বৈষম্যে বিপর্যস্ত প্রাথমিক শিক্ষা

মো: সিদ্দিকুর রহমান |

শিক্ষার ভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত নড়বড়ে বা দুর্বল হলে পুরো জাতির অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। এ বোধশক্তি অনেক শিক্ষিত বা সংশ্লিষ্টদের মাঝে দৃশ্যমান নয়। বৈষম্যের কারণেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম। প্রাথমিক শিক্ষায় এ বৈষম্য ব্যাপক। আর এ বৈষম্য স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্য ক্ষতিকর হবে।

এ বৈষম্যের ফলে তৃণমূলের সাধারণ মানুষের শিক্ষার অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এতে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার ভিত সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বৈষম্যগুলো উপস্থাপন করছি।

প্রাথমিকের শিক্ষকরা সরকারি কর্মচারী হলেও তাঁরা সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্য সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেকের ধারণা, অনেক ছুটি ভোগ করছেন প্রাথমিক শিক্ষকরা। বাস্তবে প্রাথমিক শিক্ষকরা অন্যান্য সরকারি কর্মচারীর চেয়েও কম ছুটি ভোগ করেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের বার্ষিক ছুটির তালিকায় বছরে ৭৫ দিন দেওয়া থাকে। সে ছুটির তালিকা থেকে প্রাথমিকের শিক্ষকরা জাতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলোসহ কমপক্ষে ১০দিন ছুটি ভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত হন। তাই প্রাথমিক শিক্ষকদের ছুটি থাকে ৬৫ দিন। প্রাথমিক শিক্ষকদের চেয়ে সরকারি কর্মচারীরা সপ্তাহে একদিন, শনিবার বেশি ছুটি ভোগ করেন। সে হিসেবে সরকারি কর্মচারীরা বছরে ৫২ দিন এবং সরকারি ছুটির তালিকাভুক্ত কমপক্ষে ২৪ দিন, সর্বমোট ৭৬ দিন ছুটি ভোগ করেন। প্রাথমিকের শিক্ষকরা সরকারি কর্মচারীদের চেয়ে বছরে ১০-১২দিন কম ছুটি ভোগ করেন। এছাড়া প্রাথমিকের শিক্ষকদের পাঠদান ও পাঠদানবহির্ভূত বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়।

সরকারি কর্মচারী ও প্রাথমিক শিক্ষকদের প্রাপ্ত সুবিধায় ব্যবধান রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষকরা অর্ধগড় বেতনে একটি অর্জিত ছুটি এবং এক বছর অর্ধবেতনে পিআরএল সুবিধা পেয়ে থাকেন। অপরদিকে সরকারি কর্মচারীরা দুইটি অর্জিত ছুটি পান, যার একটি অর্ধগড় বেতনে এবং একটি পূর্ণ বেতনে। সরকারি কর্মচারীরা একবছর পূর্ণ বেতনে পিআরএল সুবিধা পেয়ে থাকেন। 

অর্জিত ছুটি একটি হওয়ায় প্রাথমিকের শিক্ষকদের কেউ কেউ ল্যাম্পগ্যান্টের (চাকরি শেষ হওয়ার একালীন অনুদান) টাকা মোটেই পান না। সরকারি কর্মচারীরা ৩ বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেলেও প্রাথমিকের শিক্ষকরা তা পান ৪-৫ বছর পর পর। সরকারি কর্মচারীদের মত প্রাথমিকের শিক্ষকরা ৩ বছর পর পর ১৫ দিন ছুটিও পান না। সংশ্লিষ্টরা প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রীষ্ম বা যে কোন অবকাশে ১৫ দিন ছুটি নির্ধারণ করলে, ৩ বছর পর পর বিধি মোতাবেক সরকারি কর্মচারীদের মত পেত। অন্য কোন অবকাশে ১৫ দিন ছুটি না থাকায় বাধ্য হয়ে রোজার মাসে ছুটি দেখিয়ে শ্রান্তি বিনোদন ভাতা পেতে হয়। আরবি বছর ৩৫৫ দিন হওয়ায় প্রাথমিক শিক্ষকদের ভাগ্যে ৪-৫ বছর পর পর শ্রান্তি বিনোদন ভাতা জুটে থাকে।  

এ বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা উপলক্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ৫ দিন বন্ধ রাখা হয়েছে। দুই ঈদের আগের দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা। অথচ ঈদ উপলক্ষে উচ্চ বিদ্যালয় ১৫ দিন এবং পিটিআই ২০দিন বন্ধ। মুসলমানদের সবচেয়ে বড় উৎসবে এ রকম নির্মম বৈষম্য প্রাথমিক শিক্ষকদের অনুভূতিতে চরমভাবে আঘাত এনেছে। বৈষম্য সৃষ্টির মাধ্যমে প্রাথমিকের শিক্ষকদের অনুভূতিতে আঘাত হানার কাজ যে বা যারা করে থাকেন, তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।  

প্রাথমিকের সময়সূচির সাথে উচ্চ বিদ্যালয়ের সময়সূচির বিশাল পার্থক্য। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ শিশুবান্ধব সময়সূচি না থাকা। স্বাধীন দেশে প্রাথমিক শিক্ষায় সব ধরণের বৈষম্য প্রাথমিক শিক্ষায় সফলতা অর্জনে চ্যালেঞ্জ।

এ বছর দপ্তরি কাম প্রহরীদের বেতনের প্রজ্ঞাপন ঈদের ছুটির পূর্বক্ষণে জারি হওয়ায় ৩৭ হাজার কর্মচারী জুলাই, আগস্ট মাসের বেতন ও ঈদ বোনাস থেকে বঞ্চিত। এ বঞ্চনার জন্য দায়ীরা কেন জবাবদিহিতার আওতায় আসছেন না? বিষয়টিতে শিক্ষা বান্ধব সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি, ‘আর সময়ক্ষেপণ না করে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের বিশাল বেতন বৈষমসহ সকল বৈষম্য দূর করুন।’

বৈষম্য সৃষ্টিকারীরা সরকারের পক্ষে চাটুবাক্য বলে বলে বৈষম্য সৃষ্টি করে চলেছেন। এতে প্রাথমিকের শিক্ষার্থী শিক্ষকসহ শিক্ষা পরিবারের ক্ষোভ বৃদ্ধি পেয়ে চরমে পৌঁছেছে। বৈষম্য সৃষ্টিকারীদের নির্মূলের দাবি প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারের। স্লোগান, চাপাবাজি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের পরিপন্থি কাজ পরিহার করে সকল বৈষম্য দূর করুন। প্রাথমিক শিক্ষাকে অসহায়ত্বের থেকে রক্ষা করুন। 


লেখক : আহ্বায়ক, প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম, সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা
      


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029051303863525