ষার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত - dainik shiksha ফল জালিয়াতি: পদে রেখেই সচিবের বিরুদ্ধে তদন্ত শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল - dainik shiksha শিক্ষক-কর্মচারী বদলি নীতিমালার কর্মশালা কাল দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha দুবাইয়ে বন্যায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে - dainik shiksha ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষক নিয়োগ, আবেদন করবেন যেভাবে ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল - dainik shiksha ফিলিস্তিনকে সমর্থনের ‘অভিযোগে’ সেরা ছাত্রীর বক্তৃতা বাতিল মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.003148078918457